Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুবারক হো মাহে রমজান

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনসী
ঋতুবতী রমণীর রোজার হুকুম
ধর্মীয় জীবন ব্যবস্থার মধ্যে কঠোরতা ও বাড়াবাড়ি হারাম। বস্তুত কুরআন-হাদীসের সীমারেখায় অবস্থান করা ও তদানুযায়ী আমল করা একান্ত অপরিহার্য। ধর্মীয় ব্যাপারে মহান রাব্বুল আলামীন যেখানে রুখমত বা শিথিলতা প্রদান করেছেন, তা গ্রহণ করাই শ্রেয়। দ্বীনের ব্যাপারে সেরূপ বাড়াবাড়ি খুবই খারাপ, অনুরূপভাবে কোনো বাহানা-তামাশা করাও বড়ই নিন্দনীয়। বরং মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উত্তম। মোট কথা কুরআন ও হাদীসের ওপর আমল করাই হলো মধ্যম পন্থা। দ্বীনের ব্যাপারে যারা কঠোরতা আরোপ করে তাদেরকে নিষেধ করা উচিত। যাতে করে সঠিকভাবে শরীয়তের বাস্তবায়ন হয় এবং কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
হযরত মুয়াযাহ বিনতে আবদুল্লাহ আল আদাবী (রহ:) বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রা:)-কে একবার জিজ্ঞেস করলাম : ঋতুবতী মহিলারা কেন রোজা কাযা করে, সালাত কাযা করে না। তিনি বললেন : তুমি কি হারুরী? আমি বললাম, আমি হারুরী সম্প্রদায়ভুক্ত নই। কিন্তু আমি (জানার উদ্দেশ্যে) জিজ্ঞাসা করছি। তিনি বললেন : আমাদের এমন হতো। অতঃপর আমাদেরকে শুধু রোজা কাযা করার নির্দেশ দেয়া হতো। সালাত কাযার নির্দেশ দেয়া হতো না। (সহীহ বুখারী : হাদীস নং-৩১৫; সহীহ মুসলীম : হাদীস নং-৩৩৫)।
মুয়াযাহ থেকে ইমাম তিরমিজীর এক বর্ণনায় আছে, হযরত আয়েশা (রা:) বলেছেন : যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলোÑ আমাদের প্রত্যেকে কি ঋতুকালীন সালাত কাযা করবে? তিনি বললেন : তুমি কি হারুরী? আমাদের কারো ঋতু¯্রাব হলে সালাত কাযার নির্দেশ দেয়া হতো না। (জামে তিরমিজী হাদিস নং-১৩০)।
ইমাম তিরমিজী (রহ:) হযরত আয়েশা (রা:) হতে এই বর্ণনাটিও সংকলন করেছেন। হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর যুগে ঋতুবতী হতাম। অতঃপর পবিত্রতা অর্জন করতাম। তিনি আমাদেরকে রোজা কাযার নির্দেশ দিতেন। কিন্তু সালাত কাযার নির্দেশ দিতেন না। (জামে তিরমিজী : হাদীস নং-৭৮৭)। উল্লিখিত হাদীসে হারুরী শব্দটি এসেছে। হারুরী খারেজী সম্প্রদায়ের একটি গ্রুপ। কুফার নিকট হারুরা শহরে তাদের বসতি। তাদের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়িও কঠোরতা ছিল। তারা ঋতুকালীন সালাতের কাযার নির্দেশ দিত। যা ছিল কুরআন, হাদীস ও ইজমার বিপরীত। (আলমুগনি : খ--১, পৃষ্ঠা ১৮৮; সুনানে নামাছির হাশিয়া : আল্লামা সিন্ধী, খ--৪, পৃষ্ঠা-১৯১; উমাদাতুল কারী: খ--৩, পৃষ্ঠা-৩০০)।
ইবনে আবদুল বার বলেছেন : ঋতুবতী নারী রোজা পালন করবে না। বরং কাযা আদায় করবে। তবে ঋতুকালীন সময়ের নামাজ কাযা করতে হবে না। এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে। (তামহিদ : খ--২২, পৃষ্ঠা ১০৭)। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথাও বোঝা যায় যে, অসুস্থ ব্যক্তি রোজা ভঙ্গ করতে পারবে। যদিও তার রোজা রাখার ক্ষমতা থাকে। যদি রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। কারণ, ঋতুবতী নারী একেবারে দুর্বল হয় না। বরং রক্ত বের হওয়ার কারণে তার ওপর রোজা রাখা কষ্টকর। আর রক্ত বের হওয়াও একটি রোগবিশেষ। (ইবনে বাত্তাল : শারহু আলাল বুখারী : খ--৪, পৃষ্ঠা-৯৭-৯৮)।
মোটকথা নারীদের জন্য ইসলামী শরীয়তের ছাড় এই যে, তাদেরকে রোজা কাযা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে কয়দিন তারা রোজা ভাঙবে সে কয়দিনের কাযা আদায় করবে। কিন্তু সালাত কাযা করবে না। কারণ, সালাত দিনে একাধিকবার। যার কাযা আদায় করা খুব কষ্টকর ব্যাপার। এ জন্য নারীদের উচিত, ্আল্লাহর শোকর বেশি বেশি আদায় করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুবারক হো মাহে রমজান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ