Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৮ বছর আর ৩৫ টেস্ট পর সেঞ্চুরি

ফুরাল মাহমুদউল্লাহর অপেক্ষার প্রহর

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ক্যারিয়ারের তখন শুরুর দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে হ্যামিল্টনে মাত্র পঞ্চম টেস্টেই পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। সেটি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা। সময়ের হিসেবে আট বছর আট মাস। বহতা নীদর স্রোতের মত কেটে গেছে সময়, ক্রিকেট বিশ্বে ঘটেছে অনেক পরিবর্তন। নিজেও ওয়ানডেতে করেছেন একাধিক সেঞ্চুরি, জিতিয়েছেন ম্যাচ। অপরপিক্কতার খোলস কেটে হয়ে উঠেছেন দলের সবচেয়ে সিনিয়রদের একজন। তবু আরেকটি টেস্টে সেঞ্চুরি আসছিল না তার ব্যাট থেকে।

সেঞ্চুরি দূরে থাক। গত ১০ ইনিংস থেকে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে নেই কোন ফিফটিও। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব করতে হচ্ছে, অথচ ব্যাটে রান নেই। মাহমুদউল্লাহর নিজের জায়গা নিয়েই প্রশ্ন বড় হচ্ছিল। একটা কোন জবাব তাই দিতেই হতো তাকে। অবশেষে টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এলো।

দুই সেঞ্চুরির মধ্যে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দীর্ঘতম অপেক্ষার রেকর্ড এটিই। রেকর্ডটি এর আগে ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। ২০০১ সালে সেপ্টেম্বরে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির পর আশরাফুল দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে। মাঝে খেলেছিলেন ২২ টেস্ট। এখনকার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবশেষ সেঞ্চুরির পর ১৬ টেস্ট খেলে ফেলেছেন ইমরুল কায়েস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগের কোন সেঞ্চুরিই দেশে করেননি, ঘরের মাঠেও তাই প্রথম তিন অঙ্ক স্পর্শ করলেন তিনি।

টেস্ট ক্রিকেটের বাংলাদেশ ও মাহমুদউল্লাহকে এক সুতোয় গাঁথা যায় খুব সহজেই। পথচলা অনেক দিনের, সম্ভাবনা অনেক, কিন্তু সেই সম্ভাবনার পূর্ণ প্রতিফলন পড়েনি পারফরম্যান্সে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলার ১৮ বছর পূর্ণ হলো গত শনিবার। গত কয়েক বছরে উন্নতির ছাপ রাখতে পারলেও দেড় যুগে যেখানে যাওয়ার কথা, সেই উচ্চতা স্পর্শ করতে পারেনি টেস্টের বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহও তেমনি ৯ বছরের ক্যারিয়ারে খুঁজে পাননি টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে নিজের জমিন।

মিরপুর টেস্টে মাহমুদউল্লাহ ভালো না করলে, তার টেস্ট ক্যারিয়ারে এগোবে কিনা, সেই নিয়েই ছিল সংশয়। ব্যাট হাতে তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এতটাই মলিন যে, মিরপুরে উজ্জ্বল হতে না পারলে জায়গা ধরে রাখার পক্ষে থাকবে না খুব একটা যুক্তি। এই টেস্টের আগে যে আট টেস্ট ইনিংসে ২০০ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ, এই সময়টায় এক ইনিংসেও ২০ ছুঁতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ৮ ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ৫৮ রান, তিন ইনিংসেই ফিরেছেন শূন্য রানে!

গতকালও মাহমুদউল্লাহ যখন নামেন, দলের পরিস্থিতি ছিল বড়ই নাজুক। জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন না করিয়ে ২১৮ রানের লিড নিয়ে সকালে আবার ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু কাইল জার্ভিস আর ডোলান্ড ত্রিরিপানো তছনছ করে দেন টপ অর্ডার। মাত্র ২৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপাকাঁপি অবস্থা। দরকার ছিল প্রতিরোধের। অন্তত ভদ্রস্থ একটা লিড এনে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরা। মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ১১৮ রানের জুটিতে সব শঙ্কা ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেন তিনি। দলের প্রয়োজন ছিল দ্রুত রান বাড়ানো। শুরুর চাপ সামলে দুজনেই খেলেছেন সেরকমই। ৬৭ রান করে মিঠুন ফিরলে অধিনায়কই নেন সব দায়িত্ব।

প্রথম ফিফটিতে পৌঁছেছিলেন ৭০ বলে। পরের পঞ্চাশে যেতে লেগেছে আর ৫২ বল। খুব বেশি চার-ছয় মেরেছেন এমনটা নয়। চার বাউন্ডারি আর দুই ছক্কার ইনিংসে বেশিরভাগ রান ছিল দৌড়ে। উইকেটে সারাক্ষণই ব্যস্ত ছিল, ফাঁকা খুঁজে বের করেছেন রান।

অধিনায়কের রানে ফেরার দিনে মিরপুর টেস্ট পুরোপুরি কব্জায় নিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে ৪৪৩ রানের লক্ষ্য দিয়ে চার সেশন ব্যাট করার চ্যালেঞ্জ দিয়েছে বাংলাদেশ। উইকেট এখনো ব্যাট করার জন্য ভালো হলেও পঞ্চম দিনে নিশ্চিতভাবেই আরও ভেঙ্গে যাবে। স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কথা। ম্যাচ জিতে সিরিজ সমতায় শেষ করার সম্ভাবনা এখন প্রবল।

টেস্টের বাইরে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার খারাপ নয়। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে ভালো করা অন্যদের চেয়ে স্কিল খুব খারাপ নয়। পরিশ্রমে ঘাটতি রাখেন না। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আবেগ, গুরুত্ব ও বোধে কমতি নেই। এরপরও কেন ধারাবাহিক হতে পারছেন না?


স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, ২য় টেস্ট ৩য় দিন
টস : বাংলাদেশ, শেরে বাংলা স্টেডিয়াম
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫২২/৭ ডিক্লে.
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ৩০৪
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
লিটন বোল্ড জারভিস ৬ ১৪ ০ ০
ইমরুল ক মাভুতা ব জারভিস ৩ ১২ ০ ০
মুমিনুল ক চাকাভা ব তিরিপানো ১ ৫ ০ ০
মিথুন ক চাকাভা ব রাজা ৬৭ ১১০ ৪ ১
মুশফিক ক মাভুতা ব তিরিপানো ৭ ১৯ ১ ০
মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ১০১ ১২২ ৪ ২
আরিফুল ব উইলিয়ামস ৫ ৮ ০ ০
মিরাজ অপরাজিত ২৭ ৩৪ ২ ০
অতিরিক্ত (বা ৫, লেবা ১, ও ১) ৭
মোট (৫৪ ওভার, ৬ উইকেট) ২২৪ ডিক্লে.
উইকট পতন : ১-৯ (ইমরুল), ২-১০ (লিটন), ৩-১০ (মুমিনুল), ৪-২৫ (মুশফিক), ৫-১৪৫ (মিথুন), ৬-১৫১ (আরিফুল)।
বোলিং : জারভিস ১১-২-২৭-২, তিরিপানো ১১-১-৩১-২, রাজা ৭-০-৩৯-১, উইলিয়ামস ১৬-২-৬৯-১, মাভুতা ৯-০-৫২-০।
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
মাসাকাদজা ক মুমিনুল ব মিরাজ ২৫ ৬৮ ১ ০
চারি এলবিডবিøউ ব তাইজুল ৪৩ ৮২ ৩ ১
টেলর ব্যাটিং ৪ ২১ ০ ০
উইলিয়ামস ব্যাটিং ২ ৯ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ১) ২
মোট (৩০ ওভার, ২ উইকেট) ৭৬
উইকেট পতন : ১-৬৮ (মাসাকাদজা), ২-৭০ (চারি)।
বোলিং : মুস্তাফিজ ৩-১-২-০, তাইজুল ১৩-২-৩৪-১,খালেদ ৪-১-১৫-০, মিরাজ ৭-২-১৬-১, আরিফুল ৩-১-৭-০।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ