পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশে সমস্যার অন্ত নেই। তার যে কোনো একটা নিয়ে আজকের এ লেখাটি লেখা শুরু করা যেত। কিন্তু এরই মধ্যে ইউরোপের একটা দেশে এমন এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে যে, সেদিকে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারলাম না। কারণ এর সাথে সম্পর্কিত রয়েছে একজন মুসলমান হিসাবে আমার মনের প্রশ্ন। ইউরোপের যে দেশটির কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে সে দেশটির নাম ফ্রান্স। এই দেশটির প্রতি আমার শ্রদ্ধা সৃষ্টি হয়েছিল আইএ পড়ার সময়। বিখ্যাত ইংরেজ কথাশিল্পী চার্লস ডিকেন্স রচিত ‘এ টেইল অব টু সিটিজ’ আমাদের ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসের অন্যতম পাঠ্যপুস্তক হওয়াতে ফ্রান্স নামের এদেশটির প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হয়েছিল। এটি ফরাসি বিপ্লবের পটভূমিতে রচিত একটি উপন্যাস ছিল।
ওই উপন্যাসের কারণে আমি ফ্রান্সের প্রতি এক আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আকর্ষণে এতটাই জড়িত হয়ে পড়েছিলাম যে বহুদিন পর্যন্ত সে ভালোবাসা অটুট ছিল। ‘এ টেইল অব টু সিটিজ’ নামের প্রতি আমার এ আকর্ষণের কারণে আমি তদানীন্তন ঢাকার ব্রিটেনিয়া সিনেমা হলে ঐ উপন্যাসটির চলচ্চিত্ররূপ দেখার লোভ সংবরণ করতে পারিনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালের একটি দুঃখজনক ঘটনার কারণে ফ্রান্সের প্রতি আমার এ দুর্বলতা সম্পূর্ণ কেটে গেছে। শুধু দুর্বলতা কেটে গেছে বললে সবটুকু বলা হবে না, ফ্রান্সের প্রতি আমার গভীর ঘৃণা ও ক্রোধ সৃষ্টি হয়েছে।
পাঠকগণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আমি কোন ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করছি। ফ্রান্সের সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে বিশ্বের সর্বত্র মুসলিম উম্মাহর মনে এমন এক আঘাত দিয়েছে, যা মুসলিম বিশ্ব কোনোমতেই সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। কারণ, মুসলিম উম্মাহ ফ্রান্সের সাথে এমন কোনো আচরণ করেনি, যার ফলে ফ্রান্স মুসলিম উম্মাহর প্রাণাধিক প্রিয় নবীর প্রতি এমন অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারে, বরং বিপরীতভাবে বলা যেতে পারে, মুসলিম উম্মাহ নয়, বরং ফ্রান্সই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের অন্যতম সদস্য হিসাবে এককালে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশকেই জবরদখল করে রেখে অন্যায়ভাবে শোষণ করেছিল।
সে সুদূর অতীতের কথা। তখন ফ্রান্সের মতো অনেক ইউরোপীয় দেশই মুসলিম বিশ্বের অনেক জনপদকে দুর্বল পেয়ে সেসব শোষণ-শাসন চালিয়েছিল। পরবর্তীকালে সে সব মুসলিম দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠায় ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই স্বাধীনতা দিয়ে নবপর্যায়ে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়ে ওঠে। তাদের এ বাস্তববাদী মনোভাব লক্ষ করে সাম্রাজ্যবাদী আমলের অত্যাচার অনাচার প্রভৃতি ভুলে গিয়ে তাদের সাথে নতুন করে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছে সেসব দেশ।
কিন্তু এরই মধ্যে কী কারণে জানি না, ফ্রান্সের শাসকদের মধ্যে মুসলিম বিশ্বের প্রতি এমন প্রবল ঘৃণা ও বিদ্বেষ বোধ সৃষ্টি হলো কেন। তারা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুসলিম উম্মাহর প্রিয় নবী (সা.)-এর কার্টুন প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়ে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কলিজায় আঘাত হেনেছে।
ফ্রান্সের স্মরণ রাখা দরকার, বিশ্ব ইতিহাসের যে পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী বাড়াবাড়ির দিন ছিল, তা অনেক আগেই অতীত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে সারাবিশ্বে ইসলামের নতুন জাগরণ শুরু হয়েছে, যা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের এককালের একনম্বর নেতা বৃটেনসহ অন্যান্য শক্তিও নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারছে। বুঝতে পারছে বলেই সাম্রাজ্যবাদীরা বাড়াবাড়ির পথ পরিহার করে সঠিক পথে চলতে শুরু করেছে।
দুঃখজনক হলেও এটা স্বীকার করতে হচ্ছে যে, যা অবাস্তব, তার বিপরীতটাই বাস্তব। কোনো দুর্ভাগ্যজনক কারণে জানি না, ফ্রান্সের শাসকরা সেই ভুল পথেই অগ্রসর হচ্ছে। এসব আমরা উল্লেখ করছি এ কারণে যে, এককালের সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের অন্যতম সদস্য ফ্রান্স যেন উপলব্ধি করতে পারে যে অতীতের সাম্রাজ্যবাদী ফ্রান্সের তুলনায় আজকের ফ্রান্স অনেক দুর্বল। তেমনি অতীতের তুলনায় মুসলিম বিশ্ব অনেক বেশি শক্তিশালী শুধু তাই নয়, খ্রিস্টান ও ইহুদী শক্তির তুলনায় এখন ইসলাম অনেক দ্রুত সম্প্রসারণশীল ধর্ম হিসাবে বিশে^র যে কোনো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের নিকট স্বীকৃতি লাভে ধন্য হয়েছে।
আমার একথার প্রমাণ হিসাবে সম্প্রতিকালে বহুল প্রচারিত তথ্যের পুনরুল্লেখ করতে চাই এখানে। সে তথ্যটি এই যে, পৃথিবীতে বর্তমানে দ্রুততম গতিতে যে ধর্মে ধর্মান্তরিতের সংখ্যা বাড়ছে সে ধর্মটির নাম ইসলাম। এতসব প্রমাণ সত্তে¡ও যদি ফ্রান্স মুসলিমদের আরও ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ করে এমন কাজ চালিয়ে যেতে থাকে তার যথাযথ প্রতিফল তার পেতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। ফ্রান্সকে নিজের নিরাপদ ভবিষ্যতের স্বার্থেই বর্তমান ভূমিকা থেকে ফিরে আসতে হবে। নইলে তার পরিণতি হবে মর্মান্তিক ধ্বংস, যা থেকে তাকে পৃথিবীর কোনো শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।