Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ইয়র্কারে মুগ্ধ, ওয়ান ডে-র সেরা এখন বুমরাই’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৯, ১:১৫ পিএম

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যশপ্রীত বুমরার প্রথম স্পেলটা দেখার পরে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ও-ই এখন দুনিয়ার এক নম্বর বোলার। পেস, বাউন্স, সুইং, বৈচিত্র, বুদ্ধি— একটা ভাল ফাস্ট বোলার হতে গেলে যা যা লাগে, সব ওর আছে। যে ভাবে বাঁ হাতি কুইন্টন ডি’কক ব্যাট করার সময় বল বাইরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তা দেখে আমি মুগ্ধ। সেই সঙ্গে দুর্ধর্ষ স্লিপ ফিল্ডিং। রোহিত দারুণ একটা ক্যাচ নিল, বিরাট অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিল।

ফাস্ট বোলারের কাছে সব চেয়ে দুঃস্বপ্নের ছবি হচ্ছে, অতটা দৌড়ে এসে বল করলাম, ক্যাচ উঠল আর সেটা কেউ ফেলে দিল। তখন বোলিং মার্কে ফিরে যাওয়ার রাস্তাটাকে মরুভূমির মতো দেখায়। বুমরাদের ক্ষেত্রে এই ধাক্কাটা লাগার সম্ভাবনা কম কারণ ভারতীয় ফিল্ডিং এখন সেরাদের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।

বুমরার নতুন বলে এক্সপ্রেস গতিতে ইয়র্কার করার দক্ষতা দেখে আমি বিশেষ ভাবে মুগ্ধ। সাধারণত, ইয়র্কার ভাল হয় বল পুরনো হলে। বুমরা সেই ধারণা পাল্টে দিচ্ছে। ভাল ইয়র্কার করতে গেলে সাহস আর আত্মবিশ্বাস লাগে। আর সেটা আসে প্র্যাক্টিস থেকে। বলে না ‘প্র্যাক্টিস মেকস আ ম্যান পারফেক্ট’। দেশের হয়ে তো বটেই, কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সময়েও নেটে আমি এক ঘণ্টা আলাদা করে বোলিং প্র্যাক্টিস করতাম। আধ ঘণ্টা নতুন বলে, আধ ঘণ্টা পুরনো বলে। এর মধ্যে পনেরো মিনিট শুধু ইয়র্কার প্র্যাক্টিস করতাম। বুমরাকে দেখে মনে হচ্ছে, ইয়র্কারের পিছনে অনেক সময় দিয়েছে। আইপিএলে বার বার এই বলটা করে এখন মাস্টার হয়ে গিয়েছে।

একটা সময় ছিল যখন সকলে বলত, পাকিস্তানে ভাল ফাস্ট বোলার তৈরি হয়, ভারতে হয় না। কিন্তু এখন? ভারতের ফাস্ট বোলাররা বিশ্ব জুড়ে শাসন করছে। আমার মনে হয়, ভারতের তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে পেস বোলিংও এখন কেরিয়ার হিসেবে উঠে এসেছে। ভারতীয় ক্রিকেট এখন বোলিং তারকা পেতে শুরু করেছে। কপিল দেবের পরে জ়াহির খান, শ্রীনাথরা এসেছিল। এখন বুমরা আর শামি রয়েছে। ওদের দেখে অনেকে ফাস্ট বোলিং শেখার জন্য ছুটবে।

গত দশ বছরে ভারতীয় ক্রিকেটের দুর্দান্ত অগ্রগতির আর একটা বড় কারণ আইপিএল। যখন খেলায় অর্থ রোজগারের দরজা খুলে যায়, যখন সিস্টেম তৈরি হয়ে যায়, তখন তার প্রভাব দেশের কোণে-কোণে ছড়িয়ে পড়ে। এখন প্রত্যেক আইপিএল টিমের নিজস্ব অ্যাকাডেমি রয়েছে, তাদের স্কাউটরা সারা দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোট ছোট জায়গাগুলো থেকেও নতুন প্রতিভা তুলে আনছে তারা। আইপিএলের জন্য তৈরি হওয়া এখন তাই কোনও প্রতিভা চট করে হারিয়ে যায় না। সে যদি সত্যিই ভাল প্রতিভা হয়, তার মঞ্চে ওঠার সুযোগ হবেই। এই মঞ্চটাই আইপিএল।

বিশ্বকাপে ভারতকে আরও শক্তিশালী দেখাতে পারে দু’জন দুর্দান্ত স্পিনার থাকায়। চার উইকেট তুলে চহাল আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। ওর সঙ্গী চায়নাম্যান কুলদীপকেও কেউ খুব একটা কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। মনে হচ্ছে কুল-চা রহস্য অনেক দলকেই ভোগাবে। যে কোনও দলের সাফল্যের মূলে স্পিনারদের একটা বড় ভূমিকা থাকে। আমরা যখন পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস আক্রমণ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছি, তখনও সেই বোলিং আক্রমণে কখনও আব্দুল কাদির, কখনও মুস্তাক আহমেদ বা সাকলিন মুস্তাকেরা ছিল। ওদের সহায়তা ছাড়া আমার বা ওয়াকারের (ইউনিস) পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব ছিল না।

আমার মনে হচ্ছে, ভারতের এই বোলিং বিভাগের মতো সম্পূর্ণ বোলিং আক্রমণ আমি আর কখনও দেখিনি। যেমন বুমরা, শামি, ভুবনেশ্বরের মতো পেসার আছে, তেমনই বিরল প্রতিভাবান দুই স্পিনার আছে। আমার মনে হয়, বিশ্বকাপ তারাই জিতবে, যাদের বোলিং বেশি শক্তিশালী। ভারতের বোলিং আক্রমণ দশ দলের মধ্যে অন্যতম সেরা।

ভারতীয় বোলিংয়ে এই জোয়ার আসার জন্য অধিনায়ক কোহালি আর কোচ রবি শাস্ত্রীকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। ফিটনেস নিয়ে আপসহীন নীতি তৈরি করে দিয়েছে ওরা টিমে। আর তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে গোটা ভারতীয় দলে। সেরা উদাহরণ মহম্মদ শামি। গত দেড় বছরে ওর বোলিংয়ে অনেক বেশি উন্নতি দেখা গিয়েছে। সম্ভবত ব্যক্তিগত জীবনের অশান্তি কাটিয়ে ক্রিকেটে পুরোপুরি মন দিতে পারছে। এর সঙ্গে ফিটনেসের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেনতও হয়েছে। বুঝতে শিখেছে সাফল্যের কোনও শর্টকার্ট হয় না।

কলকাতা নাইট রাইডার্সে থাকার সময় আমি শামিকে সঙ্গে নিয়ে জিমে যেতাম। জিম করতে করতে আমরা বোলিংয়ের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করতাম। মাঝেমধ্যে কলকাতার দুর্দান্ত সব রেস্তরাঁগুলোতে চলত আমাদের আড্ডা। সেই সময় শামি খুব একটা খেলার সুযোগ পেত না ঠিকই কিন্তু ও যে সব চেয়ে প্রতিভাবান ভারতীয় পেসারদের এক জন, তা নিয়ে কখনও আমার মনে কোনও সন্দেহ ছিল না। কেকেআরের বোলিং পরামর্শদাতা থাকার সময় আমি দু’জন বোলারের কাছ থেকে সব চেয়ে বেশি প্রশ্ন পেতাম। শামি আর কুলদীপ। ওদের শেখার আগ্রহটা আমাকে খুব উৎসাহিত করত। তাই যখনই পেরেছি, মন খুলে ওদের সঙ্গে বোলিং নিয়ে আড্ডা দিয়েছি। এই দু’জনকে ভাল করতে দেখলে অন্য রকম একটা সুখানুভূতি হয় আমার।

প্রথম ম্যাচে বাজে ভাবে হারার পরে পাকিস্তানও দারুণ জিতল ইংল্যান্ডের সঙ্গে। খেলায় হার-জিত থাকতেই পারে। তবে প্রত্যেক দেশের মানুষ তাদের দলের কাছ থেকে লড়াই দেখতে চায়। পাকিস্তান দ্বিতীয় ম্যাচে সেটা দেখাতে পেরেছে। ও দিকে রবিবার ভারত নামছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ম্যাচ দেখা যেতে পারে ওভালে। দু’দলের বোলিং শক্তির মধ্যে দ্বৈরথ নিয়ে আমি সব চেয়ে উত্তেজিত। বিশ্বের সেরা পেসারদের দেখা যাবে এই ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, নেথান কুল্টার-নাইল। ভারতের বুমরা, ভুবি, শামি। দু’টো দলেই অসাধারণ সব তারকা। ভারতের কোহালি, রোহিত, ধোনি। অস্ট্রেলিয়ার স্মিথ, ওয়ার্নার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ