Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার লজ্জার ইনিংস পরাজয়

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ আফ্রিকা যাবার আগ থেকেই যে পেস জুজু ভর করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট শিবিরে তাতেই কাবু হলো মুশফিকুর রহিমের দল। এবারের প্রোটিয়া সফরে দেখা গেছে যেন পুরানো সেই বাংলাদেশকে। বৃষ্টির কল্যাণে পচেফস্ট্রুম টেস্ট ৫ দিনে গড়ালেও হার এড়াতে পারেনি সফরকারীরা। ভুলে যাওয়ার মতো এই সিরিজে বাকি ছিল একটাই- ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়। সেই অভিজ্ঞতা হল ব্লুমফন্টেইনে দ্বিতীয় টেস্টে। গতকাল কাগিসো রাবাদার দারুণ বোলিংয়ে বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ও ২৫৪ রানে। তৃতীয় দিন দুই সেশনও টেকেনি বাংলাদেশের ইনিংস। অধৈর্য ব্যাটসম্যানদের ১০ উইকেট তুলে নিতে স্বাগতিকদের লেগেছে ৪২.৪ ওভার। প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়া অতিথিরা দ্বিতীয় ইনিংসে করেছে ১৭২ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়। সিরিজের প্রথম টেস্ট ৩৩৩ রানের ব্যবধানে জিতেছিলো স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানেই জিতে নিলো প্রোটিয়ারা। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার কাছে ইনিংস ও ২৪৮ রানে হারার পর এই প্রথম ইনিংস ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ হার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় হার এটিই। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে প্রোটিয়াদের জয় ছিল ইনিংস ও ২০৫ রানে।
ম্যানগাউং ওভালে দ্বিতীয় ইনিংসে ফলো-অনে পড়ে ব্যাট হাতে বিনা উইকেটে ৭ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিলো টাইগাররা। তৃতীয় দিন তৃতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় তারা। মাত্র ৩ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদার শিকার হন বাঁ-হাতি ওপেনার সৌম্য সরকার। এসময় বাংলাদেশের রান ছিলো ১৩। এরপর লড়াই শুরু করেন আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস ও তিন নম্বরে নামা মোমিনুল হক। সেই লড়াই বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি ওই রাবাদার কারণে। ১১ রানে রাবাদার শিকার হন মোমিনুল।
দলীয় ২৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর শক্ত হাতে দলের হাল ধরার পণ করেছিলেন ইমরুল ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দেখে-শুনেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন দু’জনে। বদৌলতে দলীয় স্কোর ৫০ পেরিয়ে যায়। তবে জুটিতে ৩৪ রান আসার পর বিচ্ছিন্ন হন ইমরুল ও মুশি। ৫৩ বলে ৩২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডুয়ানে ওলিভারের প্রথম শিকার হন ইমরুল।
এরপর ক্রিজে মুশফিকুরের সঙ্গী হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টায় ছিলেন তারা। তবে কিছুদূর গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন মুশি। ২৬ রানেই থেমে যেতে হয় টাইগার দলপতিকে। এই জুটির কাছ থেকে দল পায় ২৯ রান।
অধিনায়কের বিদায়ের পর সঙ্গী হিসেবে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে পান মাহমুদুল্লাহ। প্রথম ইনিংসে ৭০ রান করা লিটন, ভালোই শুরু করেছিলেন। ৪টি বাউন্ডারিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দুভার্গ্য লিটনের, ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি। লিটনের ফিরে যাবার কিছুক্ষণ পরই প্যাভিলিয়নে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৯ বলে ৪৩ রান করেন এই অলরাউন্ডার। তার বিদায়ের পর বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারেননি। ফলে ১৭২ রানেই দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এই ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা ৩০ রানে ৫ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও পান তিনি। সিরিজ সেরা হয়েছেন প্রোটিয়া দলের ওপেনার ডিন এলগার।
প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়েছিল দল। কিন্তু এবার পরাজয়টি হলো আরও বিব্রতকর। পরাজয়ের ধরনটিই সবচেয়ে বেশি হতাশার। ইনিংস ব্যবধানে হার বলেই নয়, পরিকল্পনাহীন বোলিং, দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং, খাপছাড়া নেতৃত্ব আর ভীষণ দৃষ্টিকটু শরীরী ভাষা-সব মিলিয়েই এই টেস্ট হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাজে বিজ্ঞাপন। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হবে দু’দলের ওয়ানডে সিরিজ। তার আগে ভঙ্গুর এই দলটির আত্মবিশ্বাস যোগাতে বেশ কাঠখড়ই পেড়াতে হবে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা, ব্লুমফন্টেইন
(২য় ও শেষ টেস্ট, ৩য় দিন)
টস : বাংলাদেশ
দ.আফ্রিকা ১ম ইনিংস ৫৭৩/৪ (ডিক্লে.)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৪৭ (ফলো অন)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ২য় দিন শেষে ৭/০
রান বল ৪ ৬
ইমরুল ক ডি কক ব অলিভার ৩২ ৫৩ ৫ ১
সৌম্য ক ডু প্লেসি ব রাবাদা ৩ ৮ ০ ০
মুমিনুল ক মহারাজ ব রাবাদা ১১ ১৩ ১ ০
মুশফিকুর এলবিডব্লিউ ব পার্নেল ২৬ ৪৫ ৩ ০
মাহমুদুল্লাহ ক এলগার ব রাবাদা ৪৩ ৫৯ ৭ ১
লিটন ব ফেলুকায়ো ১৮ ২৫ ৪ ০
সাব্বির ক ডু প্লেসি ব ফেলুকায়ো ৪ ১২ ১ ০
তাইজুল ব রাবাদা ২ ৯ ০ ০
রুবেল ব রাবাদা ৭ ৮ ১ ০
শুভাশিষ অপরাজিত ১২ ১০ ৩ ০
মুস্তাফিজ ব ফেলুকায়ো ৭ ১৫ ০ ১
অতিরিক্ত (লেবা ৬, নো ১) ৭
মোট (অল আউট, ৪২.৪ ওভার) ১৭২ (ফলো আন)
উইকেট পতন : ১-১৩ (সৌম্য), ২-২৯ (মুমিনুল), ৩-৬৩ (ইমরুল), ৪-৯২ (মুশফিকুর), ৫-১৩৫ (লিটন), ৬-১৩৯ (মাহমুদুল্লাহ), ৭-১৪৫ (সাব্বির), ৮-১৪৫ (তাউজুল), ৯-১৫৬ (রুবেল), ১০-১৭২ (মুস্তাফিজ)।
বোলিং : রাবাদা ১১-১-৩০-৫, অলিভার ১১-১-৩৯-১, মহারাজ ৬-১-৩০-০, পার্নেল ৫-০-৩১-১, ফেলুকায়ো ৯.৪-২-৩৬-৩।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ২৫৪ রানে জয়ী।
সিরিজ : ২ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০তে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : কাগিসো রাবাদা
ম্যান অব দ্য সিরিজ : ডিন এলগার



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইনিংস


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ