Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ দখল উচ্ছেদে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলো থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে থাকে। ব্যাপক আয়োজনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অবৈধ স্থাপনা বুলডোজারে গুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করার পর তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ না করার কারণে অল্পদিনের মধ্যেই সে সব জায়গা পুরনো বা নতুন দখলদারদের দ্বারা বেদখল হয়ে পড়ে। দশকের পর দশক ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। পরিবেশবাদি সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিক সমাজ তো বটেই, উচ্চ আদালত থেকেও বিভিন্ন সময়ে এহেন ইঁদুর-বেড়াল খেলা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ঢাকার চারপাশের জলাভ’মির প্রায় সবই অবৈধভাবে প্রভাবশালী ভ’মিদস্যু ও আবাসন কোম্পানির হাতে বেদখল হয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে ঢাকার নদনদী, নিম্নাঞ্চল ও জলাভ’মির প্রায় ৯৫ শতাংশ দখল হয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন বিভাগের সহযোগিতায় কিছু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও সেখানেও যেন এক শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, খাল ও নদীর উপর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নামে গত চার দশকে জেলা প্রশাসন ও নৌপরিবহন বিভাগের সহায়তায় ডিসিসি, রাজউকসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে অন্তত ২২০ বার মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানের পেছনে সরকারের শত শত কোটি টাকা খরচ হলেও কাজের কাজ আসলে কিছুই হচ্ছে না। গত তিন বছর ধরে অভিযান আরো জোরালো হলেও অবস্থা তথৈবচ।
ঢাকার চারপাশের নদীর উপর থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদের ধারাবাহিক অভিযানে গত মাসে কেরানিগঞ্জ-কামরাঙ্গির চরে পুরনো বুড়িগঙ্গার উপর নির্মিত বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা ও ভবন ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল। গতকাল কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোবাইল কোর্টের অভিযানে ভেঙ্গে দেয়া সে সব অবৈধ স্থাপনাগুলোতে দখলদাররা পুনরায় নির্মান কাজ চালাচ্ছে। গড়ে ওঠা শত শত অবৈধ স্থাপনা রাতারাতি ভেঙ্গে সরিয়ে নেয়া জেলা প্রশাসন বা বিআইডাব্লিওটিএ’র পক্ষে হয়তো সম্ভব নয়। মোবাইল কোর্ট সে সব অবৈধ স্থাপনার উপর ক্রেন ও বুলডোজারে আংশিক ভেঙ্গে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছিল। এরপর জায়গা খালি করে দখলমুক্ত করার কোনো কর্তৃপক্ষীয় চাপ না থাকায় দখলদাররা ভেঙ্গে দেয়া স্থাপনা আবারো মেরামত করে দখলদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে। এমনকি অবৈধভাবে গড়ে তোলা টিনশেড ঘরগুলোও পুনরায় নির্মান করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে অভিযান পরিচালনা করে দখল উচ্ছেদ করা হলেও তা আসলে অনেকটা সাময়িক আইওয়াশের মত ব্যাপার। কামরাঙ্গিরচরের দখলদারদের পুনরায় দখল পাকা করার মধ্য দিয়ে তা আবারো প্রমানিত হল। এসব দখলবাজির সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়া ও যোগসাজশ থাকে বলেই প্রশাসনের যৌথ অভিযানের পরও তারা অবৈধভাবে পুনরায় স্থাপনা নির্মানের সাহস পায়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে অভিযান চালিয়ে দখল উচ্ছেদ করা হয়, কয়েকদিনের মধ্যে তা পুর্নদখল হয়ে গেলেও দখলদারদের কিছুই হয়না। এভাবেই চলছে দশকের পর দশক ধরে।
কোটি মানুষের শ্রমে ও ঘামে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শুধুমাত্র পরিসংখ্যানগত গড় প্রবৃদ্ধির নামই উন্নয়ন নয়। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো আমাদের জন্য আল্লাহর অপার দান। ঢাকা ও চারপাশের জনপদের মানুষের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্যের অন্যতম নিয়ামক এসব নদ-নদী। নদনদী ও জলাভ’মি বেদখল ও ভরাটের কারণে ঢাকা নগরী বসবাসের অযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দেশ একদিকে মধ্য আয়ের দেশে পরিনত হওয়ার পথে পা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে দেশের রাজধানী শহরটি বিশ্বের অন্যতম দূষিত বায়ু ও বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকার শীর্ষে স্থান পাচ্ছে। যেনতেন প্রকারে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন টেকসই উন্নয়ন নয়। মানুষের জন্য নিরাপদ, বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব নগরী এবং জনপদের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাই টেকসই উন্নয়নের মূল শর্ত। সারাদেশে সব নদনদী ও জলাভ’মির উপর প্রভাবশালী দখলদাররা কালোছায়া বিস্তার করে রেখেছে। নদনদী, খালবিল থেকে শুরু করে রেলওয়ে, বনবিভাগ থেকে রাজউকের প্লট পর্যন্ত অবৈধ দখলে চলে গেছে। দখলদাররা ক্ষমতাবান, তাদের কাছে প্রশাসনও যেন অসহায়। গত প্রায় তিন বছরে রাজধানীর চারপাশে প্রায় ৮ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১৭৬.২৭ একর সরকারি জায়গা উদ্ধারের তথ্য জানা যায়। উদ্ধার করা এসব জায়গা কি সুরক্ষিত আছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। শুধু উচ্ছেদ করলেই হবে না, অবৈধ দখলদারদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। উদ্ধার হওয়া ভ’মির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু ও অবৈধ দখলবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ দখল উচ্ছেদে রাজনৈতিক সদিচ্ছা
আরও পড়ুন