তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
নিষ্করুণ সময়ের কাছে
আর একটু সময় কি যায় না পাওয়া, আর একটু সময়-
পোড় খাওয়া এই অসমাপ্ত জীবনটা তাহলে আর একবার
ঘঁষে -মেজে নিতেম ঝকমকে করে, যত খুঁত আছে, যত আছে
ফাটল, আগাছায় ভরা ঝোঁপঝাড়গুলো সাজাতাম তাহলে
আর একবার নতুন করে, জীবনের ফুলের কেয়ারিগুলো
সাজাতাম বর্ণালী সম্ভারে!
হৃদয়ের জলসা ঘরে জ্বালাতাম চন্দ্রিমা দীপালোক-
তৃষ্ণাতুর সেই গানের কণ্ঠটাকে আর একবার সুরেলা পর্দায়
নিয়ে এসে ইথারে ইথারে মেঘমল্লারে দীপকে দহনে
উড়িয়ে দিতেম দূর-দূরান্তে, কখনো নিয়ে আসতাম
বুকের পোষা খাঁচাটিতে ‘অচিন পাখির’ আসা-যাওয়ার
সেই পুরানো খেলাঘরটাতে!
আর একবার দেখতাম সপ্তর্ষির নক্ষত্র খচিত সুনীল রাত-
বর্ষার প্রমত্ত মাতাল পদ্মা, কদম-কেয়া, শরতের শিউলী-সন্ধ্যা,
দেখতাম ধল পহরের উড়ে যাওয়া পাখ-পাখালি, ঘর মখো
সায়হ্নের বুনো হাঁস; হায় আর একটু সময়ের বড় প্রয়োজন ছিল
আমার! আর একটু সময় কি যাবে না পাওয়া? আর একটু সময়?
অলখ্যে বসে যিনি লিখছেন নাম ধাম সময়ের নিষ্করুণ সঙ্কেত
শেষ ঘণ্টা বাজবে বলে, তাঁকে বলি, ইচ্ছে করলেই তো মুহূর্তে
থেমে যেতে পার ওই কালির আঁচড়, ইচ্ছে হলেই তো ও শেষ
ছাড়পত্র চরম সমাপ্তির ডাক বাক্সে না-ফেলে স্থগিত রাখা যায়-
তাঁর ইচ্ছেতেই সব, যে ইচ্ছে না হলে একটি গাছের পাতা ও
ঝরে না, ফোটে না একটি ফুল, জীবন আসে না জীবনের কাছে!
বড় সাধ আমাদের আর একটু সময় নেবার!
বড় সাধ আমাদের আর একটু কথা বলার!
বড় সাধ আমাদের সন্তানদের ঘর-গৃহস্থালি দেখার!
তাই তো বিনীত এ কাঙ্গাল মন নিষ্করুণ সময়ের কাছে
বারবার বিনয়ী হয়- আনত প্রার্থনা জানায়!
ইদানীং সময়গুলো বড় বেশি খরস্রোতা মনে হয়,
কখন যে চোখের ওপর থেকে সাদা পালতুলে চলে যায়
কতো প্রিয়জন- মুছে যায় কতো নাম স্বজনের।
মূহূর্তের এক সমুদ্র-ঢেউ এসে মুছে নেয় বালুকা বেলায় লেখা
সেই প্রিয় নাম গুলি!
আজ বড় শঙ্কিত টালমাটাল আমার এ সাম্পান মন-
বারবার ছুটে আসি আমারই প্রজন্মের কাছে, ওদের বিম্বিত
আয়নায় নিজেরই অবয়ব খুঁজি ফিরে আসি আমারই
অসমাপ্ত পান্ডুলিপির কাছে, প্রতিটি ধূলিকণার কাছে,
বৃষ্টির হীরককণা চুম্বনের কাছে, মেঠোপথ-প্রান্তর-অরণ্যানীর কাছে!
যদি এতটুকু সময় পেতাম, যদি সময়ের ওই নিষ্করুণ চলমান
ঘড়ির কাঁটাটাকে আটকে রাখা যেত-
তাহলে আবার সাজাতাম জীবনের নিষ্ফলা ফুলের কেয়ারি,
অসমাপ্ত পান্ডুলিপি, অভুক্ত মানুষের মুখে তুলে দিতেম
দু’মুঠো সাদাভাত। আমি যে বড় দায়বদ্ধ এ পৃথিবীর কাছে,
আমার উত্তর প্রজন্মের কাছে, প্রতিটি নিশ্বাস-প্রশ্বাসের কাছে।
যদিও জানি, নিষ্করুণ সময়ের দ্রæত ধাবমান সাদা পাল
নিজস্ব গতিতেই বহমান-তবুও কাঙ্গাল মন প্রার্থনা যাঁচে
আর একটু বিলম্বিত সময়ের, বড় বেশি প্রয়োজন-
চায় আর একটু সময়!
সৈয়দ আসরার আহমদ
মনোভূমি
এই ভূমিতে ফসল ফলে না কখনও, চাষও করে না কোনও চাষি,
এই ভূমিতে বাস করে এক নালায়েক অবুঝ নাদান কাব্যচাষি!
ভুল করে সে,হররোজ ভুল! ভুল নিয়ে থাকে মশগুল!
তাই ভুলে ভরা তার জীবন! ফোটেনি তার ফুলবাগিচায় একটিও ফুল!
আজও বুঝে ওঠে না সে, কে যে পর,আর কে যে আপনজন!
ঘরকে পর করে,আর বারবার পরকে করতে চায় আপন!
এ ভাবে সে ভুলের সাগরে ডুবে আর ওঠে সারাক্ষণ!
ভুলে ভরা তার জীবন!
তাই কেউ নেই তার আপন!
ছেলে মেয়ে বউ ওদের ছেড়ে, পরোপকারে ছুটে যায় বারেবারে
কারো কথা শুনে না সেজন,
সে যে কাব্যচাষী কাব্যচষে সারাক্ষণ!
আলম মাহবুব
অসামান্য সুন্দরে
উন্মুল জীবনের বাউল বাঁশিতে
কবিতা উড়ছে হাওয়ায়
অন্ধকারকে স্বরলিপি করে
রাতের ঘুঙুরে তুমুল বৃষ্টিভাষা
আকাশে বাতাসে ছন্দের দোলা
রোদের ঝিলিকে
নদীর ঢেউয়ে
মেঘের ভেলায়
সকালের শিউলি তলে
কবিতা নাচে অশেষ আলোয়
নির্জন বনে স্বপ্নঘর
পত্রপল্লবে মুগ্ধতার শব্দ
বিষাদের মীড়ে
তীব্র কবিতা ডেকে উঠে
থৈ থৈ শ্লোগানে
পোড়ামাটির খা খা শহরে
বিকেলের পার্কে যুগল প্রজাপতি
ভালোবাসায় উৎফুল্ল কবিতা
অপর সময়ে দুরূহ পঙক্তির পাঠ
পৃথিবীর দাহপথে
ভীড় করে কবিতার শিশির
গোলাপ ফোটার শব্দ অসামান্য সুন্দরে।
আহসান সাব্বির
ওপার ভাবনা
হাতছানিতে ডাকছে মরণ যাচ্ছে জীবন অস্থাচল,
মিশবে দেহ মাটির সাথে থাকবে না আর অঙ্গে ঢল।
উড়াল দিলে জান পাখিটি থাকবে পড়ে নিথর শব,
থাকবে না আর রঙিন ভুবন সাঙ্গ হবে রঙ্গ সব।
মরণ পরে তোমার বসত আঁধার ঘেরা ওই কবর,
কেমন হবে সেই সে আবাস কেউ কি রাখে তার খবর?
বিচার হবে হাশর মাঠে সূক্ষ হবে সেই বিচার,
বান্দা পাপী বিকট স্বরে করবে ভয়ে জোর বিকার।
ক্ষুৎপিপাসায় করবে সেদিন পুঁজ মেশানো রক্ত পান,
তপ্ত লাভা তরল লোহায় দগ্ধ হবে দু’চোখ কান।
নরক আগুন ধরবে ঘিরে জ্বলবে দেহ তার ভিতর,
ফুটবে মগজ, পড়বে গলে ঝলসে যাবে রূহ-গতর।
অর্থ -প্রতাপ, গর্ব-প্রভাব সেদিন হবে সব বিফল,
সহায় হবে সেদিন শুধুই ধরায় করা নেক আমল।
থাকতে সময় কর্মে তোমার নাও হে গেথে দ্বীন-সিরাত,
সফল তুমি হবেই সেদিন পার হবে ওই পুলসিরাত।
ঈমান আনো আমল করো আমর বিল মারুফ আজ,
স্বর্গ পাবে রবের ক্ষমায় উঠবে মাথায় দীপ্ত তাজ।
দ্বীপ সরকার
আমিও তো মানুষ
বস্তা বস্তা নীল, কষ্টদের মীমাংসিত
অধ্যায়ের চিঠি পড়ে থাকে হলুদ খামে,
কেউ ছুঁয়েও দেখেনি বলে
বিভৎস দেখে ছায়াহীন রোদ,
ওপাশে পুরনো কষ্টের চাকু উন্মুখ থাকে,
কেটেকুটে পার হওয়া চাকু কখনো
আত্মীয় হতে পারেনা।
তবু সহ্যের আলোয় নিজেকে বিকশিত করি।
আমি আকাশ। চারপাশ দুরন্ত নীল।
আর কত বিষ ঢাললে নীলগুলো সাদা
হবে কার জানা আছে বলো?
অথচ এই তুমি আমার দিকে তাকিয়ে
বিষের পিয়ালা এগিয়ে দাও
আর ঢোকে ঢোকে তা গিলে ফেলি আমি,
আমিও তো মানুষ!!
ঘোড়াটেপা বন্দুকের নালায় সাইড ইফেক্ট পড়েনা বলে
গুলিবিদ্ধ করো আমাকে,
বিতাড়িত আদম হাওয়ার শরীরে আজও
কষ্টের গন্ধ শুঁকে বেড়ায় অবাধ্য নীল।
আর আমি!
আমি তো নগণ্য মানুষ,
তবুও তো মানুষ।
সুমন আমীন
চেতনার ফুল
আগামীর পথে এগিয়ে চলার এসেছে সময় আজ
ফসলের বুকে লাল সবুজের সুনিপুণ কারু কাজ।
তবুও তো দেখি পথের কিনারে ক্ষুধার্ত কে সে কাঁদে
মানবতাটাও ভয়ে ভয়ে থাকে ঘৃণ্য শোষক ফাঁদে।
বাঙালী এখন কোথায় হারালো দ্রোহ চেতনার সুর
কাপুরুষের মতো বেঁচে থেকে বলো আঁধার কী হয় দুর?
সবখানে আজ এত ভয় কেনো দেয়ালে যে ঠেকে পিঠ
আলোহীন এই অন্ধকারেও আশা জ্বলে মিট মিট।
আশা কেউ নয়, সেই চেনা মুখ বিদ্রোহী নজরুল
যুগে যুগে তুমি কান্ডারী হও, হও চেতনার ফুল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।