শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় কবি মহাদেব সাহা। প্রেমের কবি, ভালোবাসার কবি মহাদেব সাহা ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানঘড়া গ্রামে পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গদাধর সাহা এবং মাতা বিরাজমোহিনী সাহা। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক, প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‹এই গৃহ এই সন্ন্যাস›।মহাদেব সাহা তাঁর কাব্য প্রতিভার জন্য ১৯৮৩ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে ১৯৯৫ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার, ২০০২ সালে খালেকদাদ চৌধূরী স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০০৮ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার অন্যতম।
কোনো কবিকে একটি নির্দিষ্ট বিশেষণে বিশেষায়িত করা ঠিক নয়। একজন লেখক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখে থাকে, তবে একেকজন লেখকের একেকদিকে লেখার এক ধরনের ঝোঁক থাকে।
মহাদেব সাহাও তেমনি বিভিন্নদিক নিয়ে লিখে থাকলেও তার কবিতায় প্রেমের দিকটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রেমের কবিতা, ভালোবাসার কবিতা, মানবতার কবিতা তার হাতে মূর্ত হয়ে উঠেছে।
‹অপেক্ষা› কবিতায় তাঁর অপেক্ষা দেখে, তার প্রেমের গভীরতা দেখে বিস্মিত হই।
‘তোমার একটু দেখা পাবো বলে
এককোটি বছর দাঁড়িয়ে আছি
এই চৌরাস্তায়
শুধু একবার দেখবো তোমাকে
শুধু তার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা
এই ঢেউ গোনা;
কতো অশ্রুজল শুকালো দুচোখে
কত শীতগ্রীষ্ম পার হয়ে গেলো
অপেক্ষা ঘুচলো না,’
মহাদেব সাহার কবিতা পড়তে পড়তে পাঠকের হৃদয় প্রেমে বিগলিত হয়ে ওঠে। প্রেম যে শুধুই দুটি দেহের মিলন নয়, প্রেম যে শুধুই পাওয়াতেই পূর্ণ নয়, এই কথাগুলো কবি বলেছেন দৃঢ়তার সাথে। গভীর দর্শন লুকিয়ে রয়েছে তার কবিতায়।
প্রিয়জনের একটি চিঠির জন্য হৃদয় কেমন ব্যাকুল হয়ে থাকে কবি তা কলমের আচড়ে জীবন্ত করে তুলেছেন।
‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙ্গুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।
চুলের মতন কোনো চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও ...
বর্ণণা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দিও’
সহজ ভাষায় এমন গভীর প্রকাশ, পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে যায়। চিত্রকল্পটি এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা পৃথিবীর প্রতিটি হৃদয়ের শ্বাশ্মত চাওয়া।
‹একবার ভালোবেসে দেখো› কবিতায় কবির সরল স্বীকারোক্তি, কার জন্য তিনি কবিতা লিখেন, কে তার কবিতার প্রেরণা?
‘তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসো আর
এই মুখে কবিতা ফুটবে না,
এই কণ্ঠ আবৃতি করবে না কোনো প্রিয় পঙ্ক্তিমালা
তাহলে শুকিয়ে যাবে সব আবেগের নদী।
আমি আর পারবো না লিখতে তাহলে
অনবদ্য একটি চরণ, একটিও ইমেজ হবে না রচিত,
তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসো তবে
কবিতার পান্ডুলিপি জুড়ে দেখা দেবে ঘুরে ঘুরে অনাবৃষ্টি, খরা।’
কবির কবিতা লেখার সমস্ত শক্তি তার প্রেয়সীর অনুপ্রেরণা তা তিনি দ্বীধাহীন চিত্তে ছন্দে ছন্দে লিপিবদ্ধ করেছেন। ‘তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি’ কবিতায় কবি প্রকৃতির কাছে ছুটে গেছেন প্রকৃতির কাছে একটি শব্দের খোঁজে, প্রিয়াকে তো আর যেনতেন শব্দে চিঠি লেখা যায় না।
‘তোমাকে লিখবো বলে একখানি চিঠি
কতোবার দ্বারস্ত হয়েছি আমি
গীতিকবিতার, কতোদিন মুখস্ত করেছি এই নদীর কলোল
কান পেতে শুনেছি ঝর্ণার গান,গ্ধ
জীবনের গূঢ়তম চিঠিটি লিখতে উপযুক্ত শব্দের জন্য কবির হাজার বছরের অপেক্ষা।
্রতোমাকে লিখবো বলে জীবনের গূঢ়তম চিঠি
হাজার বছর দেখো কেমন রেখেছি খুলে বুক।গ্ধ
মহাদেব সাহার প্রেমের কবিতা শুধু দুটি নর-নারীর প্রেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তার প্রেম কখনো কখনো এসবের ঊর্ধ্বে উঠে, মা-মাটি, দেশের প্রতি বিকশিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।