Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে অনিবার্য ‘জাতীয় সরকার’

জেএসডির প্রস্তাবনা পেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বর্তমান সরকারের কতৃত্ববাদী শাসন ও লাগামহীন দুর্নীতিতে দেশ আজ চরম সঙ্কটে নিপতিত। এই ফ্যাসিবাদী শাসন প্রক্রিয়া ও সৃষ্ট নৈরাজ্য থেকে মুক্তির এক মাত্র উপায় হচ্ছে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করা। তাই দেশের বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সরকার গঠনের রূপরেখা প্রকাশ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় জেএসডির সভাপতি স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রর জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা পেশ করেন। প্রস্তাবনায় আ স ম রব বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার নিয়ে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশ এখন কোন অবস্থায় রয়েছে, জনগণের মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব কতটুকু রক্ষিত হচ্ছে, জনগণের অর্জিত সম্পদের সিংহভাগ কীভাবে লুণ্ঠন ও পাচার হচ্ছে, জাতির ভবিষ্যত কী? তার সমীক্ষা জরুরি।

জেএসডি সভাপতি বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার কারণে দেশে রাজনীতি বিবর্জিত একটা বর্বর সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ঘরোয়া ও পারিবারিক ইতিহাসে আবদ্ধ করা হয়েছে। দেশ এখন দৃর্বুত্ত বৈশিষ্টপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, শাসন প্রক্রিয়া ও সমাজদেহে যে গভীর ক্ষত এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে গণজাগরণ ও গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতীয় নৈতিক শক্তির পুনরুজ্জীবন করে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করা। আজকে দেশের বর্তমান সঙ্কট নিরসনে ১৯৭১ সালের মতো সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগের কারণে বাংলাদেশ জাহান্নামে পরিণত হয়েছে। দেশে অন্যায়, লুটপাট ও দুর্নীতি চলছে। দেশটাকে লুট করে তারা বিদেশে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে সরকার তার স্বার্থ ও লক্ষপূরণে ব্যবহার করছে। বর্তমান সরকার প্রমাণ করেছে যে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে তারা বিশ্বাসী নয়। এটা পরিবারতন্ত্রকে দীর্ঘস্থায়ী করার রাজতন্ত্রের এক মডেল। সুতরাং সবাই মিলে একসাথে মাঠে না নামলে এই দখলদার সরকারকে সরানো যাবে না।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের পক্ষে অনুষ্ঠানে জাতীয় সরকারের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মসূচিসহ লিখিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংগঠনের কার্যকরী সেক্রেটারি শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। ‘জাতীয় সরকার’ প্রস্তাবকে সমর্থন করে এর ওপর অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের একাংশের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর, রাষ্ট্রচিন্তা আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, জেএসডির কর্যকরী সভাপতি সিরাজ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন তালুকদার প্রমুখ।

আ স ম আবদুর রব তার জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনায় ১৩ দফা ন্যূনতম কর্মসূচি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে জাতীয় সরকারের লক্ষ্য হিসাবে উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক একটি নৈতিক ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করা। জাতীয় সরকারের গঠন, রূপরেখা ও মেয়াদকাল সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।

জাতীয় সরকারের উদ্দেশ্য : ১. মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ‘সাম্য, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’ এর ভিত্তিতে রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি প্রনয়ন করা। ২. সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে সংবিধানের আওতায় প্রতিস্থাপন করা। ৩. আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৪. রাজবন্দিদের মুক্তি প্রদান করা এবং সকল গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা। ৫. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে-একটি স্বাধীন ‘নির্বাচন কমিশন’ প্রতিষ্ঠা করা। ৬. নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

এছাড়া কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার পরিবর্তে সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, কোনো এক ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণে বারিত করা, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নে সংবিধান সংশোধন করা, সুপ্রিম জুডিশিয়াল ও সাংবিধানিক আদালত গঠন করা, পুলিশী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা অন্যতম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, জাতীয় সরকার গণতন্ত্রের অনেক পুরনো ধারণা। ব্রিটেনে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সহ ৩ বার জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল। চীনে ও ভূটানে জাতীয় সরকার হয়েছে। আসলে কোনো জাতি যখন চরম সঙ্কট ও দুর্যোগে পড়ে তখনই জাতীয় সরকারের বিষয়টি অনুভূত হয়। বাংলাদেশ ৫০ বছর পরও সঙ্কটমুক্ত হতে পারেনি। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দেশকে তাদের সম্পত্তি মনে করে বলেই এই সমস্যা। সুতরাং এই মুহুর্তে দরকার জাতীয় সরকার।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে জেএসডি যে প্রস্তাবনা দিয়েছে সেটা তারা ১৯৭২ সালেও দিয়েছিল। আজকে দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরের মধ্যে ১৮ বছরই দেশে সামরিক ও স্বৈরশাসনের অধীনে ছিল। বর্তমান বিনাভোটের কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার ও তাদের পার্লামেন্ট বৈধ নয়। আজকে র‌্যাব ও সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ওপর যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সেটা তাদের অন্যায়ের প্রতিফলন। তাই বর্তমান সঙ্কট নিরসনে সকলের মতামতের ভিত্তিতে কমপক্ষে ২ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার হতে পারে। আমরা জেএসডির প্রস্তাবনাকে সমর্থন করছি।

জেএসডির কার্যকরী সভাপতি সিরাজ বলেন, বর্তমান সরকারকে জনগণ বিশ্বাস করে না। তারা বল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ চালাচ্ছে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:৪৭ এএম says : 0
    যারা অযথা কবরস্থানে যাবে তারাই জনগণের দুঃমন,যে মুর্দার আশা করে সেখানে যাবে সে নিজেই গুনাগার,কতে লোক বিনা অপরাধে ঘুম খুন হত্যা ধর্ষণ ।কতে আলেম হাফেজ মুফতি হত্যা জেলে রেখেছেন,সে কি করে সংলাপের সিদ্ধান্ত নিবে। যারা সেই কবরস্থানে যাবে মনে হয় এই পাপের বোঝা তাদের উপরেও উঠতে পারে,জনগণ এই পাপিদের ছাড়বে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:৪৭ এএম says : 0
    যারা অযথা কবরস্থানে যাবে তারাই জনগণের দুঃমন,যে মুর্দার আশা করে সেখানে যাবে সে নিজেই গুনাগার,কতে লোক বিনা অপরাধে ঘুম খুন হত্যা ধর্ষণ ।কতে আলেম হাফেজ মুফতি হত্যা জেলে রেখেছেন,সে কি করে সংলাপের সিদ্ধান্ত নিবে। যারা সেই কবরস্থানে যাবে মনে হয় এই পাপের বোঝা তাদের উপরেও উঠতে পারে,জনগণ এই পাপিদের ছাড়বে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:৪৮ এএম says : 0
    যারা অযথা কবরস্থানে যাবে তারাই জনগণের দুঃমন,যে মুর্দার আশা করে সেখানে যাবে সে নিজেই গুনাগার,কতে লোক বিনা অপরাধে ঘুম খুন হত্যা ধর্ষণ ।কতে আলেম হাফেজ মুফতি হত্যা জেলে রেখেছেন,সে কি করে সংলাপের সিদ্ধান্ত নিবে। যারা সেই কবরস্থানে যাবে মনে হয় এই পাপের বোঝা তাদের উপরেও উঠতে পারে,জনগণ এই পাপিদের ছাড়বে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ