শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
আলম মাহবুব
বৈশাখী ঝড়
বসন্ত বিলাসে আর মন টানে না
ফাগুনের কাব্য যখন হাহাকারের ঢেউ তুলে
একটাও পাখি পরেনা পাতার মুকুট
আড়ালে থেকে সুবেশী কেউ নাচালে পুতুল
কী যে বেমানান লাগে বৃক্ষের সবুজ
হেভী ফাউন্ডেশনে আহামরি কৃত্রিম মেকাপে
ঢেকে রাখা রাত্রির অন্ধকার
বিসম দৃশ্যগুলি ছলনার প্যারডি গায়।
দীর্ঘ পারাবারে যখন মিলেছিলাম ঐক্যে
কোন ধ্রুবতারা ছিল না বজ্রের ইশারা ছাড়া
সমস্ত পথ কীযে লাল হলো নদীগুলো সব লাল
আর লালে লাল হয়ে ছিল দুঃস্বপ্নের দেয়াল
আমরা এগুলাম তবু বসন্ত ভাসানো কিঙ্করে
বুটের তলায় শিশির ধোয়া গোলাপ ফুটে
ভালবেসে চাঁদ উঠে কলঙ্ক জড়িয়ে গায় বলে
দম বন্ধ হয়ে আসছে ঢেউগুলির
বিষের পেয়ালায় চুমু দিয়ে নদীগুলো যাচ্ছে মরে
বড় হবে বলে বৃক্ষটি নিতে পারছে না শ্বাস।
কি করবো আমি প্রেতের পুরিতে
যদি না পাখি আসে ফিরে জন্মায় সবুজ ঘাস
প্রয়োজন কি হাওয়াই জাহাজের গগনচুম্বী অট্টালিকায়।
পাহাড়ের মত মাথা তুলুক তেজোদ্দীপ্ত ষাঁড়ের যৌবন
সাহসী পদভারে কেঁপে উঠুক রাজপথ
দুনিয়া কাঁপিয়ে আসুক কাল বৈশাখী ঝড়।
মাহবুবা করিম
তুমি পাশে থাকলে
তুমি পাশে থাকলে আমি পরাজিত পৃথিবী;
জয় করতে পারি ভোরের আলো ও চাঁদ।
আমার ভেতর অন্যরকম প্রেম পূণ্য খেলা করে
যা দেখি অসুন্দর সব যেন পটে আঁকা ছবি হয়ে যায়।
তুমি পাশে থাকলে
আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার স্পর্শে বাগান হওয়ার
অপেক্ষায় থাকি একটি রাত দুজন মিলে গুম হওয়ার।
অপেক্ষায় থাকি স্বর্গ ও নরকের ফারাকে
শীতল অভিমান জমিয়ে ভালোবাসার উষ্ণতায় গলে পড়ার।
নিঃশব্দ আহামদ
ঠিক যদি ছেড়ে যাই
আদুরে হয়ে ফিরছে এই যে পথ,আরও শতবর্ষ ছিলো হেঁটে যাবার
ধীর লয়ে যেমন হেঁটে যাবো ভেবেছি একদিন-তোমার হাতপাশে আমারি ই হাত রেখে ছন্দোবদ্ধ হবে আমার সকল বৈরাগ্যপনা
সে স্বপ্নাতুর অভিলাষ ফিকে হয়ে গেলে
আমার আর ভালোলাগেনা৷
বিচ‚র্ণ কাঁচ শব্দে ভেঙে যেতে থাকে
এখানে ওখানে আমার যতোটা জীবন হয়েছে নির্মাণ
আহা!শুধু শ‚ন্য শ‚ন্য মাতমে শুধু একা
দগ্ধ এক হৃদয় রোজ ডুবে যায় দুঃসহ হতাশায়৷
বরং আমার যাবার ছিলো,
এই যে পথে পথে ছড়ানো মৃত্যু;ভয়
দ্যাখে দ্যাখে ক্লান্ত,দীর্ঘ ক্লান্তির ভেতর সাড়া পড়ে গেছে
এক সুর,অচেনা-খুউব ,যার বিবরণ শুনে শুনে
আঁতকে উঠে অন্ধকার,অনন্ত নিবাসি হবো যেনো আমি তার৷
ঠিক যদি ছেড়ে যাই,একদিন
আহা!কার চোখ জলে ভাসছে সন্ধ্যাঘর
প্রথম ভোরের সন্ধানি কোন সে চোখ
আমি একবার তাঁর কণ্ঠলগ্ন হবো,যেমন শেষ আকুলতার পাশে
স্থি’র প্রতিটি চোখ,কোলাহল পাশে সন্তর্পনে
কাঁপছে বুক যেমন ব্যথাতুর নিরবতা৷
হালিম নজরুল
কষ্ট রঙের পাখি
পাখিগুলো বেড়ায় উড়ে এ ঘর ও ঘর।
কারো কারো বাড়ি ঢোকে,
বেরিয়ে যায় কর্ম শেষে।
মনে রাখে কেউ কেউ তা,
স্মরণে যা জায়গা হারায়,বেরিয়ে যায় অন্য বাড়ি।
পাখিগুলোর নিজের কোন ঠিকানা নেই,
অনেকটা ঠিক স্বর্ণলতা-ব্যাঙের ছাতা।
রসাল ডালই নিরাপদ ও নিরাপত্তা।
ঠিকানাটার মতই যে তার নিজের কোন নাম থাকে না,
কেউবা তাকে সুখ বলে,আর কেউবা চেনে দুঃখ নামে।
কষ্ট রঙের পরলে জামা গন্তব্য ঠিক আমার এ ঘর।
এ গাঁয়ে তার নিদ্রা আহার,আপন বাড়ি, জলের নদী।
আমার ঘরে ঢুকলে পরেই এলিয়ে জীবন---
বানায় বাড়ি, ঘর-সংসার;চিরস্থায়ী।
রহমান মাজিদ
বিস্বাদের মাঝে জন্মের সুখ
মাঝে মাঝে বিস্বাদের উইপোকাগুলো বাসা বাধে মগজে
ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের মত লম্বা শুঁড় দিয়ে
শুষে খায় চিন্তার জারক রস
হতাশার এনাকুন্ডা গিলে খায় তখন আমার পুরো
অস্তিত্বকে কুনো ব্যাঙের মত
সম্ভাবনার টিমটিমে চেরাগে পতিত হয়ে নিরাশার দীর্ঘশ্বাস
সজোরে ফেটে পড়ে আশার বেলুন
আলস্য আলোয়ানের পশমি ওম কখনও আবার
কুঁচ্চে মুরগির মত ঝিম ধরিয়ে দেয় জীবনের কাব্যিক মুহূর্তে
তাল লয়বিহীন বেসুরো গানের মত
পড়ে থাকি আমি তখন গৃহভ্যন্তরে
যেন পেটের নিচে ডিম নিয়ে বাতে বসেছে
চার বছরের ঘারছোলা মুরগি
তবুও আনন্দে নাচে মন
যখন দেখি সদ্যজাত তুলতুলে ছানাগুলো
জন্মের আনন্দে মাতিয়ে তোলে বাড়িটাকে।
আলী এরশাদ
কিছুই হয়নি স্বাভাবিক
আমার দুখের সাথী হয়ে কেঁদেছিল আকাশ বাতাস;
এলোমেলো ঝড় আর অঝোর ধারায় নেমেছিল বৃষ্টি।
কাকভেজা প্রকৃতির সাথে
ভিজেছিল আমারও বালিশ।
আকাশ আমায় ডেকে বলেছিল দেখো চেয়ে বন্ধ আমার বুকের মাঝে সহগ্র বছর ধরে
জমে আছে কতো বেদনার জল।
উত্তরে বলেছি হেসে,
তোমার চোখের জল আমার দুখের কাছে কিছুই তো নয়।
কানে কানে বলেছিল শীতল বাতাস দুঃখ করো না বালক,
প্রতিটি ঝড়ের পর নতুন দিনের পথচলা শুরু হয়
আঘাত না পেলে কখনো কী হয় কেউ খাঁটিযোদ্ধা?
পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে সমস্ত বন্ধন-ভাঙনের সাক্ষী আমি
জীবন এমনই হয়।
একদিন থেমে যাবে তোমার বুকের ঝড়
জীবন আবার হবে স্বাভাবিক। তাকেও বলেছি হেসে,
আজ থেকে যে ঝড়ের শুরু হলো বুকের ভেতর
মরন না হলে কখনো তা থামবার নয়।
আজও ভেজে বালিশ আমার আজও বয় এই বুকে ঝড়;
গড়িয়েছে সময় অনেক কিছুই হয়নি স্বাভাবিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।