পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে আবারো একটি রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। একপাক্ষিক ও ভোটারবিহিীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সকল দলের অংশগ্রহণে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন অথবা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়া হচ্ছে বিরোধিদল, নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে। এমনকি সরকারের তরফ থেকেও ৫ই জানুয়ারীর অনুরূপ আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন চাইনা, এমন মত প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি’র সাথে সংলাপ বা রাজনৈতিক সমঝোতার তাগিদকে বরাবরই অগ্রাহ্য করে আসছে সরকার। এহেন বাস্তবতায় একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরীতে সরকারের সদিচ্ছা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামীলীগ সরকার তার দ্বিতীয় মেয়াদ ইতিমধ্যে চার বছর পেরিয়ে আসায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সবশেষ খবর হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট থেকে তার দলের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করেছেন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলের সময়সীমা অনুসারে আগামী অক্টোবর থেকে জাতীয় নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও সরকারী দল আওয়ামীলীগ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সমাবেশে নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করে দিয়েছে। গত মঙ্গলবার সিলেট আলিয়া মাদরাসা ময়দানে আয়োজিত সমাবেশটিকে আনুষ্ঠানিক বা ঘোষিত নির্বাচনী সমাবেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে নৌকায় ভোট চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় সব সুযোগসুবিধা ব্যবহার করে আয়োজিত বর্ণাঢ্য সমাবেশে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যখন নৌকা মার্কায় ভোট চেইছেন, ঠিক একই সময়ে তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নেতা বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে বিএনপি ও জামায়াতের তৃণমূলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী হাজার হাজার মামলায় হয়রানি, হুলিয়া ও কারাবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখে সুষ্ঠু ও সহাবস্থানমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা এখনো সুদূরপরাহত। গতকাল একটি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্রীয় প্রটৌকলে গণভবন থেকে সিলেটের নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন, তখন বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিশেষ আদালতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা ঠিক একই সময়ে ঢাকা ও সিলেট আলিয়া মাদরাসার উদ্দেশ্যে রওয়ান দেন সম্পূর্ন বিপরীতমুখী কর্মসূচিতে যোগ দিতে। সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে উপস্থিত সরকার সমর্থক দলীয় নেতা-কর্মীরা যখন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী বক্তৃতায় উজ্জীবিত, সে সময় ঢাকায় বেগম খালেদা জিয়া আদালত থেকে বাসার পথে, শুধু তাই নয়, ওই দিন কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অসংখ্য নেতা-কর্মী পুলিশি ধরপাকড়ের শিকার হয়েছেন। এহেন বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কাঙ্খিত পরিবেশ আশা করা যায়না।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সংলাপ ও সমঝোতার বদলে একদিকে কথিত দুর্নীতির মামলা অন্যদিকে বলপ্রয়োগের কৌশল নিচ্ছে সরকার। ঘন ঘন হাজিরা ও দীর্ঘ শুনানি শেষে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষনা করতে যাচ্ছে বিশেষ আদালত। ঠিক একই প্রকারের দুর্নীতির মামলা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ছিল। ক্ষমতায় আসার পর সে সব মামলা প্রত্যাহার হলেও বেগম খালেদা জিয়ার আগের মামলাগুলোর সাথে আরো ৩০টি নতুন মামলা যুক্ত হয়েছে। রাজনৈতিক হয়রানির জন্যই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে বলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। বিএনপি আগেই জানিয়ে দিয়েছে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবেনা। বিএনপি সর্বশেষ অবস্থান ও বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। পশ্চিমা কূটনীতিকরা বহু আগে থেকে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর উপর তাগিদ দিচ্ছেন। অতীতে যাই হোক,এবার ভারতীয় ক‚টনীতিকদেরকেও অভিন্ন সুরে একটি সুষ্ঠ,ু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশের আপাত শান্ত পরিবেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি যতটুকু হয়েছে তা আশাব্যঞ্জক বলে দাবী করা হয়েছে সরকারি মহল থেকে যদিও আগামীতে অর্থনৈতিক সংকট সমস্যার আশংকা ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন মহল। আবারো ৫ই জানুয়ারীর অনুরূপ একটি একপাক্ষিক নির্বাচন হলে দেশে কি পরিস্থিতি দাড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। সরকারের বাইরে সব দল, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতক সম্প্রদায় সব দলের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সব দলের অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সুষ্ঠু পরিবেশ দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচনের বিষয় নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য। সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ ও অংশগ্রহণমূলক করতে চায় কিনা, সরকারকেই প্রমান করতে হবে। একদিকে বিরোধিদল ঘরে-বাইরে, রাজপথে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হবে, নেতারা আদালতে ও কারাগারে থাকবে আর সরকার সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালাবে, এর নাম গণতন্ত্র নয়। দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সকল দলের জন্য উন্মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। আরেকটি একপাক্ষিক নির্বাচনের দায়ভার বহনের ক্ষমতা দেশের নেই, এটা ক্ষমতাসীনদেরই আগে বুঝতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।