নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আবহ তৈরী ছিলো আগের দিনই। সেই জয়ের সাক্ষি হতে এদিন মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে গত চার দিনের চাইতে দর্শকের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো। একদিকে সিলেট থেকে বয়ে আনা বিশাল হার গলার কাঁটার মতো বিধে অস্বস্তি দিচ্ছিল। সিরিজ জেতা হচ্ছে না, সকাল থেকেই শঙ্কা জেগেছিলো এই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ঘরের মাঠে কি সিরিজ বাঁচানোও যাবে না? ধীরে ধীরে কেটেছে সেই আধার। কাঁটা সরাতে কেবল কোন একটা জয় হলেই চলত না, দরকার ছিল হতশ্রী ব্যাটিং দশার একটা বদল। দরকার ছিল গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো একটা জয়। যাতে এক ঝাপটায় ঘুরে দাঁড়ানোর তেজ পাওয়া যায়। মিরপুরে সবটাই এলো। এখন বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট বলতেই পারে, সিলেটের ওই হার ছিল কেবলই একটা ‘দুর্ঘটনা’।
জেতার কাজটা আগের দিনই এগিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। গতকাল শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দেখার ছিল কতটা প্রতিরোধ গড়তে পারে জিম্বাবুয়ে। শেষ দিনের টিকে থাকার এই ভীষণ কঠিন কাজ করে দেখাতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন তাদের দৌড় থামিয়েছে দেড় সেশনেই। ব্র্যান্ডন টেইলর এক প্রান্তে সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থেকে দেখেছেন সতীর্থদের আসা যাওয়া। সিরিজে গড়পড়তা বোলিং করা মিরাজই এবার ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ছেঁটে দেন জিম্বাবুয়েকে। টেস্টে টাইগারদের এটি ১১তম আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ষষ্ঠ জয়। সবমিলিয়ে ১১০ টেস্টের ১৬টি ড্র’র বীপরিতে ৮৩ ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ।
৪৪৩ রানের লক্ষ্যটা খাতায় কলমে। আসলে তিন সেশন পার করে দেওয়ার লক্ষ্যেই ব্যাট করা জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে ২২৪ রানে। পঞ্চম দিনে তারা পার করতে পেরেছে দেড় সেশন। ২১৮ রানের জয়ে তাই সিরিজও সমতায় শেষ করল মাহমুদউল্লাহর দল।
আগের দিনের ২ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। চোটে পড়া টেন্ডাই চাতারা ছিটকে পড়ায় বাংলাদেশ দরকার ছিল ৭ উইকেট। শেষ দিনেও উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন ধাঁধা নিয়ে আবির্ভূত হয়নি। কোন একটা জুটি জমে গেলেই তাই চিন্তা বাড়ত বাংলাদেশের।
মাপা লাইনলেন্থ আর আক্রমনাত্মক মেজাজে বল করলে উইকেট থেকে পাওয়া যাচ্ছিল কিছু না কিছু। বোলাররা সেই কাজটা করেই পেয়েছেন সাফল্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী স্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ। শেন উইলিয়ামসের অফ স্টাম্পের বেল উড়িয়ে সকালে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন অবশ্য মুস্তাফিজুর রহমান। টেস্টে এই প্রথম ও শেষ উইকেটের দেখা পেলেন কাটার মাস্টার। সিলেট টেস্ট না খেলা এই পেসার দুই ইনিংসে বল ঘুরিয়েছেন ৩১ ওভার ১০ মেডেনের বীপরিতে দিয়েছেন ৭৭ রান! খানিক পর সিকান্দার রাজাকে রির্টান ক্যাচ বানান তাইজুল ইসলাম। এরপর বাকি সব কাজ একাই সেরেছেন মিরাজ। মাঝে রেগিস চাকাভা হয়েছেন রানআউট। ১৮৬ রানে ৫ উইকেট থেকে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় ২২৪ রানে। ৩৮ রানের মধ্যেই তাই জিম্বাবুয়ে হারায় ৫ উইকেট। টেইলরকে কেবল আউট করতে পারেননি কেউ। দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত থেকে যান ১০৬ রানে।
টেস্ট জেতার কাজটা অবশ্য প্রথম ইনিংসেই করে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে অবদান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও। তাইজুলের প্রথম ইনিংসের বোলিং জিম্বাবুয়েকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় তৃতীয় দিনেই। বাকি দুই দিনে আসলে টেস্ট ম্যাচের চিরায়ত ছবির বাইরে আহামরি কিছু হয়নি। সফরকারীদের ফলোঅন না করিয়ে বড় লক্ষ্য দিয়ে নিরাপদ থাকতে চেয়েছে বাংলাদেশ। তাতে ম্যাচের আয়ুই কেবল বেড়েছে। বিশাল বোঝা মাথায় নিয়ে চার সেশন ব্যাট করে খুব বেশি ম্যাচ বাঁচানোর ঘটনা ঘটে না। জিম্বাবুয়ের বেলাতেও সেটা হলো না।
আপাতত বিশাল জয় নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে মন দিতে পারছে বাংলাদেশ। সিলেটের অস্বস্তি তাড়িয়ে ঘরের মাঠে চেনা আত্মবিশ্বাস নিয়েই তৈরি হতে পারছে তুলনামূলক কঠিন প্রতিপক্ষের জন্য।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, ২য় টেস্ট
শেরে বাংলা স্টেডিয়াম, মিরপুর
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ : ৫২২/৭ ডিক্লে. ও ২২৪/৬ ডিক্লে.
জিম্বাবুয়ে : ৩০৪ ও চতুর্থ দিন শেষে ৭৬/২
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
টেলর অপরাজিত ১০৬ ১৬৭ ১০ ০
উইলিয়ামস ব মুস্তাফিজ ১৩ ৩৩ ১ ০
রাজা ক ও ব তাইজুল ১২ ৩৩ ১ ০
মুর ক কায়েস ব মিরাজ ১৩ ৭৯ ১ ০
চাকাভা রান আউট (মুমিনুল/মুশফিক) ২ ৮ ০ ০
তিরিপানো ক লিটন ব মিরাজ ০ ৯ ০ ০
মাভুতা ক তাইজুল ব মিরাজ ০ ১১ ০ ০
জার্ভিস ক খালেদ ব মিরাজ ১ ৯ ০ ০
চাতারা আহত অনুপস্থিত - - - -
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ৩, ও৫) ৯
মোট (৮৩.১ ওভার, অল আউট) ২২৪
উইকেট পতন : ১-৬৮ (মাসাকাদজা), ২-৭০ (চারি), ৩-৯৯ (উইলিয়ামস), ৪-১২০ (রাজা), ৫-১৮৬ (মুর), ৬-১৯৯ (চাকাভা), ৭-২০১ (তিরিপানো), ৮-২১২ (মাভুতা), ৯-২২৪ (জার্ভিস)।
বোলিং : মুস্তাফিজ ১০-২-১৯-১, তাইজুল ৩৭-৫-৯৩-২,খালেদ ১২-৪-৪৫-০, মিরাজ ১৮.১-৫-৩৮-৫, আরিফুল ৩-১-৭-০, মুমিনুল ২-০-১৭-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১-০।
ফল : বাংলাদেশ ২১৮ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহিম
সিরিজ : দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতা
সিরিজ সেরা : তাইজুল ইসলাম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।