শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
একটি পতাকার জন্য
আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক
কত ঘাস দিয়েছে প্রাণ
কত নদী ডেকেছে বান
মিলন মোহনার ঢেউ
ভেঙেছে কত পাখির নীড়
কত শত মেহেদী রাঙা হাত
মেখেছে লাল রক্ত
মিশে গেছে কত ফুলের বাগান
পথের ধূলায়
ধর্ষিতা নারীর বুকফাটা আহাজারী
ছেলেহারা মার করুণ আর্তনাদ
বোনের পরনে বিধবার শাড়ি
রাজপথে রক্তের বন্যা
শুধুই একটি পতাকার জন্য
লাল সবুজ পতাকা।
নিজের অস্তিত্বে আমি
তারেক আমিনুর রহমান
ভালোবাসি তোমাকে
কথাটা সর্বৈব মিথ্যা
আমার নীল অনুভূতির বিষাক্ত প্রলেপের পর
যার কোন অস্তিত্বই নেই।
আমি তোমাকে ভালোবাসি না
ভালোবাসিনি
ভালোবাসবোও না
তাই আতংকিত দুপুরে ঘুরে বেড়াই
বিলাসী রোদ মাথায় নিয়ে
শান্ত বিকেলে ভয়ার্ত এ দুচোখ দেখে
বীভৎস নারকীয়তা।
এড়িয়ে যাই সংগোপনে,
যদি কেউ বলে ওঠে কাপুরুষ!
সবুজের সজীবতা হয়ে ওঠে ক্লান্তিময়
আলোর উজ্জ্বলতাকে এফিডেভিট করে নিই
অন্ধকারের রাখী বন্ধনে।
সবার মতো তোমাকে দেইনি কোন উপহার
যা প্রেমকে স্মৃতির রোমন্থনে সহায়তা করে।
হয়তো এসবের প্রতি আস্থা আনতে,
আমার ¯œায়ু হয়নি সজাগ।
আর তাই কোন উপহার নিয়ে
তোমাকে দেখতে যাইনি। মূলত আমি
তোমাকে দেখতে যাই না
তোমাদে দেখতে যাইনি
তোমাকে দেখতে যাবোও না।
ব্যর্থ উপেক্ষায় তুমি ফুসছো যমুনার মতো,
বারবার চেয়েছো দূরে চলে যেতে-
আমি নির্বিকার যাযাবরের মতো ছিলাম
ঈশ্বরের মেষ পালকের ভূমিকায়।
আবার এসছো কাছে...
তবু যেনো নিরাকার শয়তানের
মূর্তিতে ছিলাম অবিচল।
তুমি শেষবার বলেছিলে
আমি বোধকরি সম্পন্ন মানুষ নই!
আসলে অনুরাধা, আমি কোনদিই
সম্পন্ন মানুষ নই
সম্পন্ন মানুষ ছিলাম না
সম্পন্ন মানুষ হবোও না।
যুদ্ধ ছিলো স্বাধীনতার
এস এম শহীদুল আলম
যুদ্ধ ছিলো শিকল ভাঙার মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে,
যুদ্ধ ছিলো আকাশছোঁয়া সত্য-ন্যায়ের পক্ষে।
যুদ্ধ ছিলো আঁধার কেটে নতুন সূর্য ওঠার,
যুদ্ধ ছিলো বাগানজুড়ে পুষ্পকলি ফোটার।
যুদ্ধ ছিলো ঐতিহাসিক পলাশরাঙা ভোরের,
যুদ্ধ ছিলো অধিকার ও ভালোবাসার দোরের।
যুদ্ধ ছিলো সরল পথে তিতুমীরের বংশের,
যুদ্ধ ছিলো ঝড়-তুফানে অমানিশা ধ্বংসের।
যুদ্ধ ছিলো তখ্ত নড়ার শাসন-শোষণ পতনের,
যুদ্ধ ছিলো স্বপ্ন বাঁচার মানিক-সোনা রতনের।
যুদ্ধ ছিলো অবক্ষয়ের লাগাম টেনে ধরার,
যুদ্ধ ছিলো বাংলাটাকে শত্রু মুক্ত করার।
যুদ্ধ ছিলো বাঙালিদের সুর ছড়ানো বাঁশির,
যুদ্ধ ছিলো স্বাধীনতায় চাঁদের মতো হাসির।
যুদ্ধ ছিলো ডানা মেলার বন্দি খাঁচার পাখির,
যুদ্ধ ছিলো মুক্তিকামী ঝর্ণা সাগর ও আঁখির।
যুদ্ধ ছিলো ছন্দমাখা গান-কবিতা গল্পের,
যুদ্ধ ছিলো সূর্যসেনার বিজয়গাঁথা কল্পের।
যুদ্ধ ছিলো কথা রাখা রক্তস্নাত ভায়ের,
যুদ্ধ ছিলো নদীর বুকে পাল তোলানো নায়ের।
যুদ্ধ ছিলো মা-মাটি বোন দেশ-জাতিকে রক্ষা,
পাকপশুরা হয় কুপোকাত অবশেষে অক্কা।
যুদ্ধ ছিলো বীর সেনাদের স্বাধীনতার জন্য,
লাল-সবুজের পতাকাতে আজও তারা ধন্য।
একান্ত নির্যাসে বিজয়ের রঙ
জাহিদ হোসেন
চোখের জানালায় বিজয়ের রঙ দেখে দেখে
নদীহরণ করে খোলা লজ্জার আকাশ
সেই আকাশে কি আজও চাঁদ ওঠে-
আজও হয় ভোর...
তাহলে হাত ধরাধরি করে চলো আজ সারাদিন
মাতাল হাওয়ায় শুনি লাল সবুজের গান।
মুক্ত খাঁচার বন্দি পাখি
জাফর পাঠান
মুক্ত খাঁচায়- বন্দি পাখি- অনুচ্চ কণ্ঠস্বর
উপরে শকুন-নিচে শিয়াল- কাঁপে লস্কর,
লোকালয়ে চলমান লোক- শঙ্কার দোলক
অদৃশ্য ভয়ে ভীত ভূমিতল- ভীত ভূলোক।
মুক্তিকামীরা চেয়েছিলো- স্বাধীন স্বপ্নস্বাদ
টুটাতে চেয়েছিলো পথে পাতা দুর্মদ ফাঁদ,
আঁকবে আলপনা- রাজমার্গে রাঙ্গা ললিত
ফুলেরা তুলবে হিন্দোল ঊর্মিল উদ্বেলিত।
পাখা থাকতেও উড়েনা- ব্যথাকাতর পাখি
ইচ্ছা থাকলেও দেখে না- খুলেনা কভু আঁখি,
শিকারী সদা প্রস্তুত- বন্দুকে কার্তুজ ভরে
নীলিম ব্যদনায়- বিজয় চোখে অশ্রু ঝরে।
প্রাচীন সীমান্ত ভেঙে- নব সীমান্ত উদ্ধার
শোষকদের হটিয়ে- শোষিতেরা কর্ণধার,
ভূমি মুক্ত হলেও আসেনি মৌল স্বাধিকার
চলছে যুদ্ধ, এখনো যে অধরা অধিকার।
রুবাই
ওরা রোহিঙ্গা
হোসেন মাহমুদ
১.
চোখ খোলা আছে? তুমি কি দেখছ ওরা কারা ওই মরে
দেখ ওই কারা ছুটে আসে ভীত দু’চোখে অশ্রু ঝরে
ওরা রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে ছেড়ে আসে ভিটে মাটি
অহিংসাবাদী পিশাচের দল ওদের হত্যা করে।
২.
খোলা আকাশের নিচে ওরা ওই বিপন্ন অসহায়
দেখ কারা ওরা কেঁদে ফেরে আর শোকে বুক চাপড়ায়
দুধের শিশুকে আছড়ে মেরেছে পুড়িয়ে দিয়েছে ঘর
সবহারা ওরা পাশে এসে কেউ দাঁড়ানোর নেই হায়।
৩.
কর্তিত মাথা আর পোড়া লাশ পড়ে আছে চারদিকে
মুসলমানের রক্ত ঝরাবে সে কথা নিয়েছে শিখে
মিয়ানমারের খুনি দল ওরা মানবতাহীন পশু
মা ও বোনের পবিত্র দেহে অপমান দেয় লিখে।
৪.
মধ্যযুগীয় পাশবিকতার নিঠুর শিকার ওরা
যুগ যুগ ধরে হিংসা ঘৃণার কঠিন শিকল পরা
ওদের মাতমে আকাশ বাতাস বেদনায় থমকায়
অসহায় ওরা ওদের পৃথিবী সঘন আঁধার ভরা।
বেদনার বাকিটুকু
হাসান হাবিব
ভালোবাসার একটা নিয়ম আছে;
এই যেমন ধরুন- পোড়োবাড়ি, বেঁচে
যাওয়া জিনিসপত্র, ভাঙ্গাঘড়ি, ছবি, আসবাবপত্র
এসব কিছু ভালোবাসা যায়
যেমন ধরুন একদিন
প্রিয়ার বোনা বেগুনিরঙের রুমাল দেখে
আপনার লোভ হয়েছিল
আজ হয়তো ক্যাম্পচেয়ারে বসে ভাবছেন
ভালোই ছিল সেদিন (!)
আর কিছু ভাবলেন না-
একটু পরেই দেখবেন
কালো বিড়ালটা বাইরে যাবার জন্য কিভাবে ছুটছে
আজ আর কাগজ কলম নেই কাছে
শুধু এক-রাশ দীর্ঘশ্বাস
কিভাবে কথা বলে যায়
শুধু আপনিই বুঝলেন-
আর কেউ না...
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।