নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
পা হড়কালেই হতো বিষম বিপদ, হারলেই বিদায়! ড্র করলে পরের ধাপে খেলার ভাগ্য ঝুলে থাকত অনিশ্চয়তার সুতোয়। সউদী আরবের বিপক্ষে হারা আর্জেন্টিনার সামনে জেতার বিকল্প ছিল সামান্যই। মেক্সিকোর বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়নদের হাতেই ধরা দেয় কাক্সিক্ষত সেই জয়। গতপরশু রাতে লুসাইল স্টেডিয়ামে রেকর্ড দর্শকে ঠাসা গ্যালারির সামনে মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। বাঁচিয়ে রাখে তারা শেষ ষোলোয় খেলার আশা। ৬৪ মিনিটে বাঁ পায়ের মাটি-কামড়ানো এক শটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন লিওনেল মেসি। ৮৭ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করা গোলটি এসেছে বক্সের ভেতর থেকে তরুন এনজো ফার্নান্দেসের অসাধারণ বাঁকানো শটে। তার গোলেও সহায়তা মেসিরই। এমন একটি জাদুকরি রাতের পর আর্জেন্টিনার মতো উচ্ছ¡াসে ভাসছেন মেসি, ডি মারিয়া, ফার্নান্দেস আর কোচ লিওনেল স্কালোনিরা।
মেসির মতে, সময়ের প্রয়োজনেই জ্বলে উঠেছে দল। দ্বিতীয়ভাগে নিজেদের ফিরে পেয়ে বেশ উচ্ছ¡সিত আর্জেন্টাইন মহাতারকা। ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত খেলে সেরার পুরস্কারও জিতে নেন তিনি। পরে সংবাদ সম্মেলনে রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী বললেন, মেক্সিকোর মতো দক্ষতাসম্পন্ন এক দলের বিপক্ষে পরিপূর্ণ পারফরম্যান্সের এক ম্যাচ খেলেছেন তারা, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা পুরো মাঠ জুড়ে খেলেছি। আমরা যেন সেই সময়ে স্বরূপে ফিরি। তারপর ফলাফল আমাদের জন্য উচ্ছ¡াস নিয়ে আসে, যা আমাদের প্রয়োজন ছিল। নিজেদের স্থির করার জন্য আমাদের এই ম্যাচ জিততেই হতো।’ দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে এনজো ফার্নান্দেসের করা গোলটিও ছিল দেখার মতো। মেসির পাস পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে এক ঝটকায় সামনের প্রতিপক্ষের বাধা এড়িয়ে নেওয়া শটে বল বাঁক খেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া ওচোয়াকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় কাক্সিক্ষত ঠিকানায়। আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম গোলটি এর চেয়ে সুন্দর হয়তো হতে পারত না ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের জন্য। তাইতো তরুন এই সতীর্থের জন্যও উচ্ছ¡াসিত মেসি, ‘আমি এনজোকে (ফার্নান্দেস) ছোট বেলা থেকেই চিনি। সে দুর্দান্ত খেলোয়াড়। তার গোল করার দক্ষতাও অসাধারণ। সুযোগ পেলে সে আরো ভালো ভালো গোল করবে।’ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য, ‘এভাবেই বিশ্বাস রাখুন, হতাশ হতে দেবো না।’
মেসির সঙ্গে খেলা, তার পাস থেকে গোল, ফার্নান্দেসের মনের অবস্থাটাই বা কেমন? ‘আমরা দুজন একই সঙ্গে আর্জেন্টিনা দলে খেলছি’- কাতার বিশ্বকাপে পা রাখার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল ফার্নান্দেসের একমাত্র সুখ! বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেয়ে বেনফিকার এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের সুখের সংজ্ঞাটা কিছুটা পাল্টেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘মেসির সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলছি, এটাই আমার গর্ব!’ আর এবার নতুন করে সুখের সংজ্ঞা লিখলেন ফার্নান্দেস- বিশ্বকাপে একটি গোল করার শৈশবের স্বপ্ন যে পূরণ হয়েছে তার। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘আমি সব সময়ই এই জার্সি পরে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। আজ আমার বিশ্বকাপে একটি গোল করার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি আজ খুব খুশি। দলের এটা প্রাপ্য।’
দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল পিঠ; হারলেই যে নিতে হতো বিদায়! এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে কাক্সিক্ষত জয়ই ধরা দিয়েছে আর্জেন্টিনার হাতে। তাতে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছেন দলটির সমর্থকরা। সবাইকে খুশি করতে পেরে আনন্দে আত্মহারা অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ম্যাচ শেষে টিওয়াইসি-এর সঙ্গে আলাপকালে ডি মারিয়া বলেন, সবাইকে উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিতে পেরে বেশ ভালো লাগছে তার ও দলের, ‘খুবই খুশি, এই দলটির জন্য আনন্দিত। আমরা খুবই ভালো কাজ করছিলাম, কিন্তু একটি ম্যাচে হেরে যাই। সেখানে যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলাম, হয়নি। তবে আজকে আমরা মানুষের জন্য, নিজেদের জন্য, নিজেদের পরিবারের জন্য আনন্দ নিয়ে আসতে পেরেছি। অন্য দিন তারা এসেছিল এবং হতাশ হয়েছিল, তাই আজ আমি সব কিছুর জন্য খুবই খুশি। ...অনেক বছর ধরে আমরা খেলছি। লড়াই চালিয়ে গেছি, সবসময় চেষ্টা করেছি সবকিছু উজাড় করে দেওয়ার। আজ কাজে লেগেছে। আমার মনে হয়, সবার জন্যই এটা শান্তির।’
শরীরী ভাষাতেই স্পষ্ট ছিল, কতটা চাপে আছে লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়নরা। সতীর্থরা যেভাবে চাপ সামাল দিয়ে লড়াইয়ে করেছেন তাতে মুগ্ধ ডি মারিয়া, ‘আজকে আমরা ভালো একটি প্রতিপক্ষের সঙ্গে দারুণ ম্যাচ খেলেছিল। আমরা জানতাম, কঠিন একটি ম্যাচ হবে, খুব বেশি গোল পাব না। তবে এটা ছিল দেখার মতো এক লড়াই, যা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।’ চাপের পারদ ছিল চ‚ড়ায়। থাকাটাই স্বাভাবিক, হারলেই যে বাদ পড়তে হবে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও দিক হারায়নি আর্জেন্টিনা। ম্যাচ শেষে কোচ লিওনেল স্কালোনি বললেন, ভয়ঙ্কর কঠিন ম্যাচে মেসি-ডি মারিয়াদের খেলা নিয়ে তিনি গর্বিত। কঠিন ম্যাচে চাপে ভেঙ না পড়ায় ফুটবলারদের স্তুতি ছিল স্কালোনির কণ্ঠে। ম্যাচ শেষে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনা কোচ বললেন, দলের সবাইকেই সর্বোচ্চ মার্ক দেবেন তিনি, ‘তাদের খেলা দেখা দারুণ। যাদের এই দলে আস্থা রাখে না তারা আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকে সত্যিই ভালোবাসে না। ভালো খেলছে, খারাপ খেলছে, এটা অবিশ্বাস্য যে তারা সবকিছু ফেলে দিয়ে জাতীয় দলের জার্সিকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই জার্সি পরে খেলা অন্যান্য দলের মতো নয় কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এটি এমনই। যদি আমাকে প্রতিটি খেলোয়াড়ের খেলা বিশ্লেষণ করতেই হয়, তবে আমি তাদের সর্বোচ্চ গ্রেড দেব। কারণ তারা একটি দুর্দান্ত প্রতিদ্ব›দ্বী দলের বিপক্ষে একটি ভয়ঙ্কর কঠিন ম্যাচের মুখোমুখি হয়েছিল, যা ছিল বিশাল... এই ম্যাচটি খেলা সহজ নয়, তারা যা করেছে তাতে আমি গর্বিত এবং রোমাঞ্চিত।’
শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিতে আরেকটি পরীক্ষা উতরাতে হবে আর্জেন্টিনাকে। আগামী বুধবার গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে তারা লড়বে রবের্ত লেভান্দোভস্কির পোল্যান্ডের বিপক্ষে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।