Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ ব্যাপারে দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর উত্তরা একটি মডেল টাউন হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখনো এর সম্প্রসারণ ও বিকাশ চলমান রয়েছে। নতুন এই শহরের রাস্তাঘাট ও ফুটপাত নির্মাণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সাবেক মেয়র আনিসুল হকের সময় রাস্তাঘাট ও ফুটপাত নির্মাণসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধার দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয়। পথচারীদের যাতায়াত যাতে নির্বিঘ্ন হয়, রাস্তা-ফুটপাত দখলমুক্ত থাকে, তা নিশ্চিত করা হয়। তার মৃত্যুর পর উত্তর সিটি করপোরেশন অনেকটাই হযবরল অবস্থায় পতিত হয়। এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অমনোযোগিতা প্রদর্শন করে। ফলে রাস্তা-ফুটপাত অবলীলায় দখল হয়ে যায়। নাগরিকদের যাতায়াতে নানারকম প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। নাগরিক সুযোগ-সুবিধারও সংকোচন ঘটে। রাস্তা-ফুটপাত কতটা নজরদারির বাইরে চলে যায়, সেটা বোঝা যায় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে মার্কেট ও দোকানপাট নির্মাণ করা থেকে। এখন দখলকৃত রাস্তা-ফুটপাত থেকে মার্কেট ও দোকানপাট উচ্ছেদ করার সময় হকাররা রাস্তা অবরোধ করে দখল উচ্ছেদের প্রতিবাদ করছে। গত শনিবার হকাররা রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করলে ও অবস্থান নিলে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সড়কসহ রাজধানীর সর্বত্র তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। জনভোগান্তি চরমে ওঠে। বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধকারীদের দাবি, উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। অথবা স্থায়ীভাবে পুনবার্সনের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভবত একেই বলে মামার বাড়ির আবদার। তারা এতদিন অন্যায়ভাবে রাস্তা-ফুটপাতে অবৈধ মার্কেট ও দোকানপাট গড়ে ব্যবসা করেছে। তার জন্য তাদের কোনো অপরাধবোধ নেই, শাস্তির ভয় নেই। এখন সিনাজুরি দেখিয়ে অন্যায়ের পক্ষে রাস্তার নেমেছে। জনগণকে জিম্মি করে অন্যায্য দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। তাদের এ দাবি মানার প্রশ্নই ওঠে না।

উত্তরার রাস্তার দু’ পাশে বহু বৈধ মার্কেট দোকানপাট এবং শপিংমল গড়ে উঠেছে। এসব মার্কেট, দোকানপাট ও শপিংমলে যারা ব্যবসা করছে, তারা বছরে শত শত কোটি টাকার ট্যাক্স দিচ্ছে। পক্ষান্তরে অবৈধ ব্যবসায়ী বা হকাররা কোনো ট্যাক্স-শুল্কই দিচ্ছে না। উপরন্তু বৈধ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে ও ভাগ বসাচ্ছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, উত্তরার হকারদের প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর স্থানীয় একশ্রেণীর নেতাকর্মী। তারা নিয়মিত হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে। আইনশৃংখলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্যও নিয়মিত চাঁদা পেয়ে থাকে। এই রাজনৈতিক ও পুলিশী ছত্রচ্ছায়াই রাস্তা-ফুটপাত দখল ও অবৈধ দোকানপাট তুলে ব্যবসা করা সম্ভবপর করে রেখেছে। গত শনিবার হকারদের বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ ক্ষমতাসীনদের চাঁদাবাজ অংশের ইন্ধনে হয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। এও লক্ষ্য করা গেছে, বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধকারীদের আইনশৃংখলা বাহিনী কিছু বলেনি। আইনশৃংখলাবাহিনীর বাধার মুখে, চন্ড আচারণের কারণে বিরোধী দলের লোকেরা যেখানে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন পর্যন্ত করতে পারে না, সেখানে রাস্তায় বিক্ষোভ করে, রাস্তায় অবস্থান নিয়ে যান ও জনচলাচল রহিত করে হকাররা পার পেয়ে গেছে। তাদের গায়ে ফুলের টোকাও লাগেনি। এর মোজেজা না বুঝার কিছু নেই। কোনো অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজে ক্ষমতাসীনদের সায় এবং আইনশৃংখলাবাহিনীর সমর্থন থাকলে তা নিরোধ কীভাবে সম্ভব?

হকারদের বেপরোয়া আচরণ ও কথিত দাবি পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত ও হতবাক করেছে। এ কেমন কথা যে, তাদের রাস্তা-ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ অব্যাহত রাখতে দিতে হবে, না হয় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। এ দাবি মেনে নিলে গুলশান-বনানীসহ ঢাকার সর্বত্র রাস্তা-ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে লোক এখানে এসে হাজির হবে। শহরটির বসবাসযোগ্যতা যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তাও আর থাকবে না। তাদের দাবি অনুযায়ী স্থায়ী পুনবার্সনের সুযোগ দেয়া হলেও যে লোক ছুটে আসবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? অতীতে বিভিন্ন সময়ে রাজধানীসহ বড় শহরে থেকে হকার ও ছিন্নমূলদের গ্রামে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সে উদ্যোগ তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। পুনর্বাসিতদের বেশির ভাগ কিছুদিন পর সবকিছু বেচে উধাও হয়ে গেছে। পুনর্বাসনের সঙ্গে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকলে এ ধরনের উদ্যোগের সফলতা আসে না। রাস্তা-ফুটপাত দখলের সমস্যা, বস্তি সমস্যা ইত্যাদির সমাধান হচ্ছে না। নানা কারণে। দারিদ্র, ভূমিহীনতা, উচ্ছেদ, কর্মসংস্থানের অভাব ইত্যাদি এজন্য বিশেষভাবে দায়ী। এইসঙ্গে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের একাংশ এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের একাংশের চাঁদাবাজীর ‘ব্যবসা’ও কম দায়ী নয়। রাস্তা-ফুটপাত ও বস্তির ব্যবসা কখনোই এতটা জমজমাট হতে পারতো না, যদি না এর পেছনে রাজনৈতিক পোষকতা ও আইনশৃংখলাবাহিনীর অপভূমিকা থাকতো। কাজেই এ সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অপরিহার্য। আমরা আশা করবো, রাস্তা-ফুটপাত দখলমুক্ত এবং শহরের থেকে জনচাপ কমাতে দৃঢ় ও কার্যকর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
আরও পড়ুন