পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ.কে.এম. ফজলুর রহমান মুন্সী : আদম (আ.), নূহ (আ.) ও ইব্রাহীম (আ.) এর রোজা
পৃথিবী নামক শূন্যে ভাসমান বিচরণশীল এই গ্রহে সর্ব প্রথম রোজা রেখেছিলেন মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এর সম্পর্কে শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বর্ণনা করেছেন, সির ইবনে হুবাইসা (রা.) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)কে আইয়্যামে বীস (চান্দ মাসের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখকে আইয়্যামে বীস বলে) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ পাক আদম (আ:)কে জান্নাতে একটি বৃক্ষের নিকটে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আদম (আ:) সেই বৃক্ষের নিকটে যাওয়ার পর আল্লাহর নির্দেশে দুনিয়ায় নেমে আসতে বাধ্য হয়। সে সময় তাঁর শরীরের রং কালো হয়ে যায়। তাঁর এই দুর্দশা অবলোকন করে ফেরেশতাগণ মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন, হে আল্লাহ! আদম (আ:) তোমার আদরের সৃষ্টি। তুমি তাকে জান্নাতে স্থান দিয়ে দিলে আমরা তাকে সম্মানসূচক সেজদাও করলাম। একটি মাত্র ত্রুটির জন্য তাকে জান্নাত হতে বহিষ্কার করলে ও গায়ের রং কালো করে দিলে? ফেরেশতাদের প্রার্থনা শুনে মহান আল্লাহ পাক আদম (আ.) এর প্রার্থনা শুনে মহা আল্লাহ পাক আদম (আ.) এর প্রতি ওহী প্রেরণ করে বললেন, তুমি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখ। আদম (আ.) তাই করলেন। ফলে তার দেহের রং পূর্বের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে গেল। এজন্যই এই তিনটি দিনকে আইয়্যামে বীস বা শুভ্র উজ্জ্বল দিন বলে। (গুনিয়াতুত্ তালেবিন, বাংলা অনুবাদ ১ম খ-, ৩০৭ পৃষ্ঠা)।
প্রখ্যাত মুফাচ্ছের সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) গৃহে এবং সফরের হালতে আইয়্যামে বীসের সিয়াম পালন না করে হালতে আইয়্যামে বীযের সিয়াম পালন না করে কখনো থাকতেন না। (সুনানে নাসাঈ, মিশকাত ১৮০ পৃষ্ঠা)।
হযরত আদম (আ.) এরপর নূহ (আ.)কে দ্বিতীয় আদম বলা হয়ে থাকে। তাঁর যুগেও সিয়াম ছিল। পিয়ারা নবী মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নূহ (আ.) ইয়াত্তমুল ফিতর এবং ইয়াত্তমুল আযহা ছাড়া সারাবছর রোজা রাখতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১২৪ পৃষ্ঠা)।
হযরত মুয়াজ, ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাস, আতা, কাতাদাহ ও দাহহাক (রা.) হতে বর্ণিত আছে, হযরত নূহ (আ.) এর যুগ থেকে প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোজা ছিল। অবশেষে মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার করসিয়তের দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তা রহিত করে দেন। (তফসিরে ইবনে কাসির, ১ম খ-, ২১৪ পৃষ্ঠা)। হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) এর এই বর্ণনার দ্বারা জানা যায় যে, হযরত নূহ (আ.) এর যুগ থেকে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর যুগ পর্যন্ত মাহে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে প্রতি মাসে কম পক্ষে তিনটি করে সিয়াম ফরজ ছিল।
হযরত নূহ (আ.) এরপর বিখ্যাত নবী ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আ.)। তাঁর যুগে কতটি সিয়াম ছিল তার যথার্থ বিবরণ পাওয়া যায় না। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন যে, তার যুগে ৩০টি সিয়াম ছিল। তবে এ ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না।
কিতাবধারী নবী ও রাসূল হযরত মুসা (আ.) যুগেও সিয়াম পালনের বিধান ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা:) মদিনায় হিজরত করার পর মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে (১০ ই মুহারম) রোজা রাখতে দেখে জিজ্ঞেসা করলেন তোমরা কিসের রোজা পালন করছ? তারা উত্তর করল, এইদিনে মহান আল্লাহ পাক হযরত মুসা ও তাঁর কাওমকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ফলে শুকরিয়াস্বরূপ মুসা (আ.) ঐদিনে রোজা রেখেছিলেন। তাই আজকে আমরা সে রোজা পালন করছি। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম, মিসকাত ১৮০ পৃষ্ঠা)।
ব্যাবিলনের বন্দী যুগে শোক ও মাতম প্রকাশের জন্য আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের জন্য মহামারী ও বিপদ-আপদ হতে নিরাপদ থাকার জন্য, ইহুদিরা রোজা রাখত। বছরের প্রথম দিন মে মাসের ৯ম তারিখে ইহুদিদের মধ্যে রোজার প্রচলন আছে। এতে বোঝা যায় যে, হযরত মুসা (আ.) এর যুগে এবং তার আগে ও পরে ইহুদিদের মধ্যে রোজার প্রচলন ছিল।
হযরত মুসা (আ.) এরপর আসমানি কিতাবধারী বিখ্যাত নবী ছিলেন হযরত দাউদ (আ.) তাঁর যুগেও রোজার প্রচলন ছিল। এ সম্পর্কে পিয়ারা নবী মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, আল্লাহ পাকের নিকট সবচেয়ে প্রিয় রোজা হযরত দাউদ (আ:) এর রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন এবং একদিন বিনা রোজায় থাকতেন। (সুপানে নাসঈ, ১ম খ- ২৫০ পৃষ্ঠা, সহীহ বুখারী ও সহী মুসলিম ও মিশকাত ১৭৯ পৃষ্ঠা)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।