শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ঋতুরাজ বসন্ত
নাফছি জাহান
ঋতুরাজ আজ জানিয়ে দিয়েছে মন হতে মনান্তরে,
কুয়াশা ঘেরা শীতের প্রহর যাচ্ছে তারা ঝরে।
প্রকৃতি তার রূপের বাহারে বাসন্তী রঙে সাজে,
হৃদয়ে হৃদয়ে ফাগুনের ছোঁয়ায় মুখ লুকিয়ে সব লাজে।
ঋতুরাজ আজ সঙ্গে এনেছে গাছে গাছে কচি পাতা,
উপমার জাল দিয়েছো বুনে ওহে বাসন্তী দাতা।
ফুলের সুরভি ছড়িয়ে পড়েছে বসন্তের আগমনে,
শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া সেজেছে রক্তিম রঙের সনে।
প্রকৃতি আজ সুরে মাতোয়ারা কোকিলের কুহু কুহু কলরবে,
আম্র মুকুলের মিষ্টি সুবাসে আনমনা হওনি বলো, কে কবে?
অনাকাক্সিক্ষত দুঃখগুলো ভেসে যাক আজ বসন্তের তালে,
ভালোবাসাময় ক্ষণ ফিরে ফিরে আসুক ফাগুন মাসের জালে।
বসন্ত পাখি
তানি হক
এ পাখির নাম জানি
জানি, সুদূর নির্ঘুমতার পাহাড় ছাড়িয়ে তার আপন জলাভূমি
যেখানে শীতার্ত গাছের নিঃশ্বাসে কোন রঙ নেই
নেই মেঘেদের পুনর্জন্ম অথবা শিশুকাল
শুধু সংশপ্তক তারাদ্বয় সেখানে
তাঁদের বিবর্ণ ডানা খুলে রাখেন।
সম্প্রসারিত করেন উদ্দীপক দিগ্বলয়।
এ পাখির চোখ আমার ভীষণ আপন কেউ
পাঁজরের অতি ঘনিষ্ঠ সুখের মত, আরক্ত হস্তরেখার মত।
প্রাচীন কুয়াশার বালিয়াড়ি ভেঙে
সবুজ ঋতুর বন্যা এলে।
পাথরের মুখ ভেঙে হাসি, ঠোঁটে আকাশ লিখে রাখি।
আমি তাকে ‘বসন্ত’ বলে ডাকি।
বসন্ত যাপন
দেলোয়ার হোসাইন
আগুন বুকে নিয়ে যারা ঘুম সঙ্কটে রাত্রি যাপন করে
আমি তাদের আগত ভোরের গল্প শোনাই, বলিÑ সব
সঙ্কটের ভিড়ে পৃথিবীতে ভ্রমরের কোন সঙ্কট নেই,
তবু তোমরা কেন অন্ধকারের বিলাপ করো...!
ফুলের চরিত্রে কলঙ্কের কোন দাগ নেই, যদিও রঙের
বিভ্রান্তি নিয়ে আমরা সব ফুলে ঘ্রাণ খুঁজে বেড়াই,
অথচ ফুলফোটার শব্দে আমরা আগুন জমিয়ে রাখি...!
তখন ফাগুনÑ আগুনের অহংকার নিয়ে আমি বেরিয়ে পড়ি
পথেÑ ঘুম সঙ্কটের রাতে...!
আজ ফাগুনের প্রথম দিনে
আকিব শিকদার
আজ ফাগুনের প্রথম দিনে
কে আমারে নিবি চিনে।
মদ্যমাতাল দখিন হাওয়ায়
মন মেতেছে কী গান গাওয়ায়
বটের শাখায় কোকিল যেমন গাহে।
আমের বনে নতুন মুকুল
সুগন্ধে তার ভ্রমর ব্যাকুল।
ফাগুন হাওয়ায় লাগল দোলা
আজ আমি যে হৃদয় খোলা
বাঁধনবিহীন ঝরনা যেমন বহে।
চৌদিকে এই বাসন্তি ক্ষণ
কিশলয়ে তাই ভরেছে বন।
কলির কানে গুনগুনিয়ে
অলি কী গান যায় শুনিয়ে
অর্থ যে তার বুঝতে হৃদয় চাহে।
লাগে না ভালো সঙ্গীবিনে
আজ ফাগুনের প্রথম দিনে
চুল দোলানো উদাস হাওয়ায়
কণ্ঠ কাঁপে কি সুর গাওয়ায়
বটের শাখায় কোকিল যেমন গাহে।
পাতাঝরা বসন্ত দিনে
রাজু ইসলাম
ফাগুনঝরা এই বসন্তে বৃক্ষদের হেসে ওঠার দিন
পত্রদের পতন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মর্মর সুরজাগানিয়া
যেন কার দুখে শেষ পাতাটিও ঝরে যাবে এই বসন্তে
নব পল্লবের অনাগত প্রত্যাশায় ঝিঁঁিঝ আর ঘুঘু
কোকিলের মিষ্টি সুর যেন আর্তনাদের প্রতিধ্বনি
বসন্ত বাতাসে হেসে ওঠা কচি পাতার নাচানাচি
প্রকৃতিতে এনে দেয় হরিৎ রঙের মহা উৎসব।
সব ম্লান করে দিয়ে ছোট্ট কন্যাতনয়ার কচি গায়ে
এ কোন বসন্ত নিয়ে এলো জলভর্তি চিকেনপক্স।
ও সোনাবউ
সাবিত সারওয়ার
দুয়ারখানা খোলÑ
শিমুল শাখায় আগুন জ্বলে
সবুজ পাতায় দোলÑ
ও সোনাবউÑ দুয়ারখানা খোল।
দখিন হাওয়ায় চৈতি লতা
বাড়িয়ে তোলে অস্থিরতা
দ্রোহের দুপুর ফিরছে ঘরে
নিঝুম রাজমহল-
দুয়ারখানা খোল।
ও সোনাবউÑ আয় না ফিরে ঘরে
বাগানজুড়ে শুকনো পাতা ঝরে।
কৃষ্ণচূড়ার রক্ত মেখে
কোন বধূয়ার চিত্র এঁকে
নিসঙ্গতায় একটি কোকিল
করছে কোলাহল।
দুয়ারখানা খোলÑ
ও সোনাবউÑ দুয়ারখানা খোল!
ঠোঁট তার সভ্যতার নতুন প্রাণ
রিক্তা রিচি
ফুলের ডালা সাজিয়ে আসে যে সম্রাজ্ঞী
নাম তার বসন্ত।
তার নরম হাতের পরশে, সরল চোখের চাহনিতে,
দীঘল কালো চুলের বিণুনীতে ফুলের বর্ণমালা।
ঠোঁট তার সভ্যতার নতুন প্রাণ।
যাকে পাবার আশায় কলাপাতার বাশি, কোকিলের কণ্ঠ
পাঁচটি ঋতুকে বিদায় জানায় সূর্যাস্ত দিয়ে।
সাগরের তীরে লালচে হলুদ চোখ নিয়ে জেগে ওঠে বসন্ত।
ঘরে ঘরে, উঠোনে উঠোনে, মাঠে মাঠে বসন্ত বন্দনায়
প্রকৃতি খুলে দেয় চুলের খোঁপা।
বসন্তের ধুলোমাখা চাঁদ
দালান জাহান
নারীর সুগন্ধী থেকে,
যে নারীর সৃষ্টি হয়েছিল,
রাত হয়ে ঘুমিয়েছে সমুদ্রের বুকে।
বিস্ময় বৃষ্টি নিয়ে,
বিপরীত আকাশ,
কামনার কম্পনে আনে,
বসন্তের ধুলোমাখা চাঁদ।
জলের যৌবনে পোড়া,
ক্যালিগ্রাফি চোখ,
তুলে রাখে বিকেলের চিত্রলিপি।
ঋতুছন্দী নিজের বুকেই,
উন্মাতল ঋতুবতী।
পাহাড় ও আমার এপিটাফ
শাওন আসগর
পাহাড় এক গাঢ় শুভ্র ঘোমটায় সজ্জিত হয়
বরফ আচ্ছাদিত প্রেম ও শোকে
সবুজ ভালোবাসে যে তেমনি শাদা ঘোমটাও
ললাটে জোটে তার মাঝে মধ্যে
পথ। দীর্ঘ পথ ধূসরতায় শুয়ে থাকে দিন রাত্রি
নিবিড় প্রেমে আলিঙ্গন করে পর্যটক পাখি
জল ছড়ায় গ্রীষ্মে-বসন্তে সব ঋতুতেই।
পাহাড়ের থাকে শুধু অবারিত শীত বসন্ত
মানুষের ভাষা শব্দ সকল ঋতুতেই উড়ে যায় বাতাসে
স্মৃতির খড়কুটো ভাসে নদীর শীতল জলে।
বসন্তের ছোঁয়ায় আকাশ ও মেঘ নীচু অবনত হয় মাটির প্রেমে
আমি উপনীত হই নত মস্তকে একটি অসাধারণ বাক্য নিয়ে তার কাছে
একদিন হয়তো শোক ঘোমটায় আবৃত হবো শাদা বরফের বুনটে।
আমিও পাহাড়ের মতোই. . . .
এ বসন্ত আমার নয়
শুভ্র আহমেদ
এ বসন্ত আমার নয়। এ বসন্ত সংলিপ্তা ধুলোর
শর্তসন্ধির বিনিময়ে কথা আর ছন্দেরা
এই দুইয়ে কবিতা। সূর্যাস্তের রঙের
পরিবর্তে এক দুপুরের নৈঃশব্দে যে আবির
প্রেম হয়ে গিয়েছিলো উড়ে আবার সে
এলো ফিরে এক সন্ধ্যায়, ঝরাপাতায়
কথারা আবার সক্রিয় কবিতার গল্পে, গানে।
এ বসন্ত আমার নয়। এ বসন্ত সংলিপ্তা ধুলোর
স্থির হয়নি এই বসন্তে কতদূর
যাবো। স্থির হয়নি একবার কি ডাকবে
নিমন্ত্রণে। কবিতা পাঠের বিনিময় চাই;
বেশতো, কবিতা পাঠের বিনিময়ে ছেপে দেবো
আস্ত একটা কবিতার বই। তোমার
ইন্দ্রজালে বসন্তের দুপুর ভুলে প্রলিপ্ত হবো
রবীন্দ্রনাথে। তুমিই আমার কিশোরী রাণু।
এ বসন্ত আমার নয়। এ বসন্ত সংলিপ্তা ধুলোর
বসন্ত দিন
আহমদ রাজু
একটু একটু করে সম্মুখ দিয়ে ক্ষয়ে যায় সব
পাগল হয়ে যাই পিপীলিকা জ্বরে। নীতিবান সূর্য
চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের দিকে-
কত অসহায় আমি! পথের দিকে পা বাড়াবো
তারও উপায় নেই; শুকনো পাতারা একজোট হয়েছে
প্রতিশোধের আগুনে। আমার কিছু বলার নেই
নীরব আমি-নীরবতা-ই আমাকে করেছে কাঙাল।
পৃথিবীর সবকিছু পাল্টে গেলেও আমি জানি
মনটা আমার খাঁ খাঁ মরুভূমি স্বপ্নময় আগুনে।
চাল চুলোহীন বাতাস খেলা করে উর্বসী মাঠে
বিবেকের ওড়না মেলে ধরে বিদগ্ধ কিশোরী।
পথের ধুলা জানান দেয় নতুনের আগমন
কৃষ্ণচূড়ার হৃদয়ে আজ মখমল দিন; পাগল পারা
শিমুলের ডাল-ঝিনুক ছাউনিতে ব্যস্ত পলাশের চোখ।
আমি বুঝি না হঠাৎ কেন এই সুখের আগমন!
বুঝি বসন্ত এসেছিল আমার দুয়ারে?
অথচ এই আমি বুঝিনি- বুঝতে চেষ্টাও করিনি
সীমার প্রাণে কখনও সখনও
বসন্ত এসেছিল কিংবা আসতেও পারে।
বাসন্তিক স্বপ্নাবলী
ইদ্রিস আলী মেহেদী
বাসন্তিক স্বপ্ন নেই
বোমারু বিমানের ধোঁয়ায় ফেরারী হয়ে
উড়ে গেছে মহাজাগতিক সীমানা ছেড়ে
এখন নতুন স্বপ্নবীজে অংকুরোদগম্ নেই
ফিন্ফিনে কচি পাতার বাহারী শোভা নেই।
দূরাগত ধুমকেতু
অহেতুক গিলে নেয় বাসন্তিক স্বপ্নের কোরক
পোষ্য গাভীর পিছুটি খেয়ে
গোয়ালিনীর উরুতে পিষ্ট দুধভা-
অকস্মাৎ ভিজে গেরুয়া মাটি
এভাবেই সব স্বপ্ন চলে ‘ভিসুভিয়াসামুখী’...
স্বপ্নগুলো আর স্বপ্ন নেই।
বসন্ত কাননে
শেখ হামিদুল হক
ভালোলাগা কি বৈরাগ্য জীবনকে নিন্দিত চাদরে জড়িয়ে নেবে ?
নৈস্বর্গীক সোহাগে চৈতী বুক ভালোবাসার বৃষ্টিতে সিক্ত হবে ?
বলা যায় না, যাবে না।
আজ উৎসবের মেঘ বাতাসের বুকে দোল খায়,
বাহারী ফুলের উৎসবের ¯্রােতে ভেসে আসে
বসন্তের বৈরাগী কোকিলের সুরেলা কণ্ঠ, এমনই দুর্লভ ক্ষণে
তুমি আমায় বলবে ভালোবাসার কথা, চেতনার চৌকাঠে উৎসবের
প্রারম্ভিক তীলক, শিশিরের চাদর জড়িয়ে প্রভাতী
সূর্যের লালীমা; তোমার রক্তিম গালে প্রকৃতি ভালোবাসার চুম্বন রেখা এঁকে যাবে।
বসন্ত কাননে উৎসবের ফুল রেখে যাবে ভালোবাসার স্বাক্ষর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।