Inqilab Logo

সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

এ মৃত্যুর দায় কে নেবে

| প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

প্রতিদিনের মত পিতার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার পথে বেপরোয়া মাইক্রোবাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী ফাইজা তাহসিনা সূচির। পিতার নিরাপদ হাত থেকে গাড়ীর চাকায় মৃত্যুর দু:সহ মর্মন্তুদ ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ফইজা তাহসিনার বাবা একজন সাংবাদিক, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সহকারী সম্পাদক বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে রাজধানীতে কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তখন রাজধানীতে বেশ আড়ম্বরের সাথে ট্রাফিক পক্ষ পালিত হচ্ছিল। সঙ্গতকারণেই ট্রাফিক পক্ষে যানজট এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসার কথা থাকলেও এবার তার উল্টোটাই দেখা গেছে। বিমানবন্দর সড়কে একই পরিবারের দু’জন এবং কেরানীগঞ্জে দুই শিশু শিক্ষার্থীসহ একই দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যুর সংবাদ নাগরিক সমাজকে হতবিহ্বল করেছে। কিন্তু সড়ক-মহাসড়ক ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় প্রত্যাশিত শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। সড়কে একের পর এক মর্মান্তিক প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত বছর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবীতে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসলে দেশব্যাপী যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল এবং শিক্ষার্থীদের সেই দাবীর সাথে দেশের সব শ্রেনী পেশার মানুষ একাত্ম হয়ে তা এক গণআন্দোলনে পরিনত করেছিল। ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবী মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু ও শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
গতকাল প্রকাশিত আরেক সংবাদে জানা যায়, সোমবার রাতে রাজধানীর ভাটারায় বেপরোয়া যাত্রীবাহী বাস ফুটপাত ভেঙ্গে দোকানে উঠে গিয়ে একজন চা দোকানদার ও নৈশপ্রহরীকে চাপা দিয়ে হত্যা করে পালিয়েছে হন্তারক গাড়ীচালক। হত্যাকারী ড্রাইভার ও হেল্পারকে গ্রেফতারের দাবীতে স্থানীয়রা কোকাকোলা বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অবস্থান ও মানববন্ধন করেছে। একেকটি মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একেকটি পরিবারের উপর হতাশা ও বিষাদের ছায়া নেমে আসে। যে সন্তানদের জন্য পিতামাতা সর্বস্ব ত্যাগ করে প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে, অথবা যে পিতার আয়ে একটি পুরো পরিবারের নির্ভরতা সে সব মানুষগুলোর মৃত্যু একেকটি পরিবারকে নি:শেষ করে দিচ্ছে। রাস্তায় প্রতিযোগিতা করে, বেপরোয়া গাড়ী চালনার কারণে বা যান্ত্রিক ত্রুটি বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে এক ধরনের কৈফিয়ত হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু পিতার হাত ধরে স্কুলের পথে হেঁটে চলা শিশু এবং নিজের দোকানে কর্মরত চা দোকানদার বা নৈশ প্রহরীর এ হত্যাকান্ডের কোনো কৈফিয়ত নেই। যন্ত্রদানবের চাকায় এমন মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। একটি সহযোগী দৈনিক প্রতিদনই সড়কে মৃত্যুর সংখ্যাসহ বিবরণ ছাপছে। গতকাল প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনে গত দুই বছরে(৭১১দিন) সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ১৩০জন মৃত্যুর তথ্য দেয়া হয়েছে। অবশ্য নিরাপদ সড়ক চাই ও যাত্রীকল্যান সমিতির দেয়া তথ্যে সড়কে মৃত্যুর হার আরো বেশী। জনগণের উদ্বেগ, নাগরিক সমাজের সংক্ষোভ, নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সরকারের শীর্ষ মহলের প্রতিশ্রুতি, নতুন আইন ইত্যাদি কোনো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না সড়কে মৃত্যুর মিছিল।
জানুয়ারীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ১৬ দিনব্যাপী ট্রাফিক পক্ষ পালিত হয়েছে। ট্রাফিক পক্ষে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে হাজার হাজার মামলা হয়েছে। কোটি কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। জরিমানা থেকে আদায় করা অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নাকি ট্রাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা পেয়ে থাকে। অতএব রাস্তায় দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, ট্রাক ও গণপরিবহণ চালক-হেল্পারদের ট্রাফিক আইন ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা, ট্রাফিক লাইসেন্স ও গাড়ীর ফিটনেস নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগের বদলে মূলত ব্যক্তিগত গাড়ীচালকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ নানা রকম হয়রানি করে টাকা আদায়ে বেশী ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, যানজট ও বিশৃঙ্খলা নিরসনের ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগ এবং ট্রাফিক সপ্তাহের কর্মসূচি তেমন কোনো কাজে আসছে না। ব্যস্ত সড়কের বেপরোয়া গাড়ী চালক ফুটপাতের পথচারীকে চাপা দিয়ে, ফুটপাতের বাঁধ ভেঙ্গে দোকান বা ঘরের ঘুমন্ত মানুষকে চাপা দিয়ে নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যাওয়ার কারণেই এমন মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। নিহতদের পরিবার মৃত্যুর কোনো বিচার বা ক্ষতিপুরণ পাচ্ছে না। অপ্রাপ্তবয়স্ক, লাইসেন্সবিহীন, ফিটনেস বা রুট পারমিটবিহীন গাড়ীচালক ও মালিকরা মাসোহারার বিনিময়ে ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ রেখে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চার পরিবারের প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপুরণ দেয়ার একটি নির্দেশ জারি করেছে আদালত। যদিও কোনো টাকার অঙ্কেই জীবনের ক্ষতিপুরণ বা মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। প্রত্যেক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা হতাহতদের এমন ক্ষতিপুরণ দিতে বাধ্য হওয়ার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সাথে অযোগ্য, অদক্ষ চালক ও ফিটনেস বিহীন গাড়ী রাস্তায় নামানোর সুযোগ কঠোরভাবে বন্ধ হওয়া আবশ্যক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন