নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রম উন্নতির কথা এখন সর্বজন প্রসিদ্ধ। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে তো আর কম সাফল্য বয়ে আনেননি মাশরাফি-মুশফিকরা। কিন্তু এর মাঝেও একটা আক্ষেপ কিন্তু রয়েই গেছে। ক্রিকেটে যে বাংলাদেশের নামের পাশে কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা নেই।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ট্রফি তো বাংলাদেশ অনেকই জিতেছে। শিরোপা বলতে তাই এখানে দুইয়ের অধীক দেশ নিয়ে আয়োজিত কোন টুর্নামেন্টের শিরোপার কথা বলা হচ্ছে। তৃতীয়বারের মত এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠায় আবারো সম্ভবনা তৈরী হয়েছে শিরোপা বন্ধ্যাত্ব ঘোঁচানোর। এজন্য দুবাইয়ে আজ হারাতে হবে শক্তিশালী ভারতকে।
এজন্য মাশরাফি বাহিনীর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। ফাইনাল জয়ের প্রত্যয়কে আরো দৃড় করতে একটু পিছনে তাকালেই চলবে। ছয় মাস আগে এই ভারতের কাছে হেরেই শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় নিদাহাস ট্রফি হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। শেষ ওভারের শেষ বলে গিয়ে ম্যাচ হারার সেই স্মৃতি আবার মনে করিয়ে দেয় বেঙ্গালুরকে। অবশ্য বেঙ্গালুরুর সেই পরাজয় কোন ফাইনাল ম্যাচে ছিল না। টি-২০ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে মাত্র ১ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বেঙ্গালুরুর মতই গত মার্চের নাটকীয় হারে কেঁদেছিল পুরো বাংলাদেশ। আর দুই বছর আগে মিরপুরে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপের ফাইনালে হারটা একপেশে হলেও সেটাও কম বেদনার জন্ম দেয়নি টাইগার ভক্তদের হৃদয়ে। তবে আগের এই তিন হারের সঙ্গে এবারের একটা পার্থক্য আছে। এবার বাংলাদেশ দল নামছে নিজদের ফেভারিট ৫০ ওভারের ফর্ম্যাটে।
শুধু ফাইনাল বলে নয়, বাংলাদেশের ম্যাচের প্রসঙ্গ আসলে অবধারিতভাবেই সাকিব-তামিমের প্রসঙ্গটি এসেইে যায়। চোটের কারণে দলের দুই সেরা তারকাকে এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাওয়া যাবে না। তবে তাদের অনুপস্তিতি পূরণের জন্য তরুণরাও যে দৃড়প্রতিজ্ঞ তার প্রমাণ মিলেছে পরশু পাকিস্তান ম্যাচেই। জয়ের ভীত গড়ে দেয়া মুশফিকের সঙ্গে মিথুনের সেই ১৪৪ রানের জুটি, ১০ ওভার বল করে মাত্র ২৮ রান দিয়ে মিরাজের ২ উইকেট প্রাপ্তি, ব্যাটে ভালো করতে না পারলেও বল হাতে সৌম্যের ৫ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি উইকেট তুলে নেয়া- এগুলো কিন্তু পরিবর্তনের আভাসই দেয়। যেন তারা বলতে চাইছে ভারতে ‘ধরে দিতে’ আমরা প্রস্তুত। আর মুস্তাফিজের কথা তো আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। সেই ক্যারিবীয় সফর থেকেই ছন্দে আছেন কাটার মাস্টার। পাকিস্তানের শুরুতে দুই উইকেট তুলে নিয়ে যে ধাক্কাটা তিনি দিয়েছিলেন সেটা যদি আজও ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে করতে পারেন তাহলে ফাইনালের গল্পটা এবার বাংলাদেশের পক্ষে লেখা খুবই সম্ভব।
অবশ্য এজন্য আরো একটা জায়গায় বাংলাদেশকে মেলে ধরতে হবে। সেটা পাকিস্তান ম্যাচ শেষেই মনে করিয়ে দেন সেদিনের নায়ক মুশফিক, ‘আমরা এখনো সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারিনি, তিন বিভাগের কথা যদি বলি। আমাদের টপ অর্ডার এখনো ভালো করেনি। ভারতের বিপক্ষে যদি আমাদের টপ অর্ডার ভালো করে, তাহলে ভালো হবে।’
পুরো বাংলাদেশ দলের কথা বললে ঘুরেফিরে আসবে চোটের বিষয়টি। তামিম-সাকিবের কথা আগেই বলা হয়েছে। পাজরে চোট নিয়ে খেলা মুশফিকের কথাও জানেন সবাই। প্রচন্ড গরমে পায়ের পেশিতে টান সামলে বল করতে হচ্ছে মুস্তাফিজকে। এর মাঝে এসেছে মাশরাফির চোটের বিষয়টি। পরশু মিড উইকেট থেকে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে শোয়েব মালিকের সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচটি নেয়ার সম ডান হাতের কনিষ্ঠা নড়ে গিয়েছিল মাশরাফির। নিজেই টান দিয়ে হাড় জায়গায় নিয়ে আসেন। সেখানে কিছুটা কেটেও গেছে। ডাক্তার বলেছে স্ক্যান করে দেখতে, সেখানে চিড় ধরা পড়তে পারে। কিন্তু দলের এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমসব চোট গায়ে মাখছেন না মাশরাফি। বিশেষ করে চোটের সঙ্গে যার নিত্য বাস তাকে এমন ছোটঘাট চোট দমিয়ে রাখার সাধ্যি কোথায়।
এবারের এশিয়া কাপে প্রতিটা ম্যাচেই দারুণ খেলেছে ভারত। তাছাড়া আসরের সর্বোচ্চ ৫বারের চ্যাম্পিয়ন তারা। রোহিত শর্মার দলের কাছেই সুপার ফোরে ৭ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। আর চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী পাকিস্তানকে তো তারা পাত্তাই দেয়নি। এপরও ফাইনালে তাদের হারানোর পথটা কিন্তু দেখতে পাচ্ছেন মুশফিক, ‘ভারত এই টুর্নামেন্টে দারুণ ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু তারাও মানুষ, ভুল তারা করবেই। আমরা যদি ভালো স্কোর গড়তে পারি, তাহলে আমরা পরে তাদের চাপে ফেলতে পারব। অথবা আমাদের যদি বড় স্কোর তাড়া করতে হয় তাহলে ভালো শুরু পেলে আমরা জয় পেতে পারি। এই টুর্নামেন্টে আমরা এটাই অর্জন করতে চাই।’ আর শেষ হাতিয়ার হিসেবে মাশরাফির সেই উজ্জীবনী মন্ত্রটা এখন দলের সবার মনে, ‘যুদ্ধে নামলে পেছনে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। যুদ্ধের ময়দানে গা বাঁচিয়ে চললে চলবে না। হয় মারব, নয় মরব।’
খেলা অবশ্য যুদ্ধ নয়। কারণ খেলা বিচ্ছেদ নয়, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বাড়ায়। তবে লড়াইটা যেহেতু এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের সেহেতু এটাকে যুদ্ধ বলা যেতেই পারে। সেই লড়াইয়ে যদি নাও জেতে তবুও বাংলাদেশের প্রাপ্তিটা কিন্তু কম নয়। মরুর বুকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৬টি ম্যাচ খেলা, লক্ষ্য মোতাবেক আসরের ফাইনালে ওঠা, মিডিল অর্ডারে মিথুনকে আবিষ্কার এসবকিছুকে তো প্রাপ্তির খাতায় যোগ করা যেতেই পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।