বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নোয়াখালী জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকা থেকে তাসনিয়া হোসেন অদিতা নামের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের দুই হাত ও গলা কাটা ছিলো। লাশ অর্ধনগ্ন থাকায় পরিবারের দাবি তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহান মঞ্জিলের একটি কক্ষ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। সেখানে দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন নিহতের মা শিক্ষিকা রাজিয়া সুলতানা। নিহত তাসনিয়া হোসেন অদিতা ওই এলাকার মৃত রিয়াজ হোসেন সরকারের মেয়ে।
নিহতের মা বলেন, সকালে বাসা থেকে বিদ্যালয়ে যান তিনি। দুপুর ১২টার দিকে প্রাইভেট শেষে বাসায় আসেন অদিতা। এরপর বাসায় সে একাই ছিল। সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে মূল দরজায় তালা দেখতে পান। তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সামনের রুমের জিনিসপত্র এলোমেলো দেখেন। ভিতরের রুমটি আটকানো ছিলো পরে দরজা খুলে প্রবেশ করে দেখেন বিছানায় অর্ধনগ্ন, গলা ও দুই হাতের রগ কাটা অবস্থায় আদিতার লাশ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এলাকার কিছু বখাটে দীর্ঘদিন ধরে অদিতাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতো। এবিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হয়। গত কয়েকদিন ধরে অদিতাকে ধর্ষণ করবে বলে বাড়ির সামনে এসে তাকে হুমকি দেন কয়েকজন।
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হাসান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অদিতাকে ধর্ষণের পর গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করা করেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চোরা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূল হত্যাকারীদের চিহিৃত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
অপরদিকে খুনিদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মুজিব চত্বরে সচেতন নোয়াখালীবাসীর ব্যানারে শত শত তরুণ, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে, তাসনিয়া হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানানো হয়। একই সাথে নোয়াখালীতে ক্রমাগত আইন শৃঙ্খলার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মেয়েদের নিরাপত্তা, কিশোর গ্যাং বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়।
এসময় বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন সংগঠক আবদুল আউয়াল, নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীন, সংগঠক মুনীম ফয়সল, সার্ভিস ফর হিউম্যান বিয়িং অর্গানাইজেশনের সভাপতি ফাহিদা সুলতানা, আলোকিত মানবিক অর্গানাইজেশনের সভাপতি পারভেজ মোল্লা প্রমূখ।
এছাড়া নোয়াখালী নাগরিক অধিকার আন্দোলন, নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স, নিরাপদ নোয়াখালী চাই, ড্রিম লাইট অব হেল্প সেন্টার, রয়েল ড্রিস্টিক্ট নোয়াখালীসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন।
এদিকে হোসেন অদিতা হত্যা মামলায় আসামিদের পক্ষে কোন আইনজীবি দাঁড়াবেন না বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন শাহীন। গতকাল বিকালে জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকায় নিহত অদিতার বাসায় পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিতে গিয়ে এ ঘোষণা দেন শাহীন।
এ সময় শাহীন বলেন, আমাদের এই এলাকার মেধাবী ও সম্ভাবনাময় স্কুল ছাত্রী অদিতিকে অন্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এবং ঠাণ্ডা মাথায় তাকে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করেছে। হত্যা ঘটনা প্রায় উন্মোচিত হয়ে গেছে। আমি জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান এবং সাবেক সকল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি। অদিতি হত্যা মামলার কোন আসামির পক্ষে নোয়াখালী জেলা জজ কোর্টের কোন আইজীবি আদালতে দাঁড়াবেননা। এ বিষয়ে নোয়াখালী আইনজীবি সমিতি থেকে শ্রীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।