পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্্শী
সিয়াম সাধকের বমির হুকুম
সিয়াম সাধকের বমি দু’ধরনের হতে পারে। এক: ইচ্ছাকৃত, দুই: অনিচ্ছাকৃত। রমজানের দিনে রোজাদারের ইচ্ছাকৃত বমি করা বৈধ নয়। কারণ, বমির কারণে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে হ্যাঁ কেউ যদি অসুস্থ হয়, তাহলে রোগের কারণে সে অপারগ ও অক্ষম। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন “তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরের হালতে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নিবে।’’ (সূরা বাকারাহ: আয়াত ১৮৪)। অর্থাৎ সে রমজানে পানাহার করে পরে কাযা-আদায় করবে। (ইবনে কাইয়্যিম: আস্্ সালাত, পৃষ্ঠা-১৩৪)।
তবে এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, স্বেচ্ছায় যে বমি করবে, তার রোজা ভেঙে যাবে। হোক সে বমি তিক্ত পানি, খাদ্যবস্তু, কফ, কিংবা রক্ত। হাদীস শরীফে ব্যাপকতরভাবে উল্লিখিত বিষয়গুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে। (ইবনে কুদামাহ: আল্্মুগনি, খ--৩, পৃষ্ঠা-২৪)।
ইচ্ছাকৃতভাবে যে বমি করবে তার রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার বিধান ইসলামী শরীয়তের ইনসাফ ভিত্তিক প্রমাণকে প্রতিষ্ঠা করে। আর একথাও প্রমাণ করে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেয়া প্রত্যেক বিধান বান্দাহদের উপর ইনসাফ ও রহমত স্বরূপ। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ:) বলেছেন: রোজাদারকে সে সকল বস্তু হতে বারণ করা হয়েছে, যা তার দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে ও খাদ্যের যোগান দেয়। যেমন খাদ্য ও পানীয়। অতএব, যা তাকে দুর্বল করে ও যার ফলে তার খাদ্য বের হয়, তা থেকেও তাকে বারণ করা হয়েছে। যদি তাকে এর অনুমতি দেয়া হয়, তবে সে নিজেকে ক্ষতিপ্রাপ্ত করবে ও ইবাদতে সীমা লংঘনকারী হিসেবে পরিগণিত হবে। এতে কোনই সন্দেহ নেই। (সাজমুউল ফাতাওয়া : খ- ২৫, পৃষ্ঠা ২৫০-২৫১)
বান্দাদের প্রতি আল্লাহপাকের দয়ার শেষ নেই। মেহেরবানীর অন্ত নেই। বান্দাহ্্র অনিচ্ছায় যেসব কাজ সংঘটিত হয় সে জন্য তিনি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না। হ্যাঁ, বান্দাহর ইচ্ছাধীন কাজের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যেমন ইচ্ছাকৃত বমি করা। অর্থাৎ আঙ্গুল ঢুকিয়ে বা গলায় কিছু প্রবেশ করিয়ে, অথবা দুর্গন্ধ শুঁকে, অথবা বিরক্তিকর কোন জিনিস দেখে অথবা কোন কারণে বমি করল। যদি সে ইচ্ছাকৃত এমন করে তবে তার রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। আর অনিচ্ছাকৃত হলে তার রোজা নষ্ট হবে না।
এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: ‘রোজা অবস্থায় যার বমি হলো, তার উপর কাযা জরুরী নয়। হ্যাঁ যদি সে স্বেচ্ছায় বমি করে, তাহলে সে যেন কাযা আদায় করে।’ (সুনানে আবু দাউদ : হাদীস নং ২৩৮০; মুসনাদে আহমাদ : খ--২, পৃষ্ঠা ৪৯৮; সহীহ ইবনে খুজাইমাহ: হাদীস নং-১৯৬০; সহীহ ইবনে হিব্বান: হাদীস নং-৩৫১৮; মুস্তাদারেকে হাকেম খ--১, পৃষ্ঠা ৮৫৫)। হযরত মি’দান ইবনে তালহা (রহ:) থেকে বর্ণিত, হযরত আবু দারদা (রাঃ) তাকে বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বমি করার পর রোজা ভঙ্গ করেছেন। পরবর্তীতে আমি দামেস্কের এক মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দাস সাস্তুবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আমি বললাম, আবু দারদা আমাকে বলেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বমি করার পর রোজা ভঙ্গ করেছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি ঠিক বলেছেন। আমি তার পানি ঢেলেছি। (সুনানে আবু দাউদ: হাদীস নং-২৩৮১, মুসনাদে আহমাদ: খ- ৬, পৃষ্ঠা ৯; নাসাঈ ফিল কুবরা, হাদীস নং-৩২১০; সহীহ ইবনে হিব্বান: হাদীস নং-১০৯৭; মোস্তাদরেকে হাকেম: খ--১, পৃষ্ঠা ৫৮৮-৫৮৯)
স্মরণ রাখা উচিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বমি করেছেন। অতঃপর রোজা ভঙ্গ করেছেন। এর অর্থ হলো-তিনি বমির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন বিধায় সিয়াম ভঙ্গ করেছেন। বমির কারণে তিনি রোজা ভঙ্গ করেননি। তাহাবী শরীফের এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: কিন্তু আমি বমি করেছি, ফলে রোজা পালন থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছি; তাই রোজা ভঙ্গ করেছি। (ত্বাহাভী: শারাহু মায়ানেল আসার, খ--২, পৃষ্ঠা-৯৭; উম্মাদাতুল ক্বারী: খ- ১১. পৃষ্ঠা ৩৬)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।