Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুবারক হো মাহে রমজান

প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী
মাহে রমজানের মাহাত্ম্য
রহমত, বরকত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নিষ্কৃতির বার্তা নিয়ে আবার আমাদের মাঝে এসে হাজির হয়েছে মাহে রমজান। মাহে রমজান মুসলিম মিল্লাতের জন্য অনন্ত সওগাত বয়ে আনে পুন্যাশ্রয়ী জীবনের সকল অঙ্গনে। ইমাম বায়হাকী (রহ.) মাহে রমজানের আগমনী সংবাদ হযরত সালমান আল ফারসী (রা.)-এর বর্ণনায় এভাবে তুলে ধরেছেন। “হযরত সালমান আল ফারসী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের শেষ দিন আমাদেরকে সম্বোধন করে এক ভাষণ প্রদান করেন। তাতে তিনি বলেন, ‘হে জনম-লী! এক মহাপবিত্র ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের মাথার ওপর ছায়া সম্প্রসারিত করেছে। এ মাসের একটি রাত বরকত ও ফজিলত এবং মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের দিক থেকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই মাসের সিয়াম সাধনাকে আল্লাহ পাক ফরজ করেছেন এবং এর রাতগুলোতে আল্লাহর সম্মুখে দ-ায়মান হওয়াকে নফল ইবাদতরূপে নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি এই রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় কোন সুন্নত বা নফল ইবাদত আদায় করবে, তাকে এর বিনিময়স্বরূপ অন্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি এই মাসে কোন ফরজ এবাদত সম্পাদন করবে সে অন্যান্য সময়ের সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমান পুন্য লাভে ধন্য হবে।
এই মাসটি মূলত ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ত্যাগ-তিতীক্ষার মাস। আর ধৈর্য ও সবরের বিনিময়ে আল্লাহ পাকের নিকট জান্নাত লাভ করা যাবে। এই মাসটি পরস্পর সহৃদয়তা দয়া-দাক্ষিণ্য, সৌজন্য ও সম্প্রীতির মহিমায় ভরপুর। এই মাসে মুমিন বান্দাহদের রিজিক আল্লাহ পাক প্রশস্ত করেছেন। এই মাসে যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে বিনিময়স্বরূপ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং জাহান্নাম হতে তাকে মুক্তি ও নিষ্কৃতি প্রদান করা হবে এবং তাকে আসল রোজাদারের সমান পুন্য প্রদান করা হবে। কিন্তু এর জন্য আসল রোজাদারের পুন্যকে আদৌ কম করা হবে না।
হযরত সালমান আল ফারসী (রা.) বলেন, আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে সবাই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ রাখে না, তাদের অবস্থা কীরূপ হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তর করলেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে একটা খেজুর, দুধ বা এক ঢোক সাদা পানি দ্বারা ইফতার করাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সে লোককেও এই সওয়াব প্রদান করবেন। আর যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে পরিপূর্ণ মাত্রায় পরিতৃপ্ত করবে তাকে আল্লাহ পাক আমার হাউজে কাওসার হতে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে চিরসুখময় জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত কখনো সে পিপাসার্ত হবে না।
আর মাহে রমজান এমন একটা মাস যার প্রথম দশদিন রহমতের বারিধারায় পরিপ্লুত। দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা ও মার্জনার জন্য অবারিত এবং শেষ দশদিন জাহান্নাম হতে মুক্তি ও নিষ্কৃতির উপায় হিসেবে নির্ধারিত। আর যে ব্যক্তি এই মাসে নিজের অধিনস্ত লোকদের পরিশ্রম ও মেহনত হালকা করে দেবে মহান রাব্বুল ইজ্জত তাকে ক্ষমা প্রদান করবেন এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি ও নিষ্কৃতি দান করবেন।
তাই, মুসলিম মিল্লাতের জন্য বারটি মাসের মধ্যে রমজান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসের আগমনে গোটা মুসলিম জাহানে এক বিরাট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মুমিন-মুসলমানগণ সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করার জন্য উদগ্র-আকাক্সক্ষায় উদ্বেলিত হয়ে উঠে। মহান রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে এই মাসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদাকে এভাবে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে : “রমজান মাস এমন একটি মাস যে এই মাসেই কুরআনুল মাজীদ নাজিল হয়েছে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৫)”।
ইসলামী বার মাসের মধ্যে আল কুরআনে কেবলমাত্র একটি মাসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলোÑ রমজান। এই রমজান নামটি খুবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও তাৎপর্যম-িত। রমজান নামটি আরবী ‘রমজ’ ধাতু হতে গৃহীত। এর অর্থ দহন, জ্বলন, সিয়াম সাধনার দরুণ ক্ষুৎপিপাসায় তীব্রতায় রোজাদারের পেট জ্বলতে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুবারক হো মাহে রমজান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ