Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেদখল সরকারী জমি উদ্ধার করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পানি উন্নয়নবোর্ড ও রেলওয়ের মত সরকারী সংস্থার হাজার হাজার একর জমি বছরের পর বছর ধরে প্রভাবশালীদের দ্বারা দখল হয়ে থাকলেও এসব জমি উদ্ধারে সরকারী তৎপরতা খুবই অপ্রতুল। এই দুই সংস্থা ছাড়াও রাষ্ট্র মালিকানাধীন আরো বেশ কয়েকটি সংস্থার শত শত একর জমি বেদখল হয়ে আছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পানি উন্নয়নবোর্ড(পাউবো)’র ৫ হাজার একর জমি বেদখল হয়ে আছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব যখন বলেন, কত একর জমি বেদখল আছে তার সঠিক হিসাব তাদের জানা নেই, তখন ধারনা করা যায় পাউবোর বেদখল হওয়া জমির পরিমান আরো বেশী হতে পারে। এমনিতেই সম্পদের ব্যবহার, বাঁধ-বেড়িবাধের রক্ষণাবেক্ষন, প্রকল্প বাস্তবায়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নাম-দুর্নীতি সুবিদিত। হাজার হাজার একর বেদখল জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয়ের নিস্ক্রিয়তা ও গড়িমসির পেছনেও এই মন্ত্রনালয়ের একশ্রেনীর কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মর্তাদের ধারনা। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে সারাদেশে পানিউন্নয়ন বোর্ডের ১০ জোনের আওতায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫ একর জমি রয়েছে। নদীপ্রধান বাংলাদেশে শত শত নদীর বাঁধ-বেড়িবাধের পাশের হাজার হাজার একর সরকারী জমি দখল করে হাউজিং কোম্পানী, বাড়িঘর, গরুর খামার, তেলের পাম্প, মার্কেট ও দোকানপাট, স্কুল-মাদরাসা, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। একদিনে বা রাতারাতি এই দখলবাজি সম্পন্ন হয়নি। বছরের পর বছর ধরে তা অব্যাহত আছে যা দিন কে দিন বেড়ে চলেছে। এই দখলবাজির বিরুদ্ধে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্টদের নিরবতা ও নিস্ক্রিয়তা বিষ্ময়কর।
একদিকে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের অভাবে সময়মত পাউবোর বাঁধ বেড়িবাঁধগুলোর সংস্কার না হওয়ায় প্রায় প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন জেলায় বাঁধ-বেড়িবাধ ভেঙ্গে, পানি উপচে ব্যাপক ফসলহানি ঘটছে। অন্যদিকে পানিউন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দকৃত শত শত কোটি টাকা অপচয়, ভাগাভাগি, লুটপাটে নি:শেষ হচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে চলছে এ অবস্থা। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের যেন কোন দায় বা জবাবদিহিতা নেই। চলতি বছরের শুরুতে হাওরে যে আকষ্মিক বন্যা ও ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে তার পেছনেও বাঁধ সংস্কার ও প্রকল্প বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হলেও দেশে খাদ্য ঘাটতি ও লাখ লাখ মানুষের চরম ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য দায়ী এসব দুর্নীতিবাজের শাস্তি হয়নি। দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বরাদ্দকৃত প্রকল্পের টাকা লুটপাট করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক, ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশের কোটি কোটি দরিদ্র প্রান্তিক মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে গত ১০ বছরে উপকুলীয় বেড়িবাধ সংস্কার ও উন্নয়নে চারশ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে যার সিংহভাগই পানিতে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রনালয়ের দুর্নীতির কারণে শুধু প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা পানিতে যায় না, সেই সাথে সারাদেশে লাখ লাখ একর জমির ফসল তলিয়ে যায়, ভাঙ্গনের কবলে হাজার হাজার কোটি টাকার ফসলি জমি, বাড়িঘর, অবকাঠামো এবং উপকুলীয় ভূমি নদী ও সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়।
দেশে মোট কি পরিমান সরকারী জমি বেদখল ও বেহাত হয়ে আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান সম্ভবত কারো হাতেই নেই। বেশ কয়েক বছর আগে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, দেশে ১৩ লাখ একর সরকারী জমি বেদখল এবং দখলদারদের কোন তালিকা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হাতে নেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ও রক্ষনাবেক্ষনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার এ এক বিষ্ময়কর চিত্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড, বনবিভাগ, রেলওয়েসহ সব সংস্থার বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করে এসব সংস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের কাজে ব্যয় করা সম্ভব। যেখানে প্রয়োজনীয় বাজেটের অভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছেনা, রেলের আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব হচ্ছেনা। অবকাঠামোখাতের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বাড়তি বাজেটের চাপ সামলাতে যেখানে সরকার জনগনের উপর নতুন নতুন করের বোঝা বাড়াচ্ছে সেখানে এসব সংস্থার লক্ষকোটি টাকার সম্পদ প্রভাবশালী দখলবাজ ও লুটেরাদের হাতে বেদখল হয়ে আছে। বেদখল হওয়া সম্পদ উদ্ধার করে উন্নয়নের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা মাঝে মধ্যেই সরকারী জমি উদ্ধারে কিছু উদ্যোগের কথা জানালেও আদতে কাজের কাজ কিছুই হয়না। বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্তত ১৫ হাজার একর জমি বেদখল হয়ে আছে বহুদিন ধরে। গত বছরও রেলমন্ত্রী এসব জমি উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে আরো এক বছর পেরিয়ে গেলেও রেলের জমি উদ্ধারের তেমন কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। সরকারী জমি দখলদাররা ক্ষমতাবান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তারা পার পেয়ে যায়। সরকারী জমি উদ্ধারে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দলনিরপেক্ষ কঠোর পদক্ষেপের কোন বিকল্প নেই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জমি


আরও
আরও পড়ুন