Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

একটি রাজনৈতিক অশনিসংকেত

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলার যে ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয় শুধু নয়, অত্যন্ত উদ্বেগজনকও বটে। রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে দলের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে সেখানে যাচ্ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ্য নেতা। তাদের বহনকারী গাড়ির বহর চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালি বাজার এলাকায় পৌঁছালে ৪০-৫০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতা আহত হয়েছেন। ৮/৯টি গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়েছে। অত:পর ত্রাণ কর্মসূচী বাতিল চট্টগ্রামে ফিরে এসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেয়ার সময় অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাই ওই হামলা করেছে। তারা ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে হামলা করে। তিনি হামলাকে গণতন্ত্রের ওপর হামলা বলে অভিহিত করে বলেছেন, এর মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট চরিত্র আরো বেশী করে উন্মোচিত হয়েছে। কার কতটা আঘাত লেগেছে বড় কথা নয়। এ আঘাত বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা মুক্ত চিন্তা করে, যারা সরকারের খারাপ কাজগুলোর বিরোধীতা করে এবং যারা গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার তাদের ওপর। এর আগে লংগদুতে বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত লোকদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য বিএনপির একটি দল আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে রাঙামাটি পৌঁছলে সেখান থেকে তাদের ঘটনাস্থলে যেতে দেয়া হয়নি। সেই দলটিও ফিরে আসতে বাধ্য হয়। বিএনপিকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে না দেয়া, সভা-সমাবেশের অনুমোদন না দেয়া এবং মামলার সঙ্গে হামলাও বিরল ঘটনা নয়। বরং এসব স্বাভাবিক ও সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পরিস্থিত কতটা উদ্বেগজনক যে, বিএনপি নেতাদের দুর্গত-ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলার সময় বড় কোনো অঘটনও ঘটে যেতে পারতো। ঘটেনি যে সেটা নিতান্তই উপরওয়ালার ইচ্ছা। ন্যাক্কারজনক ও বর্বরোচিত এই হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন সজ্জন, সাদাসিদা, রুচিশীল, সহৃদয়, সদালাপী মানুষ হিসাবে সুপরিচিত। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও এসব গুণের অধিকারী। দু’জনকেই দলমত নির্বিশেষে দেশের মানুষ অতুল্য সম্মান ও শ্রদ্ধা করে থাকে। তাদের ওপর হামলা হতে পারে, এটা কল্পনার বাইরে। বস্তুুত এ হামলার ঘটনা দেশবাসীকে মর্মাহত ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবি সংগঠনের তরফে এ ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, হামলার এ ঘটনা সরকারের দেউলিয়াত্বের প্রকাশ, ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রকাশ, নগ্ন প্রতিহিংসার প্রকাশ এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকি স্বরূপ। বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ হামলা গণতন্ত্র, রাজনীতি, নাগরিক অধিকার ও পরমতসহিষ্ণুতার ওপর হামলা। এর পরিণতি শুভ হবে না। বলা বাহুল্য, আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজনীতিতে সুবাতাস প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যখন অনেকেই আলোচনা করছেন, নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি ও প্রচরণা যখন ক্রমাগত দৃশ্যমান ও জোরালো হয়ে উঠছে, তখন এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা অনভিপ্রেত ও দুভার্গ্যজনক। সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ, কাঙ্খিত নির্বাচনবান্ধব অবস্থা ও জননিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটা বিরাট হুমকি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে একটা অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। যে কোনো মুহূর্তে এই অনিশ্চয়তা সংঘাত ও সহিংসতায় রূপান্তরিত হতে পারে, এমন আশংকা বিদ্যমান। বিগত অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর থেকেই রাজনীতি থমকে আছে, গণতন্ত্র বন্ধী, অচল। পর্যবেক্ষকদের মতে, একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই কেবল রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে সচল ও উম্মুক্ত করতে পারে। প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক সহিংসতা যদি এভাবে বলবৎ থাকে তাহলে কি সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে?
দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলকে নি:শেষ করে দেয়া যায় না। এ কথা জানার পরও দেশে দেশে এ অপচেষ্টা কম হয়নি। কিন্তু কোথাও সফলতা আসেনি। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও এক সময় নি:শেষ ও অকার্যকর করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। দলটির বর্তমান অস্তিত্বই প্রমাণ দেয়, সেই উৎসাদনচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপিকেও তাই দমন-পীড়ন, হামলা-মামলায় জব্দ বা শেষ করে দেয়া যাবে না। বিএনপি বলে কথা নয়, যে কোনো দলকে মোকাবিলা করতে হবে আদর্শ দিয়ে, রাজনীতি দিয়ে, জনসেবা দিয়ে। এটাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোকাবিলার স্বীকৃত পদ্ধতি। সন্ত্রাস, হামলা কেবল সহিষ্ণুতা, পরস্পারিক অশ্রদ্ধা ও প্রতিহিংসাপ্রবণতারই জন্ম দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য দেখতে চান, প্রশ্নবিদ্ধ কোনো নির্বাচন দেখতে চান না। ক’দিন আগেও তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহŸান জানিয়েছেন। এটা প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ হিসাবে বিবেচনায় নিলে হামলার ঘটনাকে ব্যতিক্রম বলেই ধরে নিতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হামলার ঘটনাকে সহজভাবে নেননি। তিনি হামলাকে ‘খুবই অন্যায়’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। ‘এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে জানিয়ে কে বা কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখে দ্রæত বিচার করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, কারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছে তা কারো ধারণার বাইরে নয়। কোনো কোনো পত্রিকায় তাদের সাংগঠনিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি দৈনিকেই হামলাকারীদের ছবি ছাপা হয়েছে। কাজেই হামলাকারী চিহ্নিত করা এবং খুঁজে বের করা মোটেই অসম্ভব নয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। তাদেরও অজানা থাকার কথা নয়। পুলিশ এ বিষয়ে কি করে এখন সেটাই দেখার বিষয়। হামলাকারী যারাই হোক, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাক, তারা রেহাই পেতে পারে না। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কাম্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনৈতিক


আরও
আরও পড়ুন