শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার হাজার ধর্ম আর আড়াই হাজারের মতো ভাষা আছে। এখানে কোনো কিছুই অবিনশ্বর নয়।মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও জীবের ন্যায় ভাষার ও মৃত্যু হয়।ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ টি ভাষার মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্বের প্রভাবশালী ও পরাশক্তি সমূহ ও অনেক ধর্মগ্রন্থসমূহের ভাষা ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে চর্চার অভাবে। মহাকবি জন মিল্টন, ফরাসী ও ব্রিটিশ দার্শনিক রেনে দেকার্তে,ও থমাস হবস,জন লক,বার্কলে, ডেভিড হিউম প্রমুখ জ্ঞানী ব্যক্তিগণ ইংরেজির পাশাপাশি তাঁদের অনেক লেখাই ল্যাটিন ভাষায় লিখেছিলেন টেকসই হবে ভেবে কিন্তু হলো তার বিপরীত ইংরেজি টিকে গেলো আর ল্যাটিন বিলুপ্ত হলো।অথচ ইংরেজি ভাষার প্রধান কবিও নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার কিন্তু সে কাজটি করেননি। তিনি
তাঁর নিজ মাতৃভাষার ব্যাপারেও সাহিত্য কর্মের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাপরাক্রমশালী ভাষা সংস্কৃত ও আজ স্রেফ ধর্মগ্রন্থ ধর্মোপসনালয় ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ। গ্রীক ভাষায় অন্ধ মহাকবি হোমারের লেখা অমর মহাকাব্য ইলিয়াড› ও ‹ওডিসি›।গ্রীক ভাষা এখনো আছে তবে তা ঠিক ঐ মহাকাব্যগুলোর ভাষা নয়।যে গ্রীক ভাষায় ঐ মহাকাব্যসমূহ লেখা হয়েছিল তা আজ বিলুপ্ত। এর রচনা কাল ছিলো খ্রীস্টপূর্ব ৭০০অব্দে।পক্ষান্তরে,তৎকালীন পরাশক্তি পারস্যের প্রভাবশালী ফার্সি ভাষায় সেদেশের বীরদের বীরত্ব ও মাহাত্ম্য নিয়ে লেখা ফেরদৌসীর অমর মহাকাব্য “ শাহানামাগ্ধ বিশ্বের অনেক দেশের ভাষায় অনুদিত হয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।এটা সম্ভব হয়েছে কেবল ফার্সি ভাষার ব্যাপক চর্চা অব্যাহত থাকার কারণে।আরবি আলিফ-লায়লা ওয়া লাইলাও এক রোমাঞ্চকর রহস্যপোন্যাস।এটিও বিশ্বের প্রায় সকল দেশও ভাষায় সমাদৃত হয়েছে অনুদিত হয়ে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় এটাই প্রমাণ হয় যে,যে ভাষার সাহিত্য যত বেশি,উন্নতও যে ভাষার চর্চা যত বেশি হবে সে ভাষা টিকে যাবে এবং বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।কাজেই আমাদের হাজার বছরের অধিক পুরনো বাংলা ভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা কইরতে হৈলে এর চর্চা বাড়াতে হবে প্রমিতের পাশাপাশি ২৫-৩০% লোকজ শব্দ ব্যবহার করতে হবে। আর সর্বোপরি বাংলিশ বাংরেজির আগ্রাসন ঠেকাতে হবে দৃঢ়চিত্তে নচেৎ আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলা ভাষা বিলুপ্তও ইতিহাস হয়ে যাবে। এর শূন্যস্থান দখল করবে এক জগাখিচুড়ি কৃত্রিম ভাষা। তাই আসুন সবাই সজাগ, সচেতনও সতর্ক হই।আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা রক্ষায় কাঁধে কাঁধ হাতে হাত মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য হাজার বছরেরও অধিক প্রাচীন। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন ‹চর্যাপদ› সহ ‹কলিমা ই জাল্লাল›, কিংবা শূন্য পুরান› কিন্তু আদি বাংলা ভাষাতেই লেখা। তবে তখনকার বাংলা ভাষা আর এখনকার বাংলা ভাষা কিন্তু একরকম নয় অবয়বে। প্রকৃতি, মানুষ ও ভাষার ধর্মই হলো বদলে যাওয়া বা বিবর্তিত
বর্তমানে আবর্তিত হওয়া। তবে ঔপনিবেশিক দেশ গুলিতে দেখা যায় তারা আত্মপরিচয় সংকটে ভোগে সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে ‹আইডেন্টিটি ক্রাইসিস›( আত্ম পরিচয় সংকট) আফ্রিকান, ক্যারিবিয়ান ও এশিয়ান দেশসমূহে বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে এই সংকট অধিক ঘনীভূত। ডেরেক ওয়ালকোট ও চিনুয়া আচেবে তাঁদের কবিতা ও উপন্যাসের মাধ্যমে এই সমস্যাটির প্রেক্ষাপট ও সমসাময়িক বাস্তবতা অত্যন্ত চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন।
তারা কেবল আমাদের ভূূূূখন্ডেই উপনিবেশ স্থাপন করেনি বরং আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচার,ভাষা সাহিত্য, সমাজ সভ্যতা এমনকি আমাদের মেধা মনন,মনোজাগতিক ও চিন্তার ক্ষেত্র পর্যন্ত তা বিস্তৃত করেছে।স্বাধীনভাবে কোনো কিছু করার স্বকীয়তা ও আমরা হারিয়েছি অনেক আগেই। এমনকি আমরা আজ স্বাধীনভাবে চিন্তা ও করতে পারি না। আজকাল আমাদের তথাকথিত সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত ও সুধীজনদের মুখে বাংলিশ তথা বাংরেজি শুনলে বোঝা যায় বাংলা ভাষা আজ কতোখানি হুমকি ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর এফ এম রেডিওর জকির মুখে শুনলেতো মনে হবে ভিনগ্রহের বাসিন্দা এলিয়েন বচন শুনছি। আধুনিকতার নামে আধিপত্যবাদ কিংবা পরাধীনতার শৃঙ্খল নয়; প্রমিত ও লোকজ ভাষার সামঞ্জস্যপূর্ণ সংমিশ্রণ একদিকে আমাদের ভাষাকে যেমন করবে ইতিহাস,ঐতিহ্য, শ্যাম সুষমায় মন্ডিত,আত্নীকরণে সমৃদ্ধ ও শ্রুতিমধুর, বৈচিত্র্যময়,প্রাঞ্জল, প্রাণোচ্ছল।নতুন ধারা পাবে গতিধারা।হবে শাণিত,প্রাণিত ও ক্ষুরধারা।
বাংলা ভাষার অনত্যম প্রাচীন কবি আবদুল হাকিম বঙ্গবাণী› কবিতায় যখন বলেন, দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায় / নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়?গ্ধতারপর বলেন, যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/সেসব কাহার জন্ম নির্নয় ন জানি?” তখন ইহা লোকজ ভাষাকে ছাড়িয়ে,ছাপিয়ে আকাশ,বাতাস কাঁপিয়ে প্রমিতের অধিক প্রমিত মনে হয়।
আত্নীয় ও সম্পর্কবাচক শব্দের ব্যবহার যেমন মাজান, বাজান, ভাইজান, খালুজান, নানাজান, নানীজান, দাদাজান, দাদীজান, বুজান, তালুই, মাঐ, বেয়াই, বেয়াইন, ভাইসাব, ভাবীসা›ব, মিয়াসা›ব,খালাজান,চাচীজান,মামীমা, মাসী,পিসী,মেসোমশাই,ঠাকুরমা,ঠাকুরপো ইত্যাদির ব্যবহারে প্রমাণ হয় কবি আর কেউ নন। তাদের অতি নিকটজন ও সমাজভুক্ত আত্নার আত্নীয়।
আর কবির আপন হাতের মায়াবী স্পর্শে ও জাদুকরী কলমের ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয় নতুন শব্দ যা অভিধান বহির্ভূত। তবে তা বাংলা ভাষার শব্দ সম্ভারকে সমৃদ্ধ ও ঋদ্ধ করে।বৃদ্ধি করে শব্দভান্ডার
য়ার সম্ভাবনা অগাধ,অপার।গতি দূরন্ত, দূর্বার এবং কবি যেখানে নির্ভার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।