পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক সংকট হচ্ছে বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি, যার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ থেকেই এটি হয়েছে। তাই ‘কার্বন নিঃসরণ কমাও, বিশ্ব বাঁচাও’ শ্লোগান উঠেছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সফল হরতালও হয়েছে গত ২৪ সেপ্টেম্বর। এ দিন ৯৯ দেশের প্রায় দুই হাজার শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ। তাতে লাখ লাখ মানুষ শরীক হয়েছে। এদিনে বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই পালিত হয়েছে ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ কর্মসূচি। পোপ ফ্রান্সিসের আহ্বানে ভ্যাটিকানে বৈশ্বিক আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৪ অক্টোবর। তাতে প্রায় সব ধর্মের ৪০ শীর্ষ ধর্মগুরু অংশগ্রহণ করেন। তারা বিশ্বের ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা একটি বাগান পেয়েছি, আমাদের উচিত হবে না আমাদের সন্তানদের জন্য মরুভূমি রেখে যাওয়া।’ তারা পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.৫ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পর্যন্ত বেঁধে রাখতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। গ্লাসগোতে ‘কপ ২৬’ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১-১২ নভেম্বর, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা ও বিশ্ববাসীকে এর ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত করা। এ সম্মেলনকে লক্ষ্য করেই ধর্মগুরুরা উক্ত সম্মেলন ও আহ্বান জানান। ইতোমধ্যেই গ্লাসগোতে সম্মেলন স্থলের বাইরে পরিবেশ আন্দোলনকারীরা রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এছাড়া, আইপিইউ ও ইতালির সংসদের যৌথ উদ্যোগে রোমে ‘প্রি-কপ২৬’ আলোচনা হয়েছে সম্প্রতি। গত সেপ্টেম্বরে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের দুই শতাধিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সাময়িকী। সাময়িকীগুলোর বিশেষ সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। ফলে জলবায়ু সংকটের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। গত এপ্রিলে এক খোলা চিঠিতে ১০১ নোবেল বিজয়ী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জলবায়ু সংকটের সাম্প্রতিক কিছু তথ্য হচ্ছে: জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘বিভিন্ন রাষ্ট্র গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ কমানোর যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পুরোপুরি রক্ষিত হলেও ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে অন্তত ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ ও শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা ও সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাই এখনই সতর্ক না হলে আগামী ২৫০০ সালের মধ্যে পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকবে না। এটি হয়ে উঠবে অন্য একটি ভিনগ্রহ’।গ্লোবাল কোরাল রিফ মনিটরিং নেটওয়ার্ক গত ৫ অক্টোবর বলেছে, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়তে থাকায় ২০০৯-২০১৮ সময়ে বিশ্বের প্রায় ১৪% প্রবালপ্রাচীর বিলুপ্ত হয়েছে, যার আয়তন ১১,৭০০ বর্গকিলোমিটার। সমুদ্রের তলদেশে ১% জায়গা আচ্ছাদিত করে রাখে প্রবালপ্রাচীর, যা কাছিম, মাছসহ ২৫% সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে’। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ‘গ্রিন পিস’র প্রতিবেদন মতে, ‘বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশগুলোর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ। তার পর পাকিস্তান ও ভারত’। হু’র তথ্য মতে, ‘বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০ লাখ’। জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘দূষণ কমাতে অবিলম্বে তৎপর না হলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো রোগ আরও বিপজ্জনক আকার নিতে পারে’।
চলতি বছরের প্রারম্ভে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল বলেছে, ‘বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে, যেন বৈশ্বিক উত্তাপকে প্রাকশিল্পের মাত্রার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা যায়। এই বিষয়ে দেশগুলো ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই চুক্তি। চুক্তিতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন শূন্য করার আহ্বান জানানো হয়েছিল’। আইপিসিসি বলেছে, ‘বিশ্বে পরিবেশ দূষণ, উষ্ণায়নসহ বিভিন্ন কারণে সমুদ্রের পানি স্তর বাড়ছে। এশিয়ায় পানি স্তর বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি। আগে ১০০ বছরে যে পরিবর্তন হতো, ২০৫০-এর মধ্যে প্রতি ছয় থেকে নয় বছরে তা হবে। এই শতাব্দী জুড়ে উপকূলে পানি স্তর বাড়বে, ভাঙন দেখা দেবে, অনেক শহর জলের তলায় চলে যাবে’। ইউনিসেফ বলেছে, বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি শিশু অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৩৩টি দেশে বসবাস করে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। আইপিসিসি›র রিপোর্ট মতে, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন যে চরম তাপপ্রবাহ, প্রচন্ড ভারী বৃষ্টিপাত, খরা, সাইক্লোন হচ্ছে- তাতে জলবায়ুর পরিবর্তন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। শিল্পযুগের আগে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যা ছিল, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সেই তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য আগে যতটা সময় লাগবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, এখন তা দশ বছর আগেই ঘটে যাবে’। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী বন্যার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ২৫% তথা ৮.৬০ কোটি বেড়েছে।’ ক্রিশ্চিয়ান এইড জানিয়েছে, ‘জলবায়ু সংকটে ২০২০ সালে বিশ্বের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার কোটি ডলার’। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইন্সটিটিউটের গবেষক টেলম্যান বলেছেন, ‘আগের তুলনায় ১০ গুণ বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে’। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন মতে, ‘গত ২০ বছর ধরে ভূপৃষ্ঠে তুষার ও বরফে সঞ্চিত পানির স্তর প্রতি বছর এক সেন্টিমিটার হারে কমে এসেছে। ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫০০ কোটিরও বেশি মানুষ পানি সংকটে পড়তে পারে।’ ইউএমও প্রধান তালাস বলেছেন, ‘২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের ৩৬০ কোটি মানুষ অন্তত এক মাস পর্যাপ্ত পানি পায়নি। তাই পানির সংকট মোকাবেলা করতে হবে। পৃথিবীতে মাত্র ০.৫% পানি ব্যবহারযোগ্য।’ বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে ঋতুবৈচিত্র্য লোপ পাচ্ছে। এক ঋতুর সঙ্গে আরেক ঋতুর পার্থক্য মুছে যাচ্ছে। আর্দ্রতা কমে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ছে। এতে শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ভবিষ্যতে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে’। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে জানিয়েছেন, ‘চরম তাপমাত্রার দ্রুত বৃদ্ধির তালিকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ।’ গবেষক দলের প্রধান টুহলস্কি বলেছেন, ‘চরম উষ্ণতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের কর্মক্ষমতার ওপর। ফলে তাদের আয় কমে যাচ্ছে ও স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে’। নাসার একটি গবেষণা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, সূর্যের তীব্র তাপে জ্বলেপুড়ে যাবে শরীর। আর সাগর, মহাসাগরের সব পানি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল থেকে নাই হয়ে যাবে অক্সিজেন। ২৪০ কোটি বছর আগে পরিস্থিতি যে রকম ছিল পৃথিবী আবার সেই অবস্থায় ফিরে যাবে।
বিশ্বের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দায়ী প্যারিস চুক্তি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া। এমনকি ২০২০ সালের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোকে ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়নি! ফলে জলবায়ু সংকটে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর ক্ষতি বেড়েই চলেছে! বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের মধ্যে চীন ২৯.১৮%, যুক্তরাষ্ট্র ১৪.০২%, ভারত ৭.০৯%, রাশিয়া ৪.৬৫%, জাপান ৩.৪৭%, ইইউ প্রায় ৯%, ফিলিপাইন ০.৩৫%, বাংলাদেশ ০.২১%, মালদ্বীপ ০.৫%।
ঘোর অন্ধকারের মধ্যে আশাব্যঞ্জক খবরও আছে। যেমন: গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জলবায়ু ও করোনা মহামারির প্রভাব নিয়ে সর্বাধিক আলোচনা হয়েছে। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দরিদ্র দেশগুলোকে ক্লিন এনার্জি উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য ১১.৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সবুজ ও কম কার্বন নিঃসরণ করে এমন শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করবে এবং বিদেশে কয়লাভিত্তিক নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে না চীন’ (সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানও একই ঘোষণা দিয়েছে)। জাতিসংঘ ২০২১ থেকে আগামী ১০ বছরকে ‘প্রতিবেশ ব্যবস্থা পুনর্গঠন দশক’ ঘোষণা করেছে। পাকিস্তান ১০ বিলিয়ন গাছ রোপনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। গত ১৪ জুলাই ইইউ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য এক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যার প্রধান হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন নিষ্ক্রমণ ৫৫% কমানো, ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনকে নিরপেক্ষ করা ও ২০৩০ সালের মধ্যে তিনশ কোটি গাছ লাগানো। চীন দেশের মরু এলাকায় কোটি কোটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সৌদি আরব এক হাজার কোটি গাছ লাগানোর কর্মসূচি পালন করছে। উপরন্তু দেশটি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আবহাওয়ার পরিবর্তন মোকাবেলার লক্ষ্যে ‘মিডল ইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’ ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে- মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে নিরাপদ আবহাওয়া নিশ্চিতকরণ। কিন্তু বিশ্বে যে হারে বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি হারে বৃক্ষ নিধন চলছে! তাই বৃক্ষ রোপণের সুফল সৃষ্টি হচ্ছে না।
কার্বন নিঃসরণ কমাতে বৈদ্যুতিকে রূপান্তর হচ্ছে অটোমোবাইল শিল্প। রিস্ট্যাড এনার্জি বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রায় ৯০% হবে, যা বৈশ্বিক পরিশোধন ক্ষমতার চাহিদা ৫০% কমিয়ে দেবে।হাইড্রোজেন দিয়ে যানবাহন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে জার্মানি। অস্ট্রিয়ান সরকার কার্বন নিঃসরণ রোধ কল্পে নতুন কার্বন কর প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন, যা ২০২২ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তখন প্রতি টন কার্বন নিঃসরণের জন্য অস্ট্রিয়ানদের ৩০ ইউরো করে কর দিতে হবে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ ৫৫ ইউরোতে উন্নীত হবে।ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত ১১ জানুয়ারি বলেছেন, আগামী এক দশকের মধ্যে ‘দূষণ মুক্ত’ কয়লা প্রকল্পে ৫৪.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা করছে ভারত। এই বিনিয়োগ করা হবে কয়লা থেকে গ্যাস উৎপাদন ও কয়লা স্তরের মিথেন সংগ্রহের মতো ‘দূষণ মুক্ত’ কয়লা উৎপাদনের অবকাঠামো খাতে। বাতাস থেকে বিষাক্ত গ্যাস শুষে নেওয়ার জন্য সুইজারল্যান্ডে একটি বিশাল প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়েছে গত ৮ সেপ্টেম্বর, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওরকা’। এই প্ল্যান্টের এখন যা উৎপাদন ক্ষমতা তাতে বাতাস থেকে বছরে ৪ হাজার টন ওজনের বিষাক্ত গ্যাস টেনে নিতে পারবে। বিভিন্ন বড় কোম্পানি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের আদানি গ্রুপ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে আগামী ১০ বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে গত ২০ সেপ্টেম্বর। যুক্তরাষ্ট্র কার্বন নির্গমন কমাতে বিদ্যুৎ খাতে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে একটি রূপরেখা প্রকাশ করেছে। তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশটির বিদ্যুৎ খাতে সৌরশক্তির হিস্যা প্রায় ৫০% করা ও জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করে জলবায়ু নিরপেক্ষ ও টেকসই জ্বালানিতে বিনিয়োগের দিকে এগোনো এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে পেট্রল বা ডিজেলচালিত গাড়ি বিক্রি নিষিদ্ধ করা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন আয়োজিত গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ক্লাইমেট সামিটে বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে-পরে অনেক আন্তর্জাতিক বড় সংস্থা জীবাশ্ম জ্বালানিতে নতুন করে বিনিয়োগ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি চীন ২০৬০ সালের মধ্যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ কোরিয়া ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশও প্রস্তাবিত ১০টি কয়লা প্লান্ট বাতিল করেছে, যার মোট উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৮ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সর্বোপরি বাংলাদেশে প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক বৃক্ষ রোপন করা হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত বহু দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর ঘোষণা এবং বিপুল বৃক্ষ রোপন করলেও ভারত এসব ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে। অথচ দেশটি বিশ্বের তৃতীয় কার্বন নির্গমনকারী ও বায়ু দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়।ক্ষতির দিক দিয়েও বিশ্বে সর্বাধিক।
যা’হোক, বিশ্বকে বাচাতে হবে। বাসের উপযোগী করতে হবে। সে জন্য বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি রোধ করা জরুরি। এ জন্য দরকার সব দেশকে কার্বন নিঃসরণ শূন্য করা। এটা সম্ভব না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত অর্ধেক কমানো। এ জন্য প্রয়োজন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার পর্যাপ্ত করা। এছাড়া, পরিবেশ রক্ষার জন্য যে ২৫% বনাঞ্চল থাকা দরকার তা শতভাগ বাস্তবায়ন করা। প্রয়োজনীয় বৃক্ষ রোপণ ও বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে। জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা প্রয়োজন। এসব ব্যাপারে আসন্ন কপ-২৬ সম্মেলনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং তা বাস্তবায়নে কঠোর ব্যবস্থা থাকবে, সেটিই কাম্য।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।