Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বারিধারায় এটিএম বুথে নিরাপত্তাকর্মী খুন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর বারিধারার জে ব্লকের ৬নং রোডের যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তকর্মী মো. শামীম আহমেদকে (২৪) হাতুরি পেটা করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার ভোর ৬টার দিকে হাতিল ফার্নিচারের শোরুমের নিচতলার বুথ থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, নিহতের ভাইর মোবাইল নিয়ে দ্ব›েদ্বর জের ধরে ওই কোম্পানির অন্য বুথের কর্মীরা তাকে হত্যা করেছে। পুলিশ বলছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে ভাটারা থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

এদিকে পৃথক ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থেকে অজ্ঞাত গলিত এক ব্যক্তি (৪০) ও কলাবাগনের একটি বাসা থেকে রুনা আক্তার (২০) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত নিরাপত্তকর্মী শামীমের ভাই আমিনুল বলেন, শামীম ও তিনি এলিট ফোর্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়িয়া থানার প্রাণকৃষ্ণ গ্রামে। বাবার নাম নজরুল ইসলাম। আমিনুল বলেন, যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী জহিরের কাছ থেকে মোবাইল কেনা নিয়ে তার দ্ব›দ্ব চলছিল। এ নিয়ে গত রোববার জহিরের সাথে দেখা হলে তর্কাতর্কিও হয়। পরে জহির বুথের জোন কমান্ডার ফারুককে দিয়ে আমাকে ও আমার মামা মিজানকে মারধর করায়। বিষয়টি ওইদিন সন্ধ্যায় গুলশান থানার এসআই সাইফুল মিমাংসা করে দেন। আমাকে ও মামাকে মারধরের বিষয়টি শামীম জেনে ফারুককে রাতে কল করে বকাবকি করেন। তাকে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ফারুকও শামীমকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।
আমিনুল আরও বলেন, রোববার রাতে তার ভাই শামীম রাতে ডিউটিতে যায়। তার ধারণা, গতকাল ভোরের দিকে জহির, ফারুকসহ ৬ জনে মিলে ব্যাংকের বুথে গিয়ে শামীমকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।

ভাটারা থানার এসআই শাহাবুদ্দিন মুন্সী বলেন, গতকাল ভোর ৬টার দিকে আরেক নিরাপত্তাকর্মী ওয়ালিউল্লাহ শামীমকে ডিউটি বদলি দিতে এসে বুথের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় শামীমের লাশ দেখতে পায়। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। হাতুরি দিয়ে মাথা থেতলে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাসুদুর রহমান মিয়া বলেন, এ ঘটনায় বুথের টাকার ভোল্ট অক্ষত আছে। ২টি সিসি ক্যামেরা ভাঙা পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবার বলছে, ঘটনায় ৬ জন জড়িত। তবে তাদের মধ্যে থেকে শাহীন, নজরুল ও রহিমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে পুলিশের বাড্ডা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফুল করিম বলেন, এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ভোর ৬টা ২৫ মিনিটের দিকে একজন মুখোশধারী হাতুড়ি নিয়ে বুথের ভেতরে ঢোকে। এ সময় শামীম শুয়েছিলেন। ভেতরে ঢুকেই শামীমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে সরাসরি আঘাত করে ওই লোক। আঘাতের পর শামীমের মৃত্যু নিশ্চিত করে এটিএম মেশিনে আঘাত করতে থাকে মুখোশধারী। কিন্তু মেশিনটি থেকে টাকা বের করতে ব্যর্থ হলে বুথের ভেতর সিসি ক্যামেরায় আঘাত করে চলে যায় সে। অজ্ঞাতপরিচয়ের এই মুখোশধারীকে খোঁজা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ী মৃধাবাড়ী এলাকার একটি ঝোঁপ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, দেড় থেকে দুই মাস আগে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, লাশ পচে গলে প্রায়ই মমি হয়ে গেছে। মৃত্যুর কারণ লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মৃত রুনার বড় ভাই আদনান আলম বলেন, রুনার স্বামী আসিফ শাহবাগে ফুলের ব্যবসা করেন। গত দেড় বছর আগে প্রেম করে তারা বিয়ে করেন। ভুতের গলির ৮ নম্বর বাসার নিচ তলায় ভাড়া থাকতেন তারা। ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন রুনা। আদনান অভিযোগে বলেন, এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে আসিফের। গত রোববার রুনা স্বামীসহ তার বাবার বাসায় আসেন। সেখানে আসিফ মোবাইলে ওই মেয়ের (প্রেমিকা) সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এদিকে স্বামীকে মোবাইলে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে রাগ করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্বামীর বাসায় চলে যায় রুনা। শরিয়তপুর জেলার নরিয়া উপজেলার শালদ গ্রামের নুর মিয়ার মেয়ে রুনা। তার বাবা-মা ও অন্য ভাইবোনেরা ভুতের গলির ৬২/২ নম্বর বাসায় থাকেন।

আদনান আরও বলেন, গতকাল সকাল ৬টার দিকে আসিফের ভাই সজিব গাজীপুর থেকে তাদেরকে ফোন করে জানায় যে, রুনা ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে তারা ওই বাসায় গিয়ে খাটের উপরে শোয়ানো অবস্থায় রুনাকে দেখতে পান। তখন থেকেই তার স্বামী আসিফকে পাওয়া যায়নি। বড়ভাই আলমের অভিযোগ, আসিফই রুনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়েছে।
কলাবাগান থানার এসআই মো. আরিফ জানান, রুনার গলায় কালচে দাগ রয়েছে। স্বামী আসিফ পলাতক রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ