Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ফের ছাত্রলীগের হামলা

কোটা সংস্কার আন্দোলন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর আবারও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত গতকাল মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে ফেরার পথে ছাত্রলীগ এ হামলা চালায়। দুপুরে বঙ্গবন্ধু টাওয়ার এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় তারা আন্দোলনকারীদের ব্যানার ফেস্টুন কেড়ে নেয় এবং মিছিলে অংশ নেয়া শিক্ষক ও ছাত্রীদের মারধর ও লাঞ্ছিত করে।
ছাত্রলীগের এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আঙ্গুল উচিয়ে শিক্ষকদের হুমকি দেয় এবং কর্মসূচীতে অংশ নেয়া ছাত্রীদের গায়েও হাত তুলে। ছাত্রলীগের হাতে আহত শিক্ষকদের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহোযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান রয়েছেন। এ ঘটনার ফুটেজ নিতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের দিকেও তেড়ে আসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এই প্রতিবাদী মানববন্ধন বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে। ছাত্রলীগের এই মানববন্ধনে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজ থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে দেখা যায়। অন্যদিকে, একই সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের ঢাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে আরেকটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের মানববন্ধন শুরু করলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, স্কুল কার্যক্রমবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, ঢাবি শাখার বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি রকিবুল ইসলাম বাঁধন, সাধারণ সম্পাদক আল আমীন রহমান, হাজি মুহম্মদ মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, কবি জসিম উদ্দিন হলের সভাপতি আরিফ হোসেন সহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের মুখোমুখি অবস্থান নেন। তারা মাইক ব্যবহার করে মানববন্ধনে অংশ নেয়াদের প্রতি বিভিন্ন কটুক্তি করতে থাকেন।
ছাত্রলীগের কটূক্তি উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। এর পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় মিছিলটি বিশ^বিদ্যালয়ের শিববাড়ী এলাকার শহীদ শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে পৌঁছানোর পর দুদিক থেকে একই সাথে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা তাদের উপর আক্রমণ করে। এ সময় শিক্ষকদেরও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতারা। এতে কয়েকজন শিক্ষককে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দিকে ছুটে যায়। এতে পথচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যেই ছাত্রলীগের একাংশকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর চড়াও হতে দেখা যায়।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদে কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পুনরায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়। দুপুর পৌনে ১টায় শহীদ মিনারে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজ পূর্ব নির্ধারিত নিপীড়ন বিরোধী কর্মসূচি ছিল শহীদ মিনারে। আমাদের মাইক চালু হওয়ার পর ছাত্রলীগও দাঁড়িয়ে যায় পাশে। তারাও মাইক ব্যবহার করে। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার চেষ্টাও চলে। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করে ফেরার পথে আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়, শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়। শিক্ষকদের চেতনা নিয়ে কটূক্তি করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফাহমিদুল হক বলেন, নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীদের পক্ষে শিক্ষক হিসেবে পাশে দাঁড়ানো আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এমন কর্মসূচি যদি আমরা করতে না পারি তবে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জার। আমরা বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাবো।
কর্মসূচিতে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দীন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ফাহমিদুল হক, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ। ###

জাবির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
জাবি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী গ্রেপ্তার ছাত্রদের নিঃশর্ত মুক্তি, আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচার ও অবিলম্বে কোটা সংস্কারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রোববার বিভাগটির স্নাতকোত্তর শ্রেণীর পূর্বনির্ধারিত টিউটোরিয়াল পরীক্ষাসহ কোন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি।
ইতিহাস বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি সারা বাংলার ছাত্র সমাজের ন্যায্য দাবি। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্ররা এই দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি না মেনে আন্দোলনকারীদের সাথে প্রহসন করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর তাঁদের উপর চলছে অমানুষিক পুলিশী নির্যাতন। এ অবস্থায় আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদে খুবিতে শিক্ষার্থীরা
খুলনা ব্যুরো জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি, নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধান ও কোটা সংস্কারের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ-মিছিল ও মানববন্ধন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুরে খুবির হাদী চত্বরে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আয়োজনে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- আমিনুর রহমান, আশিক রহমান, শরিফুজ্জামান, শেখ সাইফুল ইসলাম, কাঞ্চন কুমার, রিফাত আহমেদ, মাসুদ আল মোস্তফা, শেখ শুভ, মুক্তা আক্তার, ইয়াছিন আলী, নরোত্তম পল, শেখ নাভিদ প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল রাশেদ খান। কিন্তু সরকার তাদের এ যৌক্তিক আন্দোলনকে ব্যাহত করে দেয়। সরকারদলীয় সংগঠন (ছাত্রলীগ) আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা রাশেদ খানসহ অন্যদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের রিমান্ডে নেয়।
কোটা সংস্কার নিয়ে স্ট্যাটাস
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বহিষ্কার
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, কোটা সংস্কার নিয়ে ফেসবুকে ‘উস্কানিমূলক’ স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) এক ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত মীর মোহাম্মদ জুনায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গতকাল (রোববার) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মীর্জা ফারুক ইমাম ওই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বরখাস্ত করে আদেশ জারি করেন। সেখানে বলা হয়েছে, গত ১৩ জুলাই মীর মোহাম্মদ জুনায়েদ (ফেসবুকে মীর সাব্বির) ফেসবুকে কোটা সংস্কার নিয়ে উসকানিমূলক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী স্ট্যাটাস দিয়েছেন যা সিভাসু’র রুলস রিগার্ডিং জেনারেল ডিসিপ্লিন এর ১৬ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় মীর মোহাম্মদ জুনায়েদকে বহিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে ওই আদেশে। তিনি জানান, তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ২০১৩-২০১৪ সেশনে সিভাসুতে ভর্তি হওয়া মীর মোহাম্মদ জুনায়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নান হলের ৪০৮ নম্বর কক্ষে থাকেন।



 

Show all comments
  • Samira Binte Hossain ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১:৩৬ এএম says : 0
    এমন ন্যক্কারজনক, বর্বরোচিত ও কাপুরুষিত হামলার প্রতি জানাই তীব্র ধিক্কার, নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Sakhain Tanchangya ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১:৩৮ এএম says : 0
    সরকার এখন বিষণ ভয়ের মধ্যে আছে। তারা কাউকে কোন সভা সমাবেশ এমনকি বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতেও দিচ্ছে না। সরকার মনে করছে সবাই এক সাথে মিলে সরকার পতন করানো হবে। তাই জটলা দেখলে পালিত .........রা বিচার বিবেচনা না করে হামলা চালায়। আর এই অর্তকিত হামলার কারণেই বুঝা যায় সরকার এখন বিষণ ভয়ের মধ্যে আছে। কখন দেশের মানুষ সব এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং স্বৈরশাসনের পতন ঘটায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazim Khan Russel ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১:৩৮ এএম says : 0
    তরুন সমাজের এই দাবী কোটা সংস্কার , মেনে নেওয়া উচিত । আমি মনে করি এটা সময়ের দাবী , এতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিন্দু মাত্র অসম্মান হবেনা ।
    Total Reply(0) Reply
  • Merazul Islam ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১:৪০ এএম says : 0
    ছাত্র রাজনীতি আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে! ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে সহযোগিতা না করে, সাধারণ ছাত্রদের ধরে হয়রানি করছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকছে, সেই দলের ছাত্র সংগঠন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাহলে দেশে এই উদ্ভট ছাত্ররাজনীতি দিয়ে কি হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Md Lokman Hakim ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১:৪২ এএম says : 0
    সরকারের উচিৎ ছাত্রলীগকে আটকা।।কারণ যাদেরকে মারা হচ্ছে তারাও দেশের নাগরিক, নাগরিকের নিরাপত্তার জন্যই সরকার নির্বাচিত করে নাগরিক।।আর যারা শিক্ষককে লাঞ্চনা করে তাদেরকে ছাত্র বলা যায়না।।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১০:৩২ এএম says : 0
    Eai destai gontontro shesh manusher odhikar adai sheshheai shorkar ayn sringkhola bahini o satro liger kedErder dara desheer apamor satro jonota shobar opr nirjaton dhorshon loottoraj onnai obichar chalaia jaitese tai shob eak hoye eai shorkarer potoner dak din
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ