Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেই লিভারপুলই অবনমনের শঙ্কায়!

ফাইনালে বিলবাওকে পেল বার্সা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সাদিও মানে, মোহামেদ সালাহ, রবার্তো ফিরমিনোরা এক সময় প্রতিপক্ষ রক্ষণে ত্রাস ছড়াতেন। তবে সেসব দিন এখন সুদূর অতীত। পরশু রাতে দলটি প্রতিপক্ষ গোলমুখে শট নিয়েছে মাত্র একটি। তাতে আরেক লজ্জাও পাওয়া হয়ে গেছে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপাধারীদের। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিজেদের মাঠে টানা পাঁচ ম্যাচে হারের কবলে পড়েছে দলটি। গতপরশু রাতে চেলসির কাছে ১-০ গোলে হেরে আরো পিছিয়েছে কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। গতবারের সাত ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপাজয়ী লিভারপুলের মুকুট ধরে রাখার আশা শেষ অনেক আগেই। সেই সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষস্থানের চেয়েও অবনমন অঞ্চলের কাছে চলে এসেছে অল রেডরা।

আগের ম্যাচেই শেফিল্ড ইউনাইটেডের মাঠে ২-০ গোলে জিতে জয়খরা কাটিয়েছিল লিভারপুল। দলটির আশা ছিল, নিজেদের মাঠেও সে ফর্মটা টেনে এনে চার ম্যাচ হারের বৃত্তটা ভাঙবেন সালাহরা। কিন্তু অ্যানফিল্ডে তা আর হলো কই! শুরু থেকেই চাপে থাকা লিভারপুল গোল হজম করতে পারত ১৬ মিনিটেই। কিন্তু চেজার অ্যাজপিলিকুয়েতার ক্রসে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন টিমো ভের্নার।

নিজেকে কিছুটা দুর্ভাগাও ভাবতে পারেন জার্মান এই ফরোয়ার্ড। ২২ মিনিটে যে ১৪ ম্যাচের গোলখরা কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন তিনি। কিন্তু জর্জিনিওর পাস থেকে লিভারপুলের জালে বল জড়ালেও সেটি গোলে রূপ নেয়নি অফসাইডের ফাঁদে পড়ে। লিভারপুল এরপর ভালো একটি সুযোগ পেয়েছিল। ২৭ মিনিটে সালাহর ক্রস বক্সে খুঁজে নিয়েছিল তাকে, তবে তিনি তাতে শটই নিতে পারেননি!

বিরতির একটু আগে ম্যাচের সমতা ভাঙেন চেলসির তরুণ মিডফিল্ডার মেসন মাউন্ট। নিজেদের অর্ধ থেকে এনগোলো কান্তের বাড়ানো বল ধরে লিভারপুল বিপদসীমায় চলে আসেন তিনি। লিভারপুল রক্ষণ অবশ্য তাকে রোখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু শেষমেশ তা আর সাফল্যের মুখ দেখেনি। ডান পায়ের শটে গোল করে চেলসিকে এগিয়ে দেন ইংলিশ এই মিডফিল্ডার। প্রথমার্ধে ১১ শট করা চেলসি ব্যবধান বাড়াতে পারত ৫৫ মিনিটে। কিন্তু হেকিম জিয়েখের শটটা গোলরেখা থেকে ফিরিয়ে লিভারপুলকে আরো দুর্দশা থেকে রক্ষা করেন অ্যান্ডু রবার্টসন। এরপর মাউন্ট আর জর্জিনহোর যুগলবন্দিতে আবারও চেষ্টা করেছিলেন ভের্নার। এবার তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান অ্যালিসন। শেষদিকে লিভারপুল লক্ষ্যে প্রথম শট নিতে পারলেও তা গোলে রূপ নেয়নি। মাঠ ছাড়তে হয় হারের গ্লানি নিয়েই।

২৭ ম্যাচ শেষে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার সপ্তম অবস্থানে আছে দলটি। শিরোপার পথে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে পিছিয়ে আছে ২২ পয়েন্টে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, লিগের এ পর্যায়ে এখন শিরোপার চেয়ে অবনমন অঞ্চলের কাছাকাছিই চলে এসেছে ক্লপের শিষ্যরা। ১৮তম অবস্থানে থাকা ফুলহ্যামের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান এখন ২০! চেলসির সংগ্রহ দাঁড়াল সমান ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চারেও ঢুকে গেছে কোচ থমাস টুখেলের শিষ্যরা।

২০২১ সালে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে ১১ ম্যাচ খেলেছে লিভারপুল। সম্ভাব্য ৩৩ পয়েন্ট থেকে তারা আদায় করতে পেরেছে মোটে ১০। নতুন বছরে প্রাপ্তির খাতায় তাদের চেয়ে কম যোগ হয়েছে কেবল তিনটি ক্লাবের। তারা হলো ওয়েস্ট ব্রমউইচ অ্যালবিয়ন (৯), নিউক্যাসল ইউনাইটেড (৭) ও সাউদাম্পটন (৪)।

নিজেদের ঘাঁটিতে প্রায় চার বছর ধরে অজেয় ছিল লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগে টানা ৬৮ ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা। কিন্তু তাদের অ্যানফিল্ড নামক দুর্গের শুধু পতন ঘটেনি, গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে একেবারে যেন মিশে গেছে মাটিতে! ধ্বংসযজ্ঞের শুরুটা হয়েছিল গত ২২ জানুয়ারি, বার্নলির বিপক্ষে হার দিয়ে। এরপর একে একে ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিয়ন, ম্যানচেস্টার সিটি ও এভারটনের কাছে পরাস্ত হয় ক্লপবাহিনী। চেলসি সেই ক্ষত আরও গভীর করে দিয়েছে।

ইংল্যান্ডের ক্লাব পর্যায়ের রেকর্ড বইতেও ঢুকে গেছে মোহামেদ সালাহ-সাদিও মানেদের বিব্রতকর পথচলা। দেশটির পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ স্তরে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের টানা পাঁচ ম্যাচ হারের নজির আগে ছিল না। শিরোপা ধরে রাখার আশা ভেস্তে গেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট পাওয়ার পথও হয়ে উঠেছে বন্ধুর। লিভারপুলের তারকা জার্মান কোচ ক্লপ তাই প্রকাশ করেছেন শঙ্কা, ‘চেলসির কাছে এই হার আমাদের জন্য বিশাল এক ধাক্কা। এখনও সবকিছু নির্ধারিত হয়ে যায়নি। কিন্তু যখন আপনি এতগুলো ম্যাচ হারবেন, তখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার কোনো অধিকার আপনার নেই।’

এদিকে, কোপা দেল রের ফাইনালে অ্যাথলেতিক বিলবাওকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে বার্সেলোনা। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালের ফিরতি লেগে পরশু অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে স্বাগতিক লেভান্তেকে ২-১ গোলে হারায় বিলবাও। দুই লেগ মিলে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে ফাইনালে উঠেছে তারা। দুই দলের প্রথম লেগের ম্যাচটি ১-১ ড্র হয়েছিল। কোপা দেল রের প্রথম সেমি-ফাইনালের ফিরতি পর্বে নিজেদের মাঠে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে সেভিয়াকে ৩-০ গোলে হারায় বার্সেলোনা। দুই লেগে মিলে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে ফাইনালে ওঠে প্রতিযোগিতার সফলতম দলটি। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বার প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠল বিলবাও। ম্যাচটি মাঠে গড়ানোর তারিখ ১৭ এপ্রিল। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে গত আসরের ফাইনালই এখনো মাঠে গড়ায়নি। পিছিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হবে আগামী ৩ এপ্রিল। যেখানে বিলবাওয়ের প্রতিপক্ষ রিয়াল সোসিয়েদাদ।

গত জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে বিলবাওয়ের বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভেঙেছিল বার্সেলোনার। এর কিছুদিন পর লা লিগায় নিজেদের মাঠে বিলবাওকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল রোনাল্ড কোমানের দল। স্পেনের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতার ফাইনালে এ নিয়ে নবম বারের মতো মুখোমখি হতে যাচ্ছে দল দুটি। আগের আটবারে ছয়বার জিতেছিল বার্সেলোনা, দুইবার বিলবাও। ২০২০-২১ আসরের ফাইনাল ম্যাচটি হবে আগামী ১৭ এপ্রিল। বিলবাও কোচ মার্সেলিনো গার্সিয়ার সামনে প্রতিযোগিতার হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের হাতছানি। ২০১৯ সালে ভালেন্সিয়ার হয়ে জিতেছিলেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লিভারপুল


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ