শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
সায়ীদ আবুবকর
জীবননামা
কাঁটার উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গেছে সমস্ত দিন
ছুরির উপর দিয়ে ছুটতে ছুটতে গেছে সমস্ত রাত
ঝড়-বর্ষায় আর প্রচণ্ড শীতে, শুধু বসন্তহীন,
কেটেছে জীবন, কেউ বাড়ায়নি ভালোবেসে দয়ার্দ্র হাত
নাকে এসে ঘা মেরেছে কেবলি সুবাস, ফুল থেকেছে আড়াল
বেজেছে মাতাল সুর কর্ণকুহরে, দেখা হয়নি কোকিল
এ এমন বেহালা, যা কেবলি বেসুরো বাজে, কেটে যায় তাল
এ এমন পদাবলি, পঙক্তিতে নেই কোনো ছন্দ ও মিল
হিসেবের হালখাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে বানিয়েছি কাগজের ঠোঙা
অনাদায়ী রয়ে গেছে প্রাণের পাওনা যত, পড়ে গেছি পাঁকে-
জীবন কি-উত্তাল সমুদ্র, সেখানে যে ভাসিয়েছে ডোঙা
সলিল-সমাধি তার অনিবার পরিণতি, কে বাঁচাবে তাকে!
এই তো জীবন, তবু কোথায় পালাই, হায়, জীবনকে থুয়ে-
ছুরির উপর দিয়ে ছুটি, তবু থাকি আমি এ জীবন ছুঁয়ে।
বেলাল আহমেদ
জন্মান্ধ বধির ফটোগ্রাফ
গোরস্থানে তুমুল খোঁড়াখুঁড়ি,এক পাল কঙ্কাল হাতুরি হাপরে
নৈঃশব্দ্যে ভাঙছে
দেশ মাতৃকার স্বপ্নজীবি মেরুদন্ড! লাঞ্ছিত দেহের অনবদ্য চিৎকারে জেগেছে চতুস্পদী সারমেয়,প্রভুভক্ত প্রতিবাদী চেতনাবোধ ।
আঁধারের অতল গহ্বরে কেবল জন সমুদ্র হারিয়েছে বিবেক - মনুষ্যত্ব, মেঘের গর্ভে কাতরায় অদ্ধাবধি গগনবিদারী রোদন
রিমঝিম বৃষ্টির বিবাগী দুপুর উপুর হয়ে রচে শোক সংক্রান্ত মৃত্যুপুরির মহাকাব্য, যে পদ্যাংশে লুকায়িত পরিত্যক্ত স্বপ্নের বায়োস্কোপ,
জন্মান্ধ বধির ফটোগ্রাফ।
জান্নাতুল ফেরদৌসি
এক ঝটিকা বৃষ্টি
এসো এক ঝটিকা বৃষ্টির ধারা
মৃদু হাওয়ার পরশ নিয়ে
ক্ষুব্ধ এক শীতের সকাল বেলায়
রাতভোর কুয়াশা ঝরে টুপটাপ
বাতাসে শীতল ছোঁয়া
মটরশুঁটি মিষ্টি রোদ পোহায়
শিশিরের বিন্দু হাসে সবুজ ঘাসের ডগায়
এসো এক ঝটিকা বৃষ্টির ধারা
এসো অপ্রত্যাশিত নীলাভ উষ্ণতা
একাকী কোন প্রদীপের প্রান্তে
পরস্পর যেমন আগুনের সাথে উত্তাপ
এসো এক ঝটিকা বৃষ্টির ধারা
একাকীত্বের গ্লানি ধুয়ে
অক্ষত নৈসর্গিক মনোরথে
কাটা কম্পাসের দ্বৈত সত্তার মত
একই বিন্দুতে অঙ্কিত হোক জীবন্ত বৃত্ত।
মোস্তফা নূর
অতল খুঁজেছি
সমুদ্রে ডুবেছি অতল খুঁজেছি অবিরাম
এখানে কে আছো, ডুবিয়ে নেবার জলপরী
সামান্য জলের জোগান দেবেকি চোখ ধো’ব
শরীর ভাসিয়ে ছিলাম ফেনায়; আহামরি।
আমার পেছনে ঝরছে সময় টুপটাপ
দেখেছি তোমার পেছনে আরেক ডুবুচর
বিপনীবিতান খুলবে বলেই জলছবি
ফেরি করে ফেরা দিনকাল কাটে ভয়ঙ্কর!
যে জল ছোঁয়না রঙের কোরক উদ্ভিদের
বর্ণিল সুন্দরে নাচে জলজীব মাছজাত
সেই জল খুঁজি, দেবেকি সন্ধান! আগে বলো
মোহভেদি প্রাণ যেনো পায় তার সংবাদ।
জলে বেঁচে আছো আছে শ্বাস জানি অক্সিজেন
আছে বাতাসের নিখাঁদ জোগান বুদবুদ
বলছে জীবন ওখানে গভীর সুবিশাল
যেখানে তুলছো তুমি, প্রবাহমান প্রদ্যুত।
এস এম রাকিব
শ্রাবণ মেঘের ডানায়
বরষার কাঁদা জলে মোহময় মুগ্ধ শ্রাবণ
ফেরারী মেঘের বুক চিরে দুষ্টু বালিকার
হাসির ঝিলিক
মাঠের পর মাঠ ষোড়শীর বিছানো আঁচল
জুড়ে রোদ বৃষ্টির নিরন্তর লুটোপুটি
ঘাসের ডগায় দানা দানা স্বপ্নের অবগাহন।
পূব আকাশে প্রেয়সীর আচমকা চকিত
চোখের পলক
হৃদপিন্ড জুড়ে হিম শীতল বিস্ফোরণ,
বিরহী বুকের কার্ণিশ জুড়ে অঝোর রক্ত ক্ষরণ।
মধ্যবিত্ত ইচ্ছে গুলোর ফরমালিন সুখ
খুজে ফেরার নিটোল প্রয়াস।
মাহমুদা মৌ
আরো একবার জন্মাতে চাই
তুমি না বড্ড আবেগী
কারনে- অকারনে মনের দরজায় কড়া নাড়ো
হোক সে ভোর ....হোক সে খাড়া দুপুর
হোক সে রাত গভীর
সে-ই কবেই তো সব চাওয়া - পাওয়াগুলো
জলাঞ্জলী দিয়ে গেছো চলে ; দু-চোখে অশ্রু ঝরিয়ে
তবে কেনো ...কারনে অকারনে কড়া নাড়ো
আমি আরেকবার জন্মাতে চাই বৃক্ষ হয়ে
তোমার বাড়ির দরজায় কৃষ্ণচূুড়া গাছ হয়ে
ঠায় থাকবো দাঁড়িয়ে
মিনতি করছি - বার বার বিধাতার কাছে
মানুষ নয় আমাকে বৃক্ষ হয়ে জন্মাতে দিও আরেকটি বার
ফুল হয়ে ফুটবো ; পাতা হয়ে ছায়া দেবো
দক্ষিনা বাতাসে আদরে জড়াবো
বুঝতেও পারবেনা
তুমি কারনে - অকারনে নিজের অজান্তেই দেখছো আমায়
না পেলাম তোমায় নিজের করে
শুধু দু’চোখ ভরে দেখে নেবো ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।