নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রথমার্ধে ৫ মিনিট যোগ করা সময় দিয়েছেন রেফারি স্লাভকো ভিনচিচ। ভাগ্যিস, অফসাইড থেকে আর গোল হয়নি। নইলে অফসাইড থেকে বাতিল হওয়া গোলের সংখ্যা হয়তো যোগ করা সময়কেও ছাপিয়ে যেত!
গতকাল লুসাইল স্টেডিয়ামে চোখ রেখে থাকলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন কোন ম্যাচের কথা বলা হচ্ছে। কাতার বিশ্বকাপে এদিন এই স্টেডিয়ামে সউদী আরবের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির গোলে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও ম্যাচটি ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় শিরোপা প্রত্যাশিরা। অথচ এই অর্ধে আরও তিনটি গোল পেতে পারত লিওনেল স্কালোনির দল। কিন্তু অফসাইডের কারণে তিনটি গোলই বাতিল হয়।
বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে অফসাইডের কারণে একটি গোল বাতিল হলেই আলোচনা শুরু হয়। সেখানে তিন-তিনটি গোল বাতিল! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠাই স্বাভাবিক। অনেকে জানতে চাইছেন, বিশ্বকাপে এক ম্যাচে অফসাইডের কারণে সর্বোচ্চ কতটি গোল বাতিল হয়েছে? কিংবা এক অর্ধে অফসাইডের কারণে এটাই সর্বোচ্চসংখ্যক গোল বাতিলের রেকর্ড কি না? পরিসংখ্যান খুঁজে এই তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সউদী আরবের হাই-লাইন ডিফেন্সের কারণে প্রথমার্ধেই একটি নজির গড়েছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে মোট ৭ বার অফসাইড হয়েছেন আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়েরা। ২০০২ বিশ্বকাপের পর এমন নজির এই প্রথম। ২০ বছর আগের বিশ্বকাপে স্পেন-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে ৯ বার অফসাইড হয়েছিলেন স্প্যানিশ খেলোয়াড়েরা। এরপর প্রথমার্ধে ৭টি অফসাইড হওয়ার নজির এই প্রথম।
ম্যাচে যেভাবে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল বাতিল হয়েছে, তা জানিয়ে রাখা ভালো। ২২ মিনিটে পাপু গোমেজের পাস ধরে গোলকিপারকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। বল জালে জড়ালেও পরিষ্কার অফসাইড ছিলেন। ৬ মিনিট পর সউদী হাই-লাইন ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে রদ্রিগো দি পলের পাস পেয়ে গোল করেন মার্তিনেজ। কিন্তু সউদী ডিফেন্ডারা অনেকটা এগিয়ে রক্ষণ সামলানোয় একটা সুবিধাও পেয়েছে আরব দেশটি। মুভ করতে গিয়ে অফসাইডের কথা আর মাথায় রাখেনি আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগ। মার্তিনেজ (২৮ মিনিট) এ যাত্রায়ও সেভাবেই অফসাইড হন। সেকেন্ডখানেক সময় পরে দৌড় দিলেই গোলটা বৈধ হয়ে যেত। ৩৪ মিনিটে সউদী আরব গোলকিপারকে আবারও একা পেয়ে যান লাওতারো মার্তিনেজ। স্টেপ ওভার করে গোল করলেও আবারও অফসাইড হন। আবারও আগেভাগে দৌড় শুরুর খেসারত দিতে হয় আর্জেন্টিনা স্ট্রাইকারকে।
বিশ্বকাপে কোনো অর্ধে এটাই সর্বোচ্চ অফসাইড হওয়ার নজির আর্জেন্টিনার। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রথমার্ধে, ১৯৮২ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে এবং ১৯৮৬ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে ছয়বার অফসাইড হয়েছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। অফসাইডের এই নথিপত্র দেখে প্রশ্ন উঠতে পারে, বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ অফসাইড হয়েছে কোন দেশ? উত্তর হলো ১৯৮২ বিশ্বকাপে কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচে রেকর্ড ২০ বার অফসাইড হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। এদিন যেন সেই ম্যাচেরই ছায়া সংস্করণ হলো লুসাইলে। সেদিন কুয়েতের খেলোয়াড়দের হাই-লাইন ডিফেন্সে খেলিয়েছিলেন কোচ কার্লোস আলবার্তো পারেইরা। এই জাল পেতেই তিনি ইংলিশ খেলোয়াড়দের ২০ বার ফাঁদে ফেলেছিলেন। সউদী আরবের কোচ হার্ভি রেনাদও ঠিক একই জাল পেতে আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগকে ফাঁদে ফেলেছেন।
এই ম্যাচে দুই অর্ধ মিলিয়ে মোট ১০ বার অফসাইড হয়েছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। সউদী আরব শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয়ে ম্যাচটি জিতে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অঘটনের জন্ম দিয়েছে। তবে একটি বিষয় না বললেই নয়, সউদী হাই-ডিফেন্সের ছলচাতুরী বুঝে মুভগুলো সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় দেরিতে করলেই অফসাইডে বাতিল হওয়া তিনটি গোলই পেত আর্জেন্টিনা। তখন আর এই অঘটনের জন্ম হতো না।
এমন দিনে কিছুটা বাড়তি আক্ষেপ করতেই পারেন মেসি, বিশ্বকাপটা নির্ধারিত সময়ে হলে বয়সটা আরও ছয় মাস থাকতো তার। আর সেক্ষেত্রে রেকর্ডটাও হতো আরও দৃঢ়। তবুও নতুন ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে পঞ্চম বিশ্বকাপে খেলছেন এ মহাতারকা। এছাড়া পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে ৪টি বিশ্বকাপে গোল দেওয়ার রেকর্ডও গড়েন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
ম্যাচে বিপক্ষে শুরুতেই গোল পেয়েছেন মেসি। ম্যাচের দশম মিনিটে সফল স্পট কিক থেকে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। তাতেই আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চারটি বিশ্বকাপে গোল করলেন অধিনায়ক।
এর আগে চারটি বিশ্বকাপে গোল দিয়েছেন পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে এবং দুই জার্মান তারকা উই সিলার ও মিরাসøাভ ক্লোসা। তবে এ চার তারকাই গোল দিয়েছেন টানা চারটি বিশ্বকাপে। এবার অবশ্য এ রেকর্ডটা এককভাবে নিজের করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে রোনালদোর। এর আগে চার জন খেলোয়াড় ছিলেন যারা পাঁচটি করে বিশ্বকাপ খেলেছেন। মেক্সিকোর আন্তনিও কারবাহাল, জার্মানির লোথার ম্যাথিউজ ও মেক্সিকোর রাফায়েল মার্কুয়েজ এতো দিন ছিলেন এ তালিকায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন মেসি। এছাড়া ইতালির জিয়ানলুইজি বুফনও ছিলেন পাঁচটি বিশ্বকাপে। তবে প্রথমবার মাঠে নামা হয়নি তার।
পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলাকালিন সময়ে বুফনের বয়স ছিল ৩৬ বছর, কারবাহাল ও ম্যাথিউজের ছিল ৩৭ বছর এবং মার্কুয়েজের ছিল ৩৯ বছর বয়স। যেখানে ৩৫ বছর বয়সেই এ রেকর্ডটি গড়লেন মেসি। বিশ্বকাপ যদি নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ জুন-জুলাইয়ে হতো, তাহলে বয়সটা আরও ছয় মাস কম থাকতো মেসির। সেক্ষেত্রে ৩৪ বছর বয়সেই রেকর্ডটা গড়তে পারতেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। একই সঙ্গে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ডটিও করলেন মেসি। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মধ্যে মেসির সমান ৪টি করে বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা ও সাবেক সতীর্থ হ্যাভিয়ের মাসচেরানোর পাশে ছিলেন তিনি।
এছাড়া আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডের খুব কাছে রয়েছেন মেসি। যা মাঠে নামার পরই বিশ্বকাপের মঞ্চে ম্যাচ খেললেন ২০টি। আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিক ম্যাচ খেলেছেন সাবেক অধিনায়ক কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা। বিশ্বমঞ্চে ২১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তবে জার্মানির লোথার ম্যাথিউজ সর্বোচ্চ ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।