শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
পিতার প্রার্থনা
আব্দুল হাই শিকদার
আমার একহাতে পরম উৎসব
অন্য হাতে নিবিড় প্রকৃতি
মাঝখানে পিতার হৃদয়
সকল কালের সব পিতাদের
কথিত ও অকথিত
কাহিনী জড়ানো এই হৃদয়
হৃদয় নির্বাক এখন বারুদ ও বোমায়
হৃদয় নিঃশব্দ হয়ে মৃত্তিকায় দাঁড়ায়
আমার পরমের জন্য দরকার
একটা খুব নিবিড় প্রকৃতি
আমার প্রকৃতির জন্য দরকার
একটা খুব গভীর আকাশ।
আমার সন্তানদের জন্য দরকার
একটা খুব ভালো বাংলাদেশ
দোহাই বাংলাদেশকে কেউ নোংরা করো না
বাংলাদেশকে কেউ দুঃখ দিও না।
সবার আগে
মাহমুদ শফিক
আমার জীবন ছিল পাখির জীবন
ভোরের রোদে পালক রাঙিয়ে
উড়াউড়ি করেছি সারাদিন,
এরপর ফিরে গেছি নীড়ে
চিন্তিত মনে দেখেছি দূরের নক্ষত্র।
আমার জীবন ছিল ফুলের জীবন
পুষ্প-পল্লবে যখন ছেয়ে গেছে
অরণ্য, বসন্ত আঘাত করেছে দ্বারে,
পাতার আড়ালে নীল ঘাসফুল হয়ে
আমি ফুটেছি তোমার পথের পাশে,
নিঝুম তারার দেশে উঠেছে ঢেউ,
কাঠবাদাম গাছে তক্ষকের ডাক শুনে
জেগে উঠেছে পোকামাকড়।
আমার জীবন ছিল লতার জীবন
বৃক্ষের কোমর জড়িয়ে জড়িয়ে
তরতর করে উঠে গেছি উপরে,
নিচে পড়ে যাবার কথা ভাবিনি কখনো।
আমার জীবন ছিল গতির জীবন
দিগন্ত চিরে টগবগ করে ঘোড়ার মতো
ছুটেছে দুপুরের মেঘ, উত্থাল-পাথাল নদী,
সমুদ্র ও গাঙচিল
আমি এখনো ছুটেছি সবার আগে।
সাহস তোমার
মাহবুব হাসান
রোদ হয়ে উঠেছিলে তুমি রুদ্রনীল আকাশে
তোমার চোখের মতো ভয়হীন নিশঙ্ক আকাশ,
বাজের ছোবল মারার ঢঙে আকাশপরীরা খেলছিলো
চিল বাজ আর ঈগলের ক্ষুধা নিয়ে যারা
নিচের পৃথিবী লুটে চলছিলো, যেন গনিমতের মাল-
তুমি তাদের শিরের পেছনে
তুললে তোমার গোখরো ফণা, দোদুল্যমান!
ছায়ার ভেতরে
রাজনৈতিক ছায়ায় রাত্রিদিনগুলো
লজ্জাবতী লতা!
রোদ কী কখনো ভীত হয়?
বৈশাখী ঝড়ের কালো উদ্দাম মেঘের জিলকানিতে সে কী
হারায় পথ?
পাকা আমের বাশনায় ভেসে যায় সকাল, জৈষ্ঠ্যের সকাল
তুমি জৈষ্ঠ্যের গরমে তক্ত
অপার ক্রোধে জ্বলে উঠলো বাংলার শ্যামল সম্পদে
জন্মভূমির নগ্ন সুন্দরে স্নান করে!
তুমি কাজী,
বড় বেশি উদ্দাম হে, বৈশাখী আমের মতো মচমচে তাজা
রুদ্র-বেগে উঠলে নেচে ত্রিভঙ্গ মুরারী হে আমাদের
সাহসের বৈঠায় তুললে পেশীর প্রাণ!
তুমি ইসলাম জীবন ও জগতের তখতে তাউস,
তুমি নজরুল
আপনাকে ভোলা বকুল ফুল;
আমি সাহসের ঠিকানা পেয়েছি তোমার চোখের তারায় হে,
এই বাংলার মেটে জ্যোৎস্নায়!
ডুবে থাকি
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
আমি ডুবে থাকি নৈঃশব্দ্যের গহীন অতলে
নিঃশ্বাসের প্রান্তিক অঞ্চলের ডালে
ঝুলে থাকা শিশির কণার জলে
আমি ডুবে থাকি
পাখি আর পতঙ্গের ডাকে
মিহিশব্দের শব্দহীন স্রোতে
ভেসে চলা জগৎ সংসারের বাঁকে
যে বসে বাজায় বাঁশি তার সাথে
বসে থাকি সারাটা দুপুর
যে নাচে নাচায় বাজায় নূপুর।
আমি বসে শুনি পাতা ও পবন
বলে সেই কথা লুপ্ত যে বন
তার হাহাকারে রচিত বচন
চোখবুঁজে চুপিসারে।
জননী গো, তোমার চরণে
হাসান হাফিজ
মা নাই যার
কিছু নাই তার-প্রবাদ
স্মৃতি এক দীর্ঘশ্বাস। অফুরান বেদনামন্থন।
নোনাগাঙ। অথৈ পাথার। চোখের। বুকের।
সময় যখন ছিল, মূল্য ঠিক বুঝি নাই।
পৃথিবীতে একমাত্র নিঃস্বার্থ সম্পর্ক যদি
একটাই, সেটা হলো সন্তান ও মায়ের।
নাড়িছেঁড়া অদ্ভুতসৃজন। রহস্যের সীমা শেষ নাই।
জননী গো,তুমি এক মন্দ্রমেঘ। প্রস্রবণও তুমি।
মেঘলাসন্ধ্যা কেঁদে রিক্ত বাৎসল্যধারায়।
সন্তান নিমজ্জমান সেই সুধা স্নেহের প্লাবনে।
জীবনের ধ্রুবতারা,সঞ্জীবনী শক্তি তুমি। তোমার চরণে
সন্তানের মুক্তি মোক্ষ পাতালখনিজে সুপ্ত অলক্ষ্যে বিরাজে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।