Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দ্বিতীয় স্বামীর বাড়িতে চতুর্থ স্বামীর হাতে খুন হলেন নাসিমা

ঘটনার পর শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন চতুর্থ স্বামী

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:৫৪ এএম

কুমিল্লায় দ্বিতীয় স্বামীর দেয়া বাড়িতে চতুর্থ স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন নাসিমা আক্তার নামে এক গৃহবধূ। সোমবার রাত ৯টায় নগরীর শাকতলা থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার নিহতের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার পর শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন নিহতের চতুর্থ স্বামী মেহেদী হাসান।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ বছর আগে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের মগের কলমিয়া গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে নাসিমা আক্তারের সঙ্গে নোয়াখালীর চাটখীল উপজেলার জায়েকবাজার এলাকার প্রবাসী আলমগীর হোসেনের বিয়ে হয়। নাইমুর রহমান অনি নামে তাদের সংসারে এক ছেলে রয়েছে। কিছুদিন পর প্রবাসী আলমগীর হোসেনকে তালাক দিয়ে আপন দেবর প্রবাসী শহীদ উল্যাহকে বিয়ে করেন নাসিমা। এ সংসারেও নাজিমুর রহমান অমি নামে এক ছেলে আছে। নাসিমা আক্তারের নামে কুমিল্লা মহানগরীর শাকতলায় সাড়ে তিন শতক জমি ক্রয় করে একটি টিনসেড বাড়ি নির্মাণ এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন শহীদ উল্যাহ। পরে শহীদ উল্যাহ প্রবাসে চলে যাওয়ার সুযোগে হুমায়ুন কবির নামে এক যুবকের সঙ্গে নাসিমা অবাধে চলাফেরা শুরু করেন। একপর্যায়ে শহীদ উল্যাহকে তালাক দিয়ে হুমায়ুনকে বিয়ে করেন নাসিমা।

এরই মধ্যে ফেসবুকে নাসিমার সঙ্গে পরিচয় হয় বরুড়া বাজারের মেহেদী ফ্যাশনের মালিক ও বরুড়া উপজেলার আগানগর গ্রামের মেহেদী হাসানের। হুমায়ুনের সহযোগিতায় নাসিমা নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে ৩০ লাখ টাকা কাবিনে মেহেদীকে বিয়ে করেন। পরে নাসিমার বহুবিবাহ ও হুমায়ুনের সঙ্গে অবৈধ সম্পেকের বিষয়টি জানতে পেরে মেহেদী যোগাযোগ বন্ধ দেন। এর জেরে নাসিমার যৌতুকের মামলায় জেলে যেতে হয় মেহেদীকে। পরে মেহেদীর পরিবারের হস্তক্ষেপে নাসিমা মামলা প্রত্যাহার করে মেহেদীকে জামিনে মুক্ত করেন। এরপর নতুন করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন তারা। সালমান জাহিদ ত্বকী নামে এ সংসারে দেড় বছরের এক সন্তানও আছে। অমি নোয়াখালীতে বাবার বাড়িতে থাকে। অনি মায়ের বাসায় থেকে শাকতলা হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ত্বকী মা-বাবার সঙ্গে থাকত।

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে নাসিমার বেপরোয়া জীবন-যাপন ও চলাফেরা করার কারণে তার ৪টি সংসারেই কলহ দেখা দিয়েছিল। তার শেষ পরিনতি হলো মৃত্যু। সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে এসে অনি দেখে বাড়ির গেইটে তালা ঝুলছে। মা-বাবার মোবাইল বন্ধ পেয়ে সন্ধ্যায় অনি বাড়ির দেয়াল টপকে খোলা জানালা দিয়ে গেইটের চাবি নেয়। এরপর গেইট খোলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে মায়ের মরদেহ কম্বলে মোড়ানো। মেহেদী হাসান ও ত্বকী নেই। খবর পেয়ে ৯টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন অর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহত নাসিমার ভাই মনির হোসেন বলেন, বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব রুমের বক্স খাটে নাসিমার মরদেহ কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখেছিল ঘাতক মেহেদী। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এদিকে নিহতের ছোট ছেলে ত্বকী ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ থাকলেও ঘাতক মেহেদীর ছোট ভাই তুগা ফোন করে পুলিশকে জানিয়েছেন ত্বকীকে কেউ একজন বরুড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ বলেন, নিহতের গলায় দাগ দেখে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। ঘাতককে ধরতে অভিযান চলছে।



 

Show all comments
  • Mehedi নিরদোষ
    Total Reply(0) Reply
  • Mosharraf ২২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:১৮ পিএম says : 0
    দেশের প্রচলিত আইনে হয়ত মামলা হবে...তবে আইনশৃঙ্খলার সংশ্লিষ্ঠ বাহিনীর উচিত হবে নিহত মহিলার উশৃঙ্খল ভ্যাবিচার কর্মকান্ড এবং একের পর এক পুরুষের জীবন নষ্টের বিষয়গুলি আমলে এনে মামলাটি যেন এমনভাবে কোর্টে উঠান যাতে হত্যাকারির কোন গুরুদণ্ড না হয়ে সামান্য লঘুদণ্ড হয়....কারন সেই মেহেদী হাসান নিজে প্রতারনীর হাত থেকেই শুধু রক্ষা পাননি ভবিষ্যতে আরও অনেককে প্রতারনার হাত থেকে রক্ষা করেছেন...
    Total Reply(0) Reply
  • forhad ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ৯:৪৮ এএম says : 0
    mosharraf ভাইয়ের সাথে আমি একমত।
    Total Reply(0) Reply
  • Sanuwar ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    Amon mohila ke kill kora thik asea. Killer er logu dondo hoya dorkar. Karon oi mohila akta virus.
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ মোঃ নাহিদ মাহমুদ ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:৪৫ পিএম says : 0
    দ্বিতীয় স্বামী হলো মূল অপরাধী।আপন ভাইকে ধোকা দেয়া মেয়েকে বিয়ে বাড়ি করে দেয়া হলো মেয়েটির সব চাহিদাকে উস্কে দেয়া,তার কৌশলকে খুলে দেয়া,তাকে পুরুষ শিকারী হওয়ার পথে এগিয়ে দেয়া,পরিণতি তিনটি শিশুর অনিশ্চিত জীবন।
    Total Reply(0) Reply
  • RUBEL AHMED ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:০৬ এএম says : 0
    যদিও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ, কিন্তু আমার মনে হয় মেহেদি সঠিক কাজ করেছে।। এমন দুঃছরিত্রা মহিলার এটাই পাপ্য ছিল, আমি হলেও এটাই করতাম।
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    আমি মনে করি মহিলাটা অনেক খারাফ তাই বলে আইন নিজের হাতে নিয়ে তাকে মেরে ফেলা এটা অপরাধ তাই তাকে তো আইন নিশ্চয়ই সাজা দিবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ