পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বছর ২৯ জুলাই ঢাকার কুর্মিটোলায় ফুটপাথে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছিল। সে আন্দোলনের ঢেউ ঢাকা শহরের গন্ডি পেরিয়ে সারাদেশেই লেগেছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বড় বড় শিরোনাম হয়েছিল। প্রধানমন্ত্র শিক্ষার্থীদের সব দাবী মেনে নিয়ে অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। পাশাপাশি আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিতর্কিত ও অনাকাঙ্খিত তৎপরতা ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়েছিল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক সময় ঘরে ফিরে গেলেও নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশিত দাবী পুরণ হয়নি। সেপ্টেম্বরের শেষে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরের যে দৃশ্যপট গণমাধ্যমে উঠে আসে, তাতে বলা হয়, সড়কের অবস্থা আগের মতই বিশৃঙ্খল, গাড়ী চালকরা আগের চেয়েও বেপরোয়া এবং সড়কের অবস্থা আগের চেয়েও অনিরাপদ। অনৈতিক দাবীতে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়ে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে দেশের কোটি কোটি মানুষ জিম্মি, ব্যক্তিগত গাড়ী চালক, যাত্রী, শিক্ষার্থীদের কালিমালিপ্ত ও লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরের মাসেই ঘটেছে। নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাজপথে নেমে আসা শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে যে ৯ দফা দাবী জানিয়েছিল, ৮ মাস পেরিয়ে আসার পর এখন দেখা যাচ্ছে, সে ৮ দফা দাবীর ৭টিই এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে আরো অসংখ্য মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীও আছে। পিতার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সময় যন্ত্রদানবের চাকায় শিশুর পিষ্ট হওয়ার খবরও ছাপা হয়েছে। এসব ঘটনার বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবার দেখা যাচ্ছে রাজধানীতে বাসের চাকায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার আহমদ নিহত হওয়ার পর।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর নদ্দায় সুপ্রভাত বাস সার্ভিসের একটি বাসের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল্স( বিইউপি)’র শিক্ষার্থী আবরার আহমদ চৌধুরী। প্রিয় সহপাঠির মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ বিউপি শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে রাজপথে নেমে এসে সড়ক অবরোধ ও আন্দোলনের ঘোষনা দেয়। তাদের এই ঘোষনার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে অন্যান্য প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিলে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন নতুন মাত্রা লাভ করে। মঙ্গলবার বিকালে কোটা আন্দোলনের নেতা এবং ডাকসুর নব নির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নুরু বিইউপি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। নিরাপদ সড়কের দাবীতে এবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবী তুলে ধরেছে এবং এসব দাবী বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ত্যাগ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সড়ক অবরোধ তুলে নিতে ঢাকা দক্ষিনের নব নির্বাচিত মেয়রসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কমকর্তারা দাবী বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোনো আশ্বাসের উপর আস্থা রাখতে অপারগতা প্রকাশ করে রাজপথে থাকার ঘোষণায় অটল রয়েছে। মঙ্গলবার সারাদিন প্রগতি সরনী এলাকাসহ আরো বেশ কয়েকটি স্থানে দিনভর বিক্ষোভ করার পর গতকাল দ্বিতীয় দিন থেকে সারাদেশে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীতে আবরার আহম্মদ চৌধুরী ছাড়াও মঙ্গলবার একদিনে দেশের ১০ জেলায় সড়কে পিষ্ট হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের দেশ কাঁপানো আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের সমর্থন ছিল। সে আন্দোলনে সরকারের টনক নড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী থেকে থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারী দলের প্রভাবশালী নেতাদের কথাবার্তায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শিক্ষার্থীদের সব দাবী মেনে নেয়ায় দেশের মানুষ ভেবেছিল, এবার হয়তো সড়ক নিরাপত্তায় দাবী ও প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে। মূলত: বিদ্যমান কোনো আইনেই সড়ক পরিবহনের মালিক-শ্রমিক -ড্রাইভারদের বেপরোয়া হন্তারকের ভ’মিকা থেকে নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর জাতীয় সংসদে যে বহুকাঙ্খিত সড়ক নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে তা শিক্ষার্থী বা যাত্রীদের নিরাপত্তার চাইতে শ্রমিক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবীর প্রতিফলনই বেশী দেখা গেছে। আইন যেটুকু আছে তারও কোনো বাস্তবায়ন না থাকায় অযোগ্য, অদক্ষ গাড়ী চালকদের বেপরোয়া গাড়ী চালনা বন্ধ হচ্ছে না। কমছে না রাজপথে ও মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল। বেপরোয়া গাড়ী চালনায় যত্রতত্র দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে। সেই সাথে গণপরিবহণে চালক-শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণ, বিশৃঙ্খলা, ট্রাফিক পুলিশ ও নানা সংগঠনের চাঁদাবাজি, সিটি সার্ভিসে ভাড়া নিয়ে মতলববাজিতে জিম্মিদশায় পড়েছে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোর সাধারণ যাত্রীরা। এসব ক্ষেত্রে দেখার যেন কেউ নেই। তাদের উপর কোনো কর্তৃপক্ষেরই যেন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দুই কোটি মানুষের মেগাসিটিতে গণপরিবহনে এমন নৈরাজ্যকর অবস্থা আর চলতে পারেনা। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে অবিলম্বে সড়ক পরিবহন সেক্টরকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।