পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে এর সত্যতা পায় ডাক অধিদফতরের তদন্ত কমিটি। আর এ আত্মসাতের ঘটনায় ডাক বিভাগের ‘ফ্রাঙ্কেস্টাইনখ্যাত’ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বরখাস্ত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আরো চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এছাড়া ‘লগুদণ্ড’ হিসেবে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে ২২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। চট্টগ্রাম জিপিও’র পোস্ট মাস্টার জেনারেল ড. নিজাম উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডাক অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত ‘ডাক বিভাগের ফ্রাঙ্কেস্টাইন সাইফুল ইসলাম চৌধুরী’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে টাউন ইন্সপেক্টর (টিআই) সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর অর্থ আত্মসাৎ, ডাক বিভাগের সঙ্গে ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ডাক অধিদফতর। ওই তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলেও সাইফুল ইসলাম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়নি। বরং পোস্ট অফিস পরিদর্শক হামিদুল হকের তদন্ত প্রতিবেদনে সাইফুল ইসলাম গংদের সুরক্ষায় একটি দায়সারা প্রতিবেদন পেশ করা হয়। ফলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন আমলে নেয়নি। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। সেই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পোস্টমাস্টার জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) মো. জামাল পাশা গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এ ছাড়া আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত পোস্ট মাস্টার (সঞ্চয়) মো. ওহিদুজ্জামান, নিপূণ তাপস বড়ুয়া, পোস্ট মাস্টার (ট্রেজারি) আব্দুল মালেককেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর আগে একই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় সহকারী পোস্ট মাস্টার নূর মোহাম্মদ ও সরোয়ার আলমকে। এ ছাড়া এ ঘটনায় অন্তত: ২২ জনকে বদলি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জিপিও’র পোস্ট মাস্টার জেনারেল ড. নিজাম উদ্দিন জানান, জিপিওতে নামে-বেনামে হিসাব খুলে গত ৫ বছরে গ্রাহকের অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সাইফুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন একটি চক্র। চক্রটি একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের তথ্য দিয়ে জিপিওতে হিসাব খোলে। এ ধরনের ১০টি হিসাবে ২৯ কোটি ৫২ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। এ ঘটনায় ২০২০ সালে জিপিও সহকারী পোস্ট মাস্টার নূর মোহাম্মদ ও সরোয়ার আলমকে আটকও করা হয়।
এর আগে গতবছর ২৪ নভেম্বর বেনামি অ্যাকাউন্ট খুলে জালজালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম জিপিও’র ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৬ জনের মামলা করা হয়। এ মামলায় চট্টগ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম, শামীম, ওয়াহিদুল আলম, মশহুদা বেগম, আহমেদ নূর ও তসলিমা বেগম নার্গিসকে আসামি করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম কার্যালয় এ মামলার তদন্ত করছে।
এদিকে দৈনিক ইনকিলাবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ডাক অধিদফতর বিষয়টির তদন্ত করে। সেই তদন্তে ঘটনার সত্যতাও খুঁজে পায়। কিন্তু ওই তদন্তটি ছিল দায়সারা। কারণ প্রকাশিত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম জিপিওতে চাকরির পাশাপাশি নিজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঠিকাদারি ব্যবসা, কাজ সম্পাদন না করে বিল উত্তোলন এবং একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ তোলা হয় চট্টগ্রাম জিপিও’র তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ডাক বিভাগে নিয়োগ-বাণিজ্য, ভবন নির্মাণ, সংস্কার, সরবরাহ, পরিবহন-সর্বত্র বিস্তৃত হয় তার লোভের থাবা। ভুয়া সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি ডাক বিভাগ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিপরীতে ডাক বিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে বাগিয়ে নেন ব্যবসা। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও হাঁকাচ্ছেন একাধিক গাড়ি। গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়। প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যের সূত্র ধরে তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ডাক অধিদফতর। তদন্ত শেষে গত ৩ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন চট্টগ্রাম জিপিও’র পোস্ট অফিস পরিদর্শক হামিদুল হক। প্রতিবেদনে (নথি নং-এল-২/বিবিধ-০৭/২০-২১) উল্লেখ করা হয়-৫০ কোটি নয়-আত্মসাৎ হয়েছে ২৯ কোটি ৫২ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা। সে সময় টাউন ইন্সপেক্টর ছিলেন (টিআই) সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। তার অধীনস্থ আকতার আলী (এসবি-৭০০২২৪), লাকি আকতার (এসবি-৬৮৬৬৩৫), নূর মোহাম্মদ (এসবি-৬৬৮৭৪৬), আয়েশা বেগম (এসবি-৬৪২৫৭৫), রিহাবউদ্দিন (এসবি-৬৯০৪০৬), মুক্তা বেগম (এসবি-৬৮৯৭৩১), মুক্তা বেগম (এসবি-৭০০২৪৭), আরবার সালেনূর (এসবি-৬৬৬০১৩), লাকি আকতার (এসবি-৬৯৬২৫১), রায়ফা হোসেন (এসবি-৬৯৯৩৫০) এবং মো. খোকনের (এসবি-২৫৪৭৪৭) অ্যাকাউন্টের বিপরীতে জালিয়াতির মাধ্যমে এই অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু প্রতিবেদনে সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়নি। বরং সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর বেনামি ব্যবসার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় পোস্টঅফিস ভবন নির্মাণ, সাব পোস্টঅফিস ভবন সংস্কারের কার্যাদেশ পেয়ে অনেক ক্ষেত্রে কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামে ‘মেসার্স ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন’ উল্লেখ করা হয়েছে (লাইসেন্স নং-১৬০৩১৪) স্ত্রী সৈয়দ আয়েশা ইয়াসমিনের নামে। এছাড়া ‘মেসার্স ছাবের এন্টারপ্রাইজ’ নামে তার আরো একটি বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টেন্ডার নিয়ে কাজ করার সুবাদে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলা হয়, আলোচ্য বিষয়ে তদন্তে অনাবাসিক ভবন মেরামত খাতের আওতায় চট্টগ্রাম জিপিও’র ষষ্ঠ তলা ভবনের কমিটি রুম (অডিটরিয়াম) মেরামত ও সংস্কার বাবদ (সংশোধিত কার্যাদেশ) ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয় দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম জিপিও প্রান্তের নির্মাণ/মেরামত/সংস্কার সংক্রান্ত কার্যাদেশগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারি বিধি অনুসরণপূর্বক টেন্ডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি চট্টগ্রাম জিপিও’র সংস্থাপক শাখায় নথি/রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে প্রতীয়মান হয়। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, এখানে কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়নি। যদিও ঢাকা জিপিওতে মাত্র ২ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান-র্যাব আসামিদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের ‘স্বীকারোক্তি’র ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় ডাক বিভাগের কর্মচারীদেরও। অথচ প্রায় ৩০ কোটি টাকার আত্মসাতের ঘটনায় কারো বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক মামলা করা হয়নি। গ্রেফতারও করা হয়নি কাউকে।
এদিকে গুরুতর এ অপরাধের পরও এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার না করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ডাক অধিদফতর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ‘বাংলাদেশ পোস্টম্যান ও ডাক কর্মচারী ইউনিয়ন (রেজি নং-বি-২১২৯)’র এক সভায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়, ডাক অধিদফতরের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম চৌধুরীগংদের আলোচিত এই দুর্নীতির ঘটনা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের ইন্ধনে আত্মসাৎকারীদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের শুধু সাময়িক বরখাস্ত করলে সেটি হবে গুরু অপরাধের লগুদণ্ড। এটি মূল দুর্নীতিকেই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। বৃহত এই আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের এবং অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান সংগঠন নেতৃবৃন্দ।
তবে এ বিষয়ে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সিরাজউদ্দিন বলেন, অ্যাকশন শুরু হয়েছে। কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ২২ জনকে শাস্তিমূলক বদলিও করা হয়েছে। মামলাও রুজু করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।