নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশ্ব ক্রিকেট হচ্ছে একটি সংস্কৃতি এবং ভারত হচ্ছে শাসন মঞ্চের উপর দন্ডায়মান কর্তৃত্বপরায়ণ, বিরাট শক্তিশালী সংস্কৃতি নেতা। যারা তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস দেখায় তারা আর্থিক ভীতি, অকথিত হুমকি ও তার জ¦লন্ত দৃষ্টির শিকার হয়। এ ব্যাপারে তার কোনো নমনীয়তা নেই। ‘কিছু প্রাণি অন্যান্যের তুলনায় এগিয়ে’ এ ধারণায় ছাড়িয়ে গেছে তার দৃষ্টিভঙ্গি যা সরল দুর্বল মানুষদের বোকা বানিয়ে দেয়ায় তারা মনে করে যে বিশে্ব তাদের অধিকার সামান্যই।
এটা যখন ভারত ও ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ঘটে তখন তা স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। শত শত কোটি ডলার ও ১শ’ কোটিরও বেশি ক্রিকেট ভক্তের শক্তিতে বলিয়ান ভারত পরিসংখ্যানের চাকাটি তাদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে সক্ষম। তাই তার বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে ‘আমরাই বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করি, আমরা যেটা বলি তোমরা সেটাই কর’।
দি বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) তার সীমার মধ্যে ক্রিকেট খেলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিতৃ কোম্পানি। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) তার সহায়ক প্রতিষ্ঠান যারা তাদের প্রভুদের পক্ষে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করে।
এটা সুস্পষ্ট হয় ২০১৪ সালে যখন আইসিসিসি পুনর্গঠন কার্যকর ভাবে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে তুলে দেয় এবং তাদেরকে অন্য যে কারো চেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করে। অতি সম্প্রতি মে মাসে ভারত একটি এসডবিøউওটি রিপোর্ট প্রকাশ করার পর আইসিসিসি প্রধান ডেভিড রিচার্ডসন ভারতের পদলেহনে বাধ্য হন। এ রিপোর্টে যে উপসংহার টানা হয় তা ছিল সবারই জানা যে ভারতের রাজস্ব ও ক্রিকেট ভক্তদের উপর বিপুল নির্ভরতা বিশ্ব সংস্থাটির অভ্যন্তরে এক সম্ভাব্য দুর্বলতাকে প্রকট করেছে।
চার বছর আগে ভারত ও সমমনা সহযোগী নেতারা ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আইসিসির পুনর্গঠন করতে বাধ্য করেছিল যাতে বিসিসিআইকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভ‚মিকা ও অধিক অর্থ দেয়া হয়। ২০১৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আইসিসির আট বছর মেয়াদকালের টেলিভিশন স্বত্ব থেকে ৩শ’কোটি মার্কিন ডলার আয় হবে বলে ধারণা যার মধ্যে ২শ’ ১০ কোটি ডলারই আসবে ভারতীয় ভক্তদের কাছ থেকে।
ভারত আইসিসির পূর্ণ সদস্যের প্রত্যেককে দেয়া অতিরিক্ত ৭ কোটি মার্কিন ডলারসহ ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার পাবে। ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড পাবে ১৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া পাবে ৮ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার।
তাহলে ভারত কিভাবে তার শক্তিকে ব্যবহার করবে? অন্যান্য দেশে ক্রিকেটের অগ্রগতি রোধ করে দেশে ক্রিকেট অভিযাত্রাকে নিশ্চিত করতে তার সর্বোচ্চ যা করা সম্ভব তা করে।
বহুশতকোটি ডলারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ভারত ও বিশ্বে সেরা খেলোয়াড়দের আকৃষ¦ট করছে। এখনো বিসিসিআই ভাতীয় খেলোয়াড়দের অন্যান্য আন্তর্জাতিক টি২০ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে আসছে সম্ভবত এ কারণে যে ভারত চায় না এসব খেলা আইপিএলকে ছাপিয়ে যাক। ভারত দিবা-রাত্রি টেস্ট ম্যাচগুলো খেলতেও অস্বীকার করে যদিও এ ধরনের খেলাগুলোর রীতি এক ইতিবাচক উদ্যোগ। যে সময় দর্শকরা টি২০ ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে পড়ছে সে সময় এগুলো টেস্ট খেলার ভবিষ্যত রক্ষা করতে পারে।
অলিম্পিকে টি২০ ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি এ খেলাকে বিশে^র সকল প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার সেরা পন্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে একটা সমস্যা আছে। আপনারা অনুমান করতে পেরেছেন সেটি কি? ভারত! একটি অলিম্পিক দলকে মাঠে মোতায়েন করতে অলিম্পিক টিমকে অবশ্যই ভারতীয় অলিম্পিক এসোসিয়েশনের আওতায় আসতে হবে এবং তা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একটি সফল অলিম্পিক টুর্নামেন্ট আইসিসি টি২০ওয়ার্ল্ড কাপের গুরুত্ব হ্রাস করে দিতে পারে, হতে পারে রাজস্বের প্রতি হুমকি যে রাজস্বের অধিকাংশই যায় বিসিসিআইতে।
এখন সবচেয়ে বড় হচ্ছে ষড়যন্ত্র তত্ত¡। সাবেক এক আইসিসি কর্মকর্তা সম্প্রতি বলেন, চীনকে ছাড়া ক্রিকেটের বৈশিক উন্নতি হতে পারে না। এ কথা অপ্রমাণিত অথচ বিশ্বাস করা সহজ যে চীনে যাতে ক্রিকেটের জন্ম না হয় সে নিশ্চিত করতে ভারত সব কিছু করছে। সর্বশেষ তারা যা চায় তা হচ্ছে আরেকটি সম্ভাব্য শতকোটি -মানব বাজার।
এরপর রয়েছে আইসিসি ৫০ ওভার বিশ্ব কাপকে মাত্র ১০টি দেশের মধ্যে নামিয়ে আনা। কারণ ভারত চায় না যে নিম্নমানের দলগুলো তাদের প্রথম দিকের রাউন্ডগুলোতে হারিয়ে দিক ও টুর্নামেন্টের পরে পর্যায়গুলোতে কোটি কোটি টিভি দর্শককে কেড়ে নিকে।
সমাধানটা সহজ। তা হচ্ছে ভারতকে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে ছুঁড়ে ফেলা। অন্য দেশগুলোর উচিত শূন্য থেকে শুরু করার জন্য এখনকার মত বিপুল রাজস্ব ত্যাগ করা এবং একটি নতুন বিশ্ব সংস্থা গড়ে তোলা যা শুধু বাকি ১১টি টেস্ট খেলুড়ে দেশেরই সেবা করবে না, বরং যেখানে সম্ভব সেখানেই ক্রিকেটকে গড়ে তুলতে আন্তরিক চেষ্টা চালাবে।
ভারতের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তারা ভালো থাকবে। ভারতের ভারতীয় ও বিশ্বব্যাপী ভারতীয়রা ভারতীয়দের চায়। তাদের রয়েছে শতকোটি ডলারের আইপিএল, তাদের আছে সে সব ভারতীয় যারা ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলোতে খেলে, তারা স্টেডিয়ামগুলোতে ও টেলিভিশনে ভক্ত আকর্ষণ অব্যাহত রাখবে এবং অব্যাহত রাখবে টাকা আয় করা।
বিরাট কোহলি কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান, কিন্তু বিশ্বের আসলে তাকে প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র কোহলিকে বিপক্ষের বোলারের বল পিটানো দেখার চেয়ে শীর্ষ দলগুলোর বিরুদ্ধে স্কটল্যান্ড, নেপাল, নেদারল্যান্ডস এমনকি হংকংয়ের মত দ্বিতীয় সারির দলগুলোর নিয়মিত খেলা বেশি জরুরি।
টাকার জন্য যদি না-ও হয়, খেলার প্রেরণার স্বার্থেই ভারতীয় ক্রিকেটের কিছু দেয়ার চেয়ে চীনে ক্রিকেটের উন্নয়ন হওয়া এবং অলিম্পিক স্বীকৃতির বিরাট প্রয়োজন। কিন্তু ৪ বছর আগে আইসিসি যখন ক্রিকেট ইন্ডিয়া ইনকরপোরেশনে পরিণত হল তারপর সব প্রেরণার মৃত্যু হল। দি বোর্ড অব কন্ট্রোল প্রকৃতই এক যথার্থ খেতাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।