পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুনশী
খায়তুল আবইয়াদ ও খায়তুল আসওয়াদ-এর অর্থ
মহান রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন : আর তোমরা আহার করো ও পান করো যতক্ষণ না ঊষার শুভ্ররেখা রাত্রির কালো রেখা থেকে সুস্পষ্ট হয়। (সূরা বাকারা : আয়াত-১৮৭)।
হযরত আদি ইবনে হাতেম (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : যখন সূরা বাকারাহ-এর ১৮৭ নং আয়াত নাযিল হলো, তখন আমি একটি কালো রশি ও একটি সাদা রশি হাতে নেই এবং তা আমার বালিশের নিচে রেখে দেই। অতঃপর আমি রাতে বারবার তাকাতে থাকি। কিন্তু আমার নিকট বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। প্রত্যুষে আমি রাসূলল্লাহ সা:-এর নিকট এ ঘটনার বর্ণনা দেই। তিনি বললেন : এটা হচ্ছে রাতের কালো রেখা (খায়তুল আসওয়াদ) ও দিনের শুভ্র রেখা (খায়তুল আবইয়াদ)। (সহীহ বুখারী : হাদীস নং-১৮১৭; সহীহ মুসলিম : হাদীস নং-
১০৯০)।
এই হাদীসের মর্ম হতে জানা যায় যে, মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশ পালনে সাহাবায়ে কেরাম অধীর আগ্রহী ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সা:-এর ওপর নাযিলকৃত ওহী তারা দ্রুত বাস্তবায়ন করতেন। অপর এক বর্ণনায় এসেছে; হযরত আদি ইবনে হাতেম (রা:) বলেন : ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে যা বলেছেন সব বুঝেছি, তবে সাদা তাগা (খায়ত) ও কালো তাগা ছাড়া আমি গত রাতে দু’টি তাগা সঙ্গে করে ঘুমাই। একবার এদিকে, আরেকবার সে দিকে তাকাতে থাকি। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সা: হেসেছিলেন। অতঃপর বললেন : এ কালো তাগা আর সাদা তাগার অর্থ আসমানে বিদ্যমান রাত-দিনের সাদা-কালো রেখা। (তাবরাযি ফিল কাবীর : খ--১৭, পৃষ্ঠা-৭৯, হাদীস নং-১৭৫)। এই বিষয়টি বোঝার জন্য হযরত আদি ইবনে হাতেম (রা:) বালিশের নিচে সাদা তাগা ও কালো তাগা পর্যন্ত রেখেছেন। (আল মুফহিস : খ--৩, পৃষ্ঠা-১৪৮-১৫০)।
হাফেজ ইবনে কাসির এই আয়াত ‘আর তোমরা আহার করো ও পান করো যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়’। এর অর্থ এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যে, তোমরা খাও এবং পান করো, যতক্ষণ না দিনের সাদা রেখা রাতের কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। আর এটা হয় সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর। (ইবনে কাসির : খ--১, পৃষ্ঠা-২২২; ফাতহুল বারী : খ--৪, পৃষ্ঠা-১৩৪)। এতে প্রমাণিত হয় যে, সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পরবর্তী সময় দিনের অংশ, রাতের নয়। (সহীহ মুসলিম : শারহুন নব্বী, খ--৭, পৃষ্ঠা-২০১; ফাতহুল বারীর খ--৪, পৃষ্ঠা-১৩৪)। মোট কথা, ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত পানাহার বৈধ। পানাহার অবস্থায় যদি কারো ফজর উদিত হয়, আর সে মুখের খানা বের করে ফেলে দেয়, তার রোজা শুদ্ধ হবে, আর খেতে থাকলে রোজা শুদ্ধ হবে না। (ফাতহুল বারী : খ--৪, পৃষ্ঠা-১৩৫)।
আর এটাও প্রণিধানযোগ্য যে, সাহাবায়ে কেরাম (রেদ:) ইবাদত সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি না হলে প্রশ্ন করা থেকে নিবৃত থাকতেন। বোঝা ও অনুধাবন করার জন্য তারা যথাযথ চেষ্টা করতেন। যখন অপারগ হতেন, তখন রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞেস করতেন। অনুরূপভাবে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত হচ্ছে প্রথমে জিজ্ঞাসা না করে বোঝার চেষ্টা করা। ইবাদত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জটিলতা দেখা দেয়া ছাড়া জিজ্ঞাসা না করা। মোট কথা, খায়তুল আসওয়াদ, কালো তাগা বা কৃষ্ণ রেখা হচ্ছে সুবহে কাজেব। এটা রাতের অংশ। আর খায়তুল আবইয়াদ বা সাদা তাগা বা শুভ্ররেখা হচ্ছে সুবহে সাদেক। এটা হলো দিনের অংশ। সিয়াম সাধনার জন্য রাতের অংশেই পানাহারের কাজ সমাপ্ত করতে হবে। অন্যথায় রোজা হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।