পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের এ যুগে ডাক বিভাগ যেন অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে। মানুষ এখন আর চিঠিপত্র, মানি অর্ডার কিংবা পার্সেলের জন্য ডাক বিভাগের ওপর নির্ভরশীল নয়। ই-মেইল, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে মুহূর্তে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডকুমেন্টস লিখিত কিংবা ম্যাসেজ আকারে পাঠিয়ে দিতে পারছে। মোবাইলে সরাসরি কথা বলে যোগাযোগ করা থেকে শুরু করে টাকা পাঠানোর কাজটি কয়েক সেকেন্ডে করতে পারছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই অত্যাধুনিক যুগে ডাক বিভাগ অনেকটা অপাংক্তেয় হয়ে রয়েছে। অথচ আধুনিক প্রযুক্তির এসব মাধ্যম যখন ছিল না, তখন দেশে-বিদেশে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগ। দুর্গম ও প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছিল এর বিস্তৃতি। ডাকপিয়ন বা রানারদের নিয়ে আমাদের সাহিত্যাঙ্গণে অনেক লেখালেখি হয়েছে। গল্প, কবিতা, গান রচিত হয়েছে।নাটক-সিনেমায় প্রিয়জনের চিঠি পাওয়ার আঁকুতি ও অপেক্ষা তুলে ধরা হয়েছে। চিঠি হাতে পাওয়ার পর প্রাপকের সীমাহীন আনন্দ ও অভিব্যক্তি ছিল অতুলনীয়। কালের বিবর্তনে ডাক বিভাগ তার এই ঐতিহ্য হারিয়েছে। বলা যায়, সময়ের সাথে ডাক বিভাগ তাল মিলাতে না পেরে প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। অথচ এর কার্যকারিতা ফুরিয়ে যায়নি। ফুরিয়ে গেছে এ বিভাগে কর্মরতদের উদ্যোগ ও একে আধুনিক করে গড়ে তোলার মানসিকতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক বিভাগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ডাক অধিদফতরকে অনলাইনের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক হতে হবে। অনলাইনের কার্যক্রম অনুসারে ডাক বিভাগের কার্যক্রম চালাতে হবে। এ কাজ করতে পারলে ডাক বিভাগও মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং তার হৃত গৌরব ফিরে পাবে।
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভ্যস্থ হয়ে পড়ায় মানুষ ডাক বিভাগকে ভুলতে বসেছে। ডাক বিভাগ বলে যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ রয়েছে তা অনেকের কাছেই বেমালুম। অধিকাংশ মানুষের ধারণা, চিঠি-পত্র বিলি করা ছাড়া ডাক বিভাগের আর কাজ নেই। যেখানে তারা অনলাইনের মাধ্যমে সেকেন্ডে যোগাযোগের কাজ সারতে পারছে, সেখানে ডাক বিভাগের দীর্ঘ মেয়াদের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকবে কেন? ফলে তারা এর প্রতি বিমুখ হয়ে রয়েছে। এর দায় ডাক অধিদফতরের। এই দফতর আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে না চলে প্রথাগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়ে গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী থেকে শুরু করে কর্মকর্তারাও এর আধুনিকায়নে তেমন কোনো উদ্যোগই নেননি। এতে এ বিভাগটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এতে ভর্তুকি দিতে গিয়ে সরকারেরও কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার নান্দনিক ডাক ভবন উদ্বোধনকালে এ অধিদফতরকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কিভাবে কাজ করতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ দেন। পচনশীল জিনিস থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্য, শাক-সবজি, ফল-মূল মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কাজ ডাক বিভাগের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। এমনকি ফ্রিজিং সিস্টেমের মাধ্যমে রান্না করা খাবারও যাতে পৌঁছে দেয়া যায় তার কথাও বলেন। এ ধরনের ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। প্রধানমন্ত্রীর এ কথা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ডাক বিভাগকে আধুনিকায়ন করে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করা যায়। অথচ এ চিন্তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় করেনি। আমরা কেবল শুনেছি, এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই ডাক বিভাগের শোচনীয় ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে দেশে বেসরকারি অনেক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের পার্সেল দিনের মধ্যে কিংবা স্বল্পতম সময়ে গ্রাহকদের পৌঁছে দিচ্ছে। বেসরকারি এ সার্ভিস মানুষের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দেশের সর্বত্র ডাক বিভাগের শাখা থাকা সত্ত্বেও তা সে কেন এ সার্ভিস দিতে পারছে না, সেটাই বড় প্রশ্ন? ডাক বিভাগ যদি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো কাজ শুরু করত, তাহলে তা মানুষের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য এবং একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতো।
উন্নত বিশ্বে ডাক বিভাগের কদর এখনও রয়েছে। সেখানে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ডাক বিভাগকে মানুষের প্রয়োজনানুযায়ী সাজানো হয়েছে। দেশে-বিদেশে জরুরি কাগজপত্র ও বিভিন্ন পণ্যের পার্সেল পৌঁছানোর কাজটি ডাক বিভাগের মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে প্রাচীন এবং প্রধানতম যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত ডাক বিভাগকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বিশাল নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে একে সবচেয়ে বেশি কার্যকর সেবা মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। লোকসানি ও ভর্তুকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বছরের পর বছর এটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।