পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ফ্রান্সের বহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মধ্যপন্থী ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ বিপুল বিজয়ের মধ্যে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিন বছর আগেও যিনি ছিলেন অপরিচিত, অপরিজ্ঞাত, তিনিই এখন ফ্রান্সের মত প্রভাবশালী দেশের প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি ফ্রান্সের এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট। দ্বিতীয় দফার এই ভোটে কট্টর ডানপন্থী ম্যারিন লা পেন ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁর চেয়ে ৩০ শতাংশ ভোট কম পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ পেয়েছেন ৬৫.১ শতাংশ ভোট এবং ম্যারিন লা পেন পেয়েছেন ৩৪.৯ শতাংশ ভোট। ফ্রান্সের ভোটাররা মধ্যপন্থাকে বেছে নেবেন, না কি বেছে নেবেন কট্টর ডানপন্থাকে, সেটা ছিল একটা বড় প্রশ্ন। সচেতন ভোটাররা মধ্যপন্থার পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং এর মধ্যদিয়ে তারাও ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়েছেন। প্রথম দফা ভোটে কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় শীর্ষ দুই প্রার্থী ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ম্যারিন লা পেনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোটের লড়াইয়ে ফ্রান্সের ভোটাররা ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁকে পছন্দ করেছেন। এই পছন্দের মধ্য দিয়ে মধ্যপন্থার প্রতি তাদের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করেছেন। এই নির্বাচনে কেবল ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁরই বিজয় হয়নি, বিজয় হয়েছে ফ্রান্সের জনগণের, বিজয় হয়েছে গণতন্ত্রের। ম্যারিন লা পেন পরাজয় মেনে নিয়ে ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তার সাফল্য কামনা করেছেন। আমরাও ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁকে অভিনন্দন জানাই। অভিনন্দন জানাই ফ্রান্সের জনগণকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত ভোট এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে না থাকার পক্ষে রায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কট্টরপন্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়কে বিশ্ব রাজনীতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের উত্থানের আলামত হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। বিশ্বের মধ্যপন্থী, সহনশীল ও উদার মনোভাবেসম্পন্ন মানুষ এতে সঙ্গতকারণেই বিচলিত। লক্ষণীয় যে, ব্রিটেনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে রায় ও যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের বিজয়ের পর ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদী, মুসলিম বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তিগুলো বিশেষভাবে উজ্জীবিত ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানমূলক, সহনশীল ও উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে এক ধরনের সংশয় দেখা দেয়। এই প্রেক্ষপটে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসাবে পরিচিত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতি বিশ্ববাসীর গভীর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। কট্টর ডানপন্থী বা উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রবাহ কতটা ফ্রান্সকে আন্দোলিত-প্রভাবিত করতে পেরেছে, সেটা এই নির্বাচনে বুঝা ও জানার একটা ব্যাপার ছিল। এটা অবশ্যই বিশ্ববাসীর জন্য বড় একটি সুখবর যে, কট্টর ডানপন্থী বা উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে ফ্রান্সের জনগণ সমর্থন বা প্রশ্রয় দেননি। এর আগে নেদারল্যান্ডে কট্টর ডানপন্থীরা পাত্তা পাননি। এটা ইতিবাচক লক্ষণ হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কট্টর ডানপন্থী বা উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধির বিষয়টিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফ্রান্সের মতো সহনশীল সমাজ ও ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দেশেও যখন ৩৫ শতাংশ ভোটার কট্টর ডানপন্থী বা উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতি সমর্থন করে তখন একে এড়িয়ে যাওয়া বা উপেক্ষা করা যায় না। এরপরও আমরা মনে করি, ফ্রান্সে মধ্যপন্থী, উদার, গণতান্ত্রিক রাজনীতির এই বিজয় একটি মাইলফলক। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়। ভিন্ন পন্থায় মোকাবিলা বুমেরাং হয়ে দেখা দেয়। মধ্যপন্থাী সহনশীল, উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির র্চচা, বিকাশ ও প্রভাব বিস্তারের মধ্যে দিয়েই কট্টর ডানপন্থী বা উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সফল মোকাবিলা সম্ভব। ফ্রান্সে এক্ষেত্রে যে নজির স্থাপিত হয়েছে, তার প্রভাব ইউরোপে ও বিশ্বের অন্যত্র পড়বে বলে আশা করা যায়। সামনেই জার্মানি, ব্রিটেন এবং সম্ভবত ইটালিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই দেশগুলোর নির্বাচনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
ফ্রান্স সব সময়ই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী। সহনশীল, উদার, গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবেও তার বিখ্যাতি রয়েছে। এরকম একটি দেশে কট্টর ডানপন্থী বা উগ্র জাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী চিন্তাধারা বা রাজনীতি প্রশ্রয় পাওয়ার কথা নয়। অথচ ম্যারিন লা পেন এর বাইরে গিয়ে বাজিমাত করার পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি বিশ্বায়ন, অভিবাসন ও ইসলামের বিরোধিতা করেন। ব্রেক্সিটের আদলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেন। পক্ষান্তরে ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ বিশ্বায়নের পক্ষে, অভিবাসনের পক্ষে ও ধর্মীয় সহাবস্থানের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি শক্তিশালী ইউরোপের পক্ষে, জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পক্ষে কথা বলেন। তার বিজয়ের পেছনে তার এই নীতি-অবস্থানই নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। একথা কারো অজানা নেই, ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম দেশ। ওই সব দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মুসলমান ফ্রান্সে স্থায়ী হয়েছে। মুসলমানরাই সেখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। ম্যারিন লা পেনের অভিবাসন ও মুসলিম বিরোধী বক্তব্য ও অবস্থানে ফ্রান্সের মুসলমানরা সঙ্গতকারণেই বিচলিত হয়ে পড়েছিল। ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিজয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মুসলিম বিশ্ব ও এক ধরনের বিচলনের মধ্যে ছিল। এখন স্বভাবতই স্বস্তি দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ঐক্যের পক্ষের দেশগুলোও হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। বলা বাহুল্য, নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে রয়েছে বিবিধ চ্যালেঞ্জ। সমাজ ও অর্থনীতিতে যে বিভক্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সেই বিভক্তি তাকে মোচন করে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। ইউরোপীয় ঐক্য ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা আরও দৃঢ়বদ্ধ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে বলিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। কাজগুলো সহজ নয়। তবে আশার কথা এই যে, তার সহযোগির কখনই কোনো অভাব হবে না। আমরা তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।