Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুবারক হো মাহে রমজান

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী
জাহিলিয়াতের আমলে আরবদের রোজা
হযরত ঈসা (আঃ) পর শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)-এর ওহী লাভ পর্যন্ত ৬১০ বছর সময় কালকে জাহিলিয়াতের যুগ বলা হয়। এই সময়ে আরবে মুশরিকদের মধ্যেও রোজার প্রচলন ছিল। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আরবের কুরাইশরা জাহিলী যুগে আশুরার দিনে রোজা রাখত এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ও জাহিলী যুগে সে রোজা রাখতেন। তারপর তিনি ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে মদীনায় হিজরত করেন এবং নিজে সে রোজা রাখেন। সাহাবীদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দেন। তারপর ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে রমজান মাসের রোযা ফরজ হলে তিনি আশুরার রোজা ছেড়ে দেন। (সহীহ বুখারী হাদিস নং ১৫৯২, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১১২৫, সুনামে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৭৩৩, সুনামে আবু দাউদ হাদীস নং ২৪৪২, জামে তিরমিযী হাদীস নং ৭৫৩)।
এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়াতের যুগেও আরবদের মধ্যে রোজার প্রচলন ছিল। তবে, জাহিলিয়াতের যুগে মক্কা ও আশেপাশের এলাকার কাফিরদের রোজা রাখা সম্বন্ধে দু’টি অভিমত লক্ষ্য করা যায়। প্রথম অভিমত হচ্ছে এই যে, আশুরার দিনে কাবাগৃহে নতুন গিলাফ চড়ানো হতো। তাই, আরবরা ঐ দিনে রোজা রাখতো। (মুসনাদে আহমাদ, ৬ষ্ঠ খ-, ২৪৪ পৃষ্ঠা)।
আর দ্বিতীয় অভিমত সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালামী (রহ.) বলেন, একদা এ রোজার, বিষয়ে হযরত ইকরিমা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, জাহিলিয়াতের যুগে কুরাইশরা একবার কোন একটি গোনাহের কাজ করে বসে। তারপর তাদের মনে সেই গোনাহের কর্মটি খুব বড় বলে মনে হয়। তখন তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয় যে, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ। এর দ্বারা তোমাদের সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে। কোতহুল বারী, ৪র্থ খ--২৪৬ পৃষ্ঠা)।
উপরোক্ত সকল বর্ণনা দ্বারা অনুধাবন করা যায় যে, রমজানের একমাত্র রোজা ফরজ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মক্কার কাফির সম্প্রদায়, মদীনার ইহুদী সম্প্রদায়, রোমের খ্রিস্টান সম্প্রদায়, ভারতের হিন্দু ও জৈন সম্প্রদায়, গ্রীসের গ্রীস সম্প্রদায়সহ পৃথিবীর অন্যান্য প্রায় সকল জাতির মধ্যে রোজার প্রচলন ছিল। তারপর সে সব সিয়াম সাধনাকারী জাতির প্রতি ইঙ্গিত করে উম্মতে মুহাম্মাদীয়ার উপর মাহে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে; হে ঈমানদার ব্যক্তিগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর তা’ ফরজ করা হয়েছিল। (সূরা আল-বাকারাহ ২ ঃ আয়াত ১৮৩)।
এই আয়াতে কারীমার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী লোকদের উপরও রোজা ফরজ ছিল। তবে পূর্ববর্তী লোকদের উপর কোন কোন রোজা ফরজ ছিল সে সম্পর্কে আল-কুরআনে সুস্পষ্ট কোন উল্লেখ নেই। হাদীস অথবা ইতিহাস দ্বারাও জানা যায় না যে, হযরত আদম (আঃ) হতে হযরত ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত তাদের উপর কোন রোজাটি ফরজ ছিল।
মোট কথা, হযরত আদম (আঃ) থেকে ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সমস্ত উম্মতের জন্য যে সিয়ামের নির্দেশ ছিল সে নির্দেশই অত্যন্ত নিখুঁত ও পরিপূর্ণভাবে উম্মতে মুহাম্মাদীয়াকে নির্ধারিত মাহে রমজানের জন্য দেয়া হয়েছে। সিয়াম সাধনা মাহে রমজানেই করতে হবে। এ মাস যে কোন ঋতুতেই আসুক না কেন এতে নির্দেশের কোন পরিবর্তন হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুবারক হো মাহে রমজান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ