শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ফিরে চাই হেমন্তকে
নূর মোহাম্মদ দীন
হেমন্তে চৈত্রের আবহাওয়া!
ভোরের শিশির তপ্ত রোদে শুকোয়
বিষণœ সকালে।
ঝরঝর করে বোঁটা খসে পড়ে সবুজের কুঁড়ি;
বাতাসে জলীয়কণার অভাব;
চোখ মেলে তাকানো যায় না হেমন্তের চোখে Ñ
বিষণœ মন হেমন্তের।
পালিয়ে গেছে ঘাসফড়িং, প্রজাপতিরা
হেমন্তের দেশ ছেড়ে!
দখল করেছে চৈত্রের আবহাওয়া।
উদোম গায়ে তবু দরদর ঘাম ঝরে
মড়মড় শব্দে চূর্ণ হয় নবান্নের মাঠ Ñ
চারদিকে কোলাহল আবহাওয়া পরিবর্তনের।
তবু আশায় বুক বাঁধি প্রতীক্ষার শেষ প্রহরে
হেমন্তকে ফিরে পাবার।
হেমন্তের এই বেলা
আকিব শিকদার
যখন নবীন কিশোর ছিলাম হেমন্তের এই বেলা
কমলা রোদে তোমার সাথে সখী হয়েছে কত যে খেলা
আমের বনে বাতাস উঠতো দুলে
শালিক শ্যামা গাইতো কণ্ঠ খুলে
অঙ্গন কোণ হাসতো শিউলি ফুলে
বৈচি ফুলে মালা গেঁথেছি মেলাÑ
খেলার সাথী কেবল তুমি আমি, খেলনা মাটির ঢেলা।
এখন, পাকা ধানের ক্ষেতে ধুলোয় ঢাকা পথের মাঝে
ক্লান্ত বাতাস উদাস ওড়ে, জীর্ণ পাতার গিটার বাজে
শিশির সিক্ত শান্ত শীতল ভোরে
দুপুর রোদ্রে ক্লান্ত বিজন ঘরে
যদি আমায় হঠাৎ মনে পড়ে
জানালা পাশে বসিও একেলাÑ
তুমি আমি দুই জগতের প্রাণী, হেমন্তের এই বেলা।
নবান্ন দেশে
আবু ইসহাক হোসেন
ফেরারি হেমন্ত শীতের শাসনে দেশান্তরি
সোনালি ধানের শীষ বুলবুলির নির্মম চঞ্চুর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত
এভাবে এ দ্রাবিড়-পললে মন্বন্তর চলবে বলো আর কতো
বিরাণ মাঠের দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়াতে হবে আর কতোকাল ধরি?
চেতনার হেঁসেল ঘর মুগ্ধ স্বপ্ন-পিঠাপুলির সুগন্ধে
ঘরে ঘরে উৎসবÑ সুদূরÑশুধু কথার কচকচানি
বিজ্ঞাপনের ভূত ঢুকে গেছে ক্ষেতের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে
ইঁদুরেরা ধান কেটে শুধু ভরছে নিজের গোলাখানি।
সময়ের নিয়মে দিনরাত আসে যায় ঋতুও বদলায়
বদলায়না শুধু দুখিনী বাংলার পলিমাটির মাঠের ভাগ্য
আমরাও এমন বেকুব বুঝতে শিখিনি কিসে নিজের আরোগ্য
চতুর ভেল্কিবাজেরা চেতনার শিকল পরিয়ে আমাদের বাঁদর নাচায়!
স্বপ্ন, তবুও স্বপ্ন দেখি নবান্ন্ আসবেই এই নবান্নের দেশে
বঙ্গবন্ধুর মতো ঠিকই কেউ একজন দাঁড়িয়ে যাবে এই দেশকে ভালোবেসে।
আজ এই হৈমন্তিক বিকেল
কুতুবউদ্দিন আহমেদ
আজ এই হৈমন্তিক বিকেলে একটি শালিকের দিকে
তাকিয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে যাই
প্রেমের পরিযায়ী সে, সে কেন
বুক কাঁপিয়ে দেয়া এমন দিশেহারা উ™£ান্ত!
উঠোনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সুপুরি গাছটার
ঝিরঝিরে ডালে চুপচাপ বসে আছে সে, চক্ষু বিস্ফারিত
পক্ষিকুলর নীরব ভাষায় সে বলতে চায়
সে এসেছে দুঃখের মংডু থেকে যেখানে
মানুষের জমানো ভালোবাসা পুড়ে যাচ্ছে খঁ-খাঁ অগ্নিতে
সঙ্গীকে ওরা হত্যা করেছে, ওকেও ওরা হত্যা করতে চেয়েছিল।
হেমন্ত বালিকা
শেখ হামিদুল হক
নবান্নের চাদর জড়িয়ে ভোরের শিশিরভেজা ঘাসের বুকে,
শাপলা ফুলের মালা হাতে শিউলিঝরা হাসি নিয়ে
তুমি যখন দাঁড়িয়ে ছিলে, মুগ্ধ চোখে বাংলার অপরূপ
সৌন্দর্যের মদিরা পান করতে করতে ফিরে গিয়েছিলাম আমার
কিশোরবেলায়। কত সকাল হারিয়েছি মালা বদলের মধুর খেলায়,
আজ জীবনের প্রান্ত সীমায় এতটুকু বদলায়নি প্রকৃতির
সোনালি সকাল। ভোরের প্রথম সূর্যের আলো কবুতরের পাখায়
ভর করে নেমে এসে লুটোপুটি খায় তোমার
চরণতলে, তৃপ্তির উষ্ণ পালকে তোমার হাতে রাখি আমার হাত।
দিনান্তে হেমন্তের বৈকালিক অরণ্যে মিষ্টি রোদের বিদায়ী
ভালোবাসার মাঝে সবুজ শাখায় চলে পাখিদের উল্লাসের মাতামাতি,
আবেগের হাত ছেড়ে তুমি, খুশির জ্যোৎস্নায় ছুটে
বেড়াও অরণ্যের খেয়ালি ছায়ায়, উচ্ছ্বাসের গতি থেমে যেতে
সোহাগী হাত ধরে নিয়ে যাও তুমি স্বর্ণালী
সাজে ধান বধূয়ার কাছে, উপভোগের শীতল চোখে
ক্ষুধার্ত শালিকের মুখে দেখি ঘাসফড়িঙের অসহায়
আত্মসমর্পণ। হেমন্ত বালিকা বার বার ফিরে এসে
রাঙিয়ে দাও সোনার বাংলার প্রকৃতিকে।
ও প্রহরী
তানি হক
চোখ হতে খুলে রাখো বিষাদ সপ্তক
দেখো,
গিরিখাতের অন্ধকারে ফুটছে আজ
সুমিষ্ট সুবেহ
তুমি অপলক হও, ঠোঁটে মেখে নাও
খড়ের আলতা
জেগে উঠছে, সুরমা দানার আকাশে
সুস্মিত হেমন্তের আবেগ
নিরাভরণ নীহারকণা ।
হেমন্তের পাতাঝরা দিন
শাহরিয়ার সোহেল
হেমন্তের পাতাঝরা সোনালি দিনের মতো
ঝরে পড়ছি ক্রমশ সূর্যের হাতছানি
সূর্যের চোখে-মুখে ঝাঁক ঝাঁক বিষের বারুদ
ঢলে পড়ি ঝর্ণার মতো বিবিক্ত ঔরসে
পাহাড়ের থেকে উঁচু হতে পারিনি
ঢালু স্রোত সমতল থেকে নিম্নভূমিতে প্লাবিত
বৃষ্টির ফোঁটা আমাকে কাঁদায়
জীবন ঘষে জ্বলে ওঠে তীব্র আগুন
মুখগহ্বর থেকে প্রকাশিত শব্দ প্রতিটি পরিহাস
এ জীবন ভোর নয় শুধু বিভীষিকাময় তুমুল রাত
হা ঈশ্বর, কত জঘন্য হত্যা বিরান প্রান্তরজুড়ে
হাহাকারের ঢেউগুলি সাপের ফণার
মতো ধেয়ে আসে তেড়ে
আকাশের তারাগুলি ঊর্ধ্বাকাশে মিটি মিটি জ্বলে
অনেক উঁচুতে চোখ দুর্বল পা কঠিন মাটিতে
বেলুনের মতো উড়বো কবে নীরবে নিভৃতে
উজ্জ্বলতা ধূসর ক্রমশ কেবল পরিহাস
স্তব্ধ হয়ে আসে পৃথিবীজুড়ে সবুজ প্রশ্বাস
নিজের ভেতরে নিজে ধসে পড়ি বারবার
হেমন্তের পাতাঝরা গ্লানি ঝরে পড়ে শরীরে আমার
হেমন্তের শুভ্রতায় যদি
শাওন আসগর
প্রচ- আবেগে সকালের সূর্য চলে রাত্রির সিথানে
হেমন্তের স্নিগ্ধতায় ক্লান্তি পালায়
কিন্তু আকাশের সুনীল শুভ্রতায় তোমার লুকোচুরি
তবু তোমার প্রেমের অপেক্ষায় অবেলায় হাঁটি।
আমার সব নীল কষ্ট আর প্রতীক্ষার অনল
তোমার দেহের সুশীতল জলে যায় হারিয়ে
পুলকিত জোস্নার কিরণে
ভালোবাসার আকাক্সক্ষা বেগবান হতে হতে
অনুপম রাশি রাশি তারকামেলায় ঘুরপাক খায়
তবু তোমার লাবণ্যের বাগানে শেফালির গন্ধ খুঁজি।
কিন্তু তুমি স্পর্শহীন অবগুণ্ঠনে খেলা করো
আমার চোখে উদাস সফেদ কাশবন দোলা দেয়
আমি প্রভাতের শিশির প্রপাতে নির্মল গান শুনে
বেঁচে উঠি শেফালির আয়ুর্বেদিক গন্ধে।
ভেতরের ইচ্ছেগুলো মিছিলে যায় মেঘের সাথে
আমি বারবার শিউলি ঝরার ক্ষণে
তোমার জন্যে নিতান্ত খড়কুটোর মতো বেঁচে থাকি
একাকী পড়ে থাকি অমরাবতী মালতীকন্যা
টগর জুঁই ফুলের খোঁপা নিয়ে যদি
তুমি ফিরে আসো কোন সূর্যস্নানের কালে।
চলো হেমন্তের সোনালী ফসল ঘরে তুলি
তাহ্মীদুল ইসলাম
ক] হেমন্তের সোনালী ফসল চলো ঘরে তুলি,
সময় কথা বলে সভ্যতার সাথে,
আমি ও তুমি সমুদ্রের মতো দুলি,
সমুদ্র আকাশকে বুকে নিয়ে দুলে
সহ¯্র বছর ধরে স্বপ্ন দেখি, বিশ্বকে সাজাই,
হেমন্তের সুরেলা শস্যের ঘ্রাণে হৃদয় মাখি
খ] রজনীগন্ধার নরম শরীরের কারুকাজে ভ্রমর মাতাল,
কৃষাণ ও কৃষাণীরা কাইচা হাতে পাকা ধান কাটে,
গুনগুন গান গায়, গোলাভরা ধান, গলাভরা গান,
জীবন নতুন রোমান্সের সুর পায়,
নক্ষত্রেরা কনসার্ট বাজায়
নাকের নোলক দোলে,
দোলে নৌকাগুলো জলতরঙ্গের উল্লাসে।
গ] শিশিরের দানাগুলোর ভেতর, সূর্যের ঝিকিমিকি দোলায়,
অন্য এক পৃথিবীতে চলে যাই,
বসুন্ধরা মাতা যেন পিঠা-পুলির আয়োজনে
সন্তানেরা সুখের নীল ঠিকানা পেয়ে যায়,
উড়তে থাকে ডানা মেলে অসীমের আলোর ভেতর।
ঘ] পাখির শিল্পীত ডানার মত জীবনের সুখগুলো কুড়াই দুহাতে
হেমন্তের কুয়াশা কেটে চলো অনন্তের মাধুর্য বুকে তুলে নিই।
হেমন্তের শব্দমালা
সৈয়দ রনো
হেমন্তের খোলা বারান্দায় দাঁড়ালেন কবি
শিশিরের ঘাস চাতালে ভিজিয়ে নিলেন
কবিতার শরীর
এরপর তারপর শুনালেন
কাব্যনগরের কোলাহল ছাপিয়ে
অনুচ্চারিত শত সহস্র পঙ্ক্তি
কবিতার ঝুলিতে রক্ষিত
কাব্যচরণের প্রস্তরখ- বের করে বললেন
এটা কি মানব সভ্যতার নিদর্শন নয়
এ স্তবক চকচকে একটি ধাতব মুদ্রার বিপরীতে কেনা
প্রজাপতি আর ঘাসফড়িং কবির দুই স্কন্ধে বসতেই
কবি বললেন
মাফ করবেন যিশু
আপনি ধর্ম অবতার
আপনাকে নিয়ে কিছু বলা হয়নি আমার
আমি শুধু গণতন্ত্র আর মূল্যবোধের
ক্লাস নিচ্ছি মাত্র
কবি শুনালেন
তামাদি হয়ে যাওয়া বিবেকবোধের রোজনামচা
আমাকে ঠাট্টার ছলে বলে
তুমি কি তোমার পূর্ব পুরুষের
আকুতি শোননি
তুমি কি শোননি মানবমুক্তির স্লোগ
নির্বোধ আমি তখনও আকাশ
হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি একা
কবির যত সামান্য অনুরাগ বিরাগ
তাও তো কবিতার শরীর নির্মাণের কলাকৌশল নিয়ে
প্রসব বেদনায় নিরুপায় কবি
চোখের সীমানা ছাড়িয়ে
নীরব চাহনি মেলে ধরে বললেন
ধর্মীয় মূল্যবোধ সে তো
কবির স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে
আটকাবার কৌশল মাত্র
জনমের প্রারম্ভে কাব্যাঙ্গনের
স্বাধীনতা সে তো
আমার তোমার কল্পলোকের
গোলকধাঁধার সীমানা আটকাবার
সুচিন্তিত প্রাচীর
দিগন্তরেখা অতিক্রম করে
পৌঁছে যাক আগামীর কবিতা।
আমার মৌরলা মাছেরা
স ম তুহিন
অগোছালো কাহিনীর আর্কাইভে জমে থাকা কথারা
নীরব ¯্রােতের সাথে সাঁতরে নির্বাসন থেকে ফিরে এসেছে
উড়তে থাকা প্রজাপতিরা বলেছিল,
মেঘ নেই বলে অস্থির ময়ূরেরা পেখম মেলছে না?
বলেছিলাম, তোমার ঐশ^র্য অসহ্য, তাকানো যায় না
মেঘের দিকে তাকাই ঘাসের দিকে ফিরে হাঁটি,
মন ভরে যাওয়ার মতো সবুজে ভরে রাখি মন
লাল কাঠবিড়ালি বলেছিল,
পতাকা কাছে টানে দূরেও সরায়?
বলেছিলাম, মাঝে-সাঝে শেক্সপিয়রের চাদরে
শীত আটকাই তোমার উষ্ণতার কথা ভেবে
কলকাতা বলেছিল,
একটু দূর কমলে মন ভালো হয়ে যেতো তোমার?
বলেছিলাম,
আমাদের রবীন্দ্রনাথ আছে।
জীবনানন্দ আর নীল আকাশে সাদা মেঘ
আমার মন খারাপের সুযোগই দিতে চায় না।
কপোতাক্ষ বলেছে,
‘মৌরলা মাছ কখনো শিশু, তরুণী বা বৃদ্ধা নাÑ
সব মৌরলা মাছই কিশোরী...’
ছন্দ মেলানোর খেলা খেলার বয়স কখনো ফুরিয়ে যায় না
বললাম, হেমন্তেও এতো সবুজ!
হেমন্তের বিকেল
খোদেজা মাহবুব আরা
ধূসর বিকেল, বিষণœতায় ঝুলে থাকা হৃদয়,
পড়ে থাকা খড়ে কুয়াশার আঁচড় এই হেমন্তে
সোনালী ধান কাটার ধুম মহিমান্নিত মায়াময় প্রহর জীবনের গল্পে নুতন মুখরতা
পাখায় পাখায় চঞ্চল দিন
খুঁটে খাবার উৎসাহ অবিচল
অন্য দিকে নবান্ন, এই আয়োজন চৌদ্দ পুরুষের,
প্রবল আগ্রহে এখনও চালিয়ে যাবার চেষ্টা,
এটুকুই থাক না হয় আজীবন।
কেমন নির্মেঘ নীলাকাশ বুকে
রক্তিম সূর্যের বিদায়বেলা
এই মাত্র সূর্য ডুবে গেল
হিম হিম হেমন্তের রাত
সোনালী সুন্দরের জন্য থাকুক উন্মুখ।
হেমন্তিকা
আনোয়ারুল ইসলাম
ভোরবেলাতে ঘাসের ডগায় মুক্তো মানিক জ্বলে
হাজার তারা বাসর সাজায় শিউলি গাছের তলে।
নদীর পাড়ে গাঙশালিকের মধুর মিলনমেলা
কাশের বনে বাও বাতাসের উদাস করা খেলা।
সরষে ফুলে গুনগুনাগুন মৌমাছিদের সুরে
সহসা মন যায় হারিয়ে সুদূর অচিনপুরে।
ধানের ক্ষেতে চখাচখি করছে লুটোপুটি
জীবন যেন বাঁধনহারা, পেয়েছে আজ ছুটি।
ঘরে ঘরে ধুম পড়েছে Ñ নবান্নেরই গানে
নতুন দিনের জাগছে আশা রিক্ত প্রাণে প্রাণে।
প্রজাপতির পাখায় দোদুল সপ্ত রঙের শিখা
সেই আবেশে মোহন সাজে আসে হেমন্তিকা।
ঘুঘুর পিঠে হেমন্তের রোদ
আমির হোসেন মিলন
হাসছে ঘাসেরা
শিশিরের বোঝা মাথায়
গাঁওভর্তি উষ্ণ রোদের পাটি
রসের হাঁড়িতে ভেজানো শালিকের ঠোঁট
ঘুঘুর পিঠে হেমন্তের রোদ্দুর কি অপরূপ
উঠোনের পাশজুড়ে শিউলির গন্ধে
হাসে পাকা ধান
ঘাসের চাতালভর্তি ঘাসফড়িং
চুমুকে চুমুকে নিঃশেষ করে হেমন্তের শিশির
মেঘের মুখোশপরা কুয়াশা পরীরা
আমার বুকে হাত রাখে- আমি শিহরিত হই
উদ্দীপ্ত যৌবনের ঢেউ ভাসতে ভাসতে নরম বুকে
হাত রাখে ফেটে পড়ে বুক
হেসে ওঠে মিষ্টি রোদ
অহংকারী ঠোঁটজোড়া
রোদ চুষতে চুষতে উড়ে যায়
হৈমন্তিক উল্লাসে
আমার শুয়ে থাকা ঘুমগুলো
নিজেকে সমর্পণ করে
প্রথম আলোয়
বৃক্ষকন্যারা
বাংলার সবুজ রং মেখে সেজেছে
ওরা পাখিদের ঘুম চুষে ওম দেয়
জোছনার উৎসব মেলায়
শিশিরধোয়া অন্ধকার
কলাপাতার সবুজ শরীরভেজা
হেমন্তের শিশির ছুঁয়ে কেটে যাক রাত
স্বর্ণচত্বরে সতত জীবন
শুভ্র আহমেদ
কাগজের টুকরোগুলো দুপুরময় উড়তে
থাকে পাখার বাতাসে।
এটাকে ভিজ্যুয়ালে হেমন্তের আকাশ
বানিয়ে এক মধ্যরাতে একজন মধ্যবয়স্ক
মধ্যবিত্ত নাবিক কুয়োতলায়
জাহাজ ভাসান। তখন চাঁদ ছিল
চাঁদে জোছনা ছিল, জোছনায় রং ছিল।
দর্পণে ফলিত ছবি জীবনের স্বর্ণচত্বরে
অর্ধেকটাই লক্ষ্মীটেরা। দুর্ভিক্ষের অন্তর্জলীর পর
পেয়ালাভরা সূর্যোদ্বয় লণ্ঠন হাতে
যেনো এক মেহগনি বৃক্ষের সুদীর্ঘ ছায়া। সতত
স্বপ্নমাখা এই হেমন্ত Ñ ঠিক শিউরে ওঠা জীবন।
হেমন্তের নস্টালজিকতা
ইদ্রিস আলী মেহেদী
কোন সে অহমিকায় বহুদিন পড়েনি পা
তাল-তমালের কুঞ্জবীথিকায় -
ঘন কুয়াশার পরত ছিঁড়ে
সাতপুরুষের বসতভিটায় -
তাদেরই ধন চেটেপুটে আমি
শাহুরিক ফরমালিনে ভাসি আর
কৃত্রিম রংধনু মেখে
হয়ে গেছি চৌকস ‘সেলিব্রেটি’।
প্রহরে প্রহরে কেটে গেছে বহু বেলা
অ্যাপেক্সের জুতো খুলে বিলের নরোম আলে
সন্তর্পণে হয়নি হাঁটা
ধান কাটার আহ্বানে জাগেনি প্রাণোল্লাস।
পাঠশালার রঙিন দিন
সরষে ফুলের ডগায় ফড়িং প্রজাপতি হয়ে নাচে
হলুদ-সবুজের খোলা মঞ্চে মৌমাছির গুঞ্জন
উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে হৃদয়তন্ত্রীতে বাজে
একবার-বহুবার...
সূর্যবেগে খেজুর তলার ধূম- স্পন্দিত আবেশ
এখনো হয়নি শেষ- সব যেন আজ
নস্টালজিয়ার দূরাগত বর্ণিল মিছিল...
বাংলার ছবি
শেখ ফজল
ক্ষেতে ক্ষেতে ধান, হেমন্তের ঘ্রাণ, পাগল করা মন।
ঘরে ঘরে প্রাণ, আনন্দের বান, খুশিভরা পণ।
জনে জনে তান, কণ্ঠভরা গান, অঘ্রানের সুর।
দিকে দিকে তাই, ব্যস্ত সবাই, সকাল-সন্ধ্যা-দুপুর।
এসো এসো সবে, ক্ষেতে যেতে হবে, নবান্নের ডাক।
ফিরে ফিরে আসে, বছর ঘুরে মাসে, হেমন্তের হাঁক।
রঙে রঙে মাখা, সাত রঙে আঁকা, রংধনু প্রাণ
লালে লালে লেখা, ইতিহাস দেখা, দোয়েল গায় গান।
সুখে সুখে ঘর, আদরিত স্বর, বাংলার ছবি!
নিশি চাঁদ বাঁকা, মিঠে রোদে ডাকা, স্বপ্নের রবি!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।