পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ.কে.এম ফজলুর রহমান মুন্শী : সিয়াম সাধনার আদব : প্রত্যেক নেক আমলের জন্য কতিপয় আদব, শিষ্টাচার ও নিয়ম-নীতি রয়েছে, যা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হলে সে আমলটি পূর্ণাঙ্গ হয়, পরিপূর্ণ নেকী পাওয়ার উপযুক্ত হয়। অনুরূপভাবে সিয়াম সাধনার ক্ষেত্রেও এমন কিছু আদব রয়েছে যার প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখা প্রত্যেক রোজাদারেরই কর্তব্য।
এতদ্সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিয়াম ঢালস্বরূপ’। সুতরাং তোমাদের কেউ রোজাদার হলে সে যেন, অশ্লীলতা ও মূর্খতা পরিহার করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক খÐ-১. পৃষ্ঠা ৩১০; সহীহ বুখারী, হাদিস নং-১৭৯৫; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-১১৫১) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে রোজাদার মিথ্যা কথা ও তদানুরূপ কাজ এবং মূর্খতা পরিহার করল না, তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী হাদিস নং-৫৭১০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩২৬২; জামে তিরমিজী, হাদীস নং-৭০৭; নাসাঈ ফিল কুবরা, হাদিস নং-৩২৪৫-৩২৪৮)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি ও তাঁর সাথীগণ যখন সিয়াম পালন করতেন, মসজিদে বসে থাকতেন আর বলতেন, আমরা আমাদের সাওম পবিত্র করছি। (আহমাদ বিন হাম্বল, যুহদ, ১৭৮ পৃষ্ঠা; আবু নুয়াইম, হিলইয়া, খÐ-১, ৩৮২ পৃষ্ঠা)।
হযরত আয়েশা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সিয়াম জাহান্নামের ঢালস্বরূপ। যে সাওম অবস্থায় ভোর করল সে যেন সেদিন মুর্খতার আচরণ না করে। কেউ যদি তার সাথে দুর্ব্যবহার করে, সে তাকে তিরস্কার করবে না, গালি দেবে না বরং বলবে, আমি রোজাদার। (সুনানে নামাঈ চতুর্থ খÐ ১৬৭ পৃষ্ঠা; তাবারানী, আল-আওমাত, হাদিস নং-৪১৭৯ অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সাওম অবস্থায় তুমি গালি দেবে না, যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় তাহলে তাকে বলো আমি রোজাদার। আর যদি তুমি দÐায়মান থাকো, তাহলে বসে যাও। (নাসাঈ ফিল কুবরা, হাদিস নং-৩২৫৯; তায়ালিসি হাদিস নং-২৩৬৭; সহীহ ইবনে খুয়াইমাহ, হাদিস নং-১৯৯৪)।
উপরোল্লিখিত আহাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য শুধু ক্ষুধা-পিপাসা কু-প্রবৃত্তির তাড়না সহ্য করা নয় বরং মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রবৃত্তিকে দুর্বল করা, রাগ গোস্বা নিবারণ করা, কু-প্রবৃত্তির চাহিদা নস্যাৎ করা এবং নফসে মুতমায়িন্নার আনুগত্য করা যদি সিয়াম সাধনা দ্বারা এসব অর্জিত না হয়, তাহলে সিয়াম রাখা, না-রাখার মতো হয়ে যাবে। কারণ, এমতাবস্থায় সিয়াম তার উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। (ফাতহুল বারী), খÐ-৪, পৃষ্ঠা ১১৭; ফায়জুল কাদীর, খÐ ৬, পৃষ্ঠা ২২৪)
বস্তুত: মিথ্যা কথা, মিথ্যানির্ভর কাজ করা, গীবত ও পরনিন্দা করা, মূর্খতাপূর্ণ আচরণ ইত্যাদি সিয়াম ভঙ্গ করে না বটে, তবে তার সওয়াব অবশ্যই হ্রাস করে। এজন্য রোজাদার গোনাহগার হবে। (কাতহুল বারী, খÐ ৪, পৃষ্ঠা-১০৪; ওমদাতুল কারী; খÐ ১০, পৃষ্ঠা-২৭৬)।
এক্ষেত্রে একথা বুঝার কোনো অবকাশ নেই যে, অশ্লীলতা, গালিগালাজ, মূর্খতার আচরণ অসার ও অযথা বিতর্ক শুধু সাওম অবস্থার নিষিদ্ধ, অন্য সময় নয়, বরং সকল অবস্থায় এগুলো হারাম ও নিষিদ্ধ। তবে সাওম অবস্থায় এগুলোতে লিপ্ত হওয়া জঘণ্য অন্যায়। কারণ, এগুলো সাওম সাধনার মূল উদ্দেশ্যকে নস্যাৎ করে দেয়। (আল মুফহিম, খÐ-৩, পৃষ্ঠা ২১৪; ফাতহুল বারী; খÐ-৪, পৃষ্ঠা ১০৪)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।