পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত কিছু অপ্রীতিকর, অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বা কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কোটা সংস্কারের মত ন্যায্য ও সর্বজনসমর্থিত দাবী নিয়ে আন্দোলন দীর্ঘদিন চলতে পারেনা। মূলত প্রধানমন্ত্রীর কোটা বিলোপের ঘোষণার মধ্য দিয়েই এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটার কথা। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর দুই মাসের বেশী অতিক্রান্ত হওয়ার পরও গেজেট না হওয়া এবং সরকারের বিভিন্ন মহলের তরফ থেকে নানা ধরনের কথাবার্তার কারণে এ নিয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশেষত কোটা আন্দোলনের আহŸায়ক, সংগঠকদের বিরুদ্ধে মামলা, পুলিশি হয়রানি ও রিমান্ডের ঘটনাগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংক্ষুব্ধ করেছে। আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উপর ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বার বার ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা সারাদেশে ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এক শিক্ষার্থীর পায়ের হাড় ভেঙ্গে দেয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে এসব ঘটনার প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়া থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দূরে রাখা অসম্ভব। কোটা বাতিলের পর আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীকে মাদার অব এডুকেশন খেতাবে ভ‚ষিত করেছিল। এরপর কোটা সংস্কারের গেজেট প্রকাশের দাবীর প্রেক্ষিতে মতবিরোধ এমন তীব্র আকার ধারণ করার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদ ঠেকাতে শত বছরের ঐতিহ্য ¤øান করে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি জনবিচ্ছিন্ন স্থানে পরিনত করতে যাচ্ছে কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?
দেশের রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ও সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বঙ্গভঙ্গ উত্তর বৃটিশ-বাংলার রাজনৈতিক পটভ‚মি,সাতচল্লিশের দেশভাগ, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গৌরবজনক ভ’মিকা রয়েছে। এ কারণেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিতাড়িত হয়ে গৌরব ও আত্মপ্রসাদ বোধ করেন। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে সামরিক শাসন, জরুরী অবস্থা এসেছে। কিন্তু শিক্ষা ও জাতীয় ইস্যুতে আন্দোলন-প্রতিবাদের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কখনো এমন বৈরী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কোটা আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের সাথে তুলনা করেছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশে কথিত নিষেধাজ্ঞা কিছুসংখ্যক দলবাজ লোক ছাড়া কেউই সমর্থন করছেননা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ এবং প্রফেসর একে আজাদ চৌধুরী তীব্র ভাষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করেছেন এবং যথাশীঘ্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবী জানিয়েছেন। কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনাবলী অপ্রীতিকর ও অনভিপ্রেত। মধ্যরাতে ভিসির বাস ভবনে হামলার মত ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক বেøইম গেম হলেও দুই মাসেও এ ঘটনায় কারা জড়িত তার কোন হদিস দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রী কোটা তুলে দেয়ার ঘোষনা দেয়ার পরও সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা ও পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা জাতির কাছে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।
গত রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধের ঘোষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য, ঐতিহ্য ও স্বার্থের পরিপন্থি। বিশ্বের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের নজির আছে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জাতীয় ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা অবাঞ্ছনীয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গড়ে ওঠা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বুয়েট, জাতীয় যাদুঘর, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাও রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা। দেশে এবং সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষি মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি দর্শণীয় স্থান বলে বিবেচনা করে। যে তরুন কলেজ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে, যে ব্যক্তি শিক্ষাজীবনের পাঠ চুকিয়ে অনেক আগেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে, যে ব্যক্তি ইতিহাসের শেকড় সন্ধানে বাংলা একাডেমী, ডাকসু ভবন, শহীদ মিনার, চারনেতার মাজার, জাতীয় কবি নজরুলের কবর বা মধুর কেন্টিনসহ পুরনো স্মৃতিময় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চান ; প্রভোস্ট কমিটির ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন থেকে হয়তো কেউ এ সুযোগ আর পাবেনা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার একটি উন্মুক্ত প্রান্তর। বিশ্বের সব ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত। শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন নিষেধাজ্ঞার জালে বন্দি করার মানে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভেতর থেকে অকার্যকর করে ফেলা। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাবেক ভিসি ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরাও বলতে চাই, অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধি প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।