Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাংবাদিকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা

| প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত বৃহস্পতিবার দৈনিক ইনকিলাব থেকে চাকরিচ্যুত এবং স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়া সাংবাদিক-কর্মচারিরা তাদের পাওনার দাবিতে সারাদিন ইনকিলাবের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিয়মিত কার্য সম্পাদনের লক্ষ্যে কার্যালয়ে ঢুকতে এবং কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানরতদের বের হতে বাধা দেয়। এতে ভেতরে অবস্থানরতরা খাদ্য ও পানির সংকটে পড়ে। অনেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। অবরোধকারীরা আক্রমণাত্মক আচরণ, অশ্ললীল গালিগালাজ এবং ইনকিলাবের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। তারা ইনকিলাব সম্পাদকের নামে অশালীন বক্তব্য এবং হুমকি প্রদান করে। ইনকিলাবে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা অবরোধকারীদের অনেক অনুরোধ করেও কার্যালয়ে ঢুকতে পারেনি। ঢুকতে না পেরে তারা সারাদিন রাস্তায় বসে থাকে। এক পর্যায়ে তারা কর্তব্যকর্ম সম্পাদনের লক্ষ্যে কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে অবরোধকারিরা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে ইনকিলাবের জেনারেল ম্যানেজারসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও কর্মচারি আহত হয়। কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের কাজে বাধা দেয়ার এই নজিরবিহীন ঘটনায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, চাকরিচ্যুত এবং স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সাংবাদিক-কর্মচারীরা তাদের পাওনার জন্য আন্দোলন করতেই পারে, তবে কর্মরতদের রুটি-রুজির ওপর হাত দিতে পারে না।
চাকরিচ্যুত এবং স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়া সাংবাদিক ও কর্মচারিদের ইনকিলাব কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা এক নিন্দনীয় ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা। যারা চাকরিচ্যুত এবং স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, তাদের দাবি-দাওয়া থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ দাবি-দাওয়া আদায় করতে গিয়ে শান্তিপূর্ণ পথ পরিহার করে আক্রমণাত্মক অবস্থান গ্রহণ কোনোভাবেই সমীচিন হতে পারে না। যে কোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানই নিয়মতান্ত্রিক। এর পরিবর্তে জোরজবরদস্তির পথ অবলম্বন করা অনাকাক্সিক্ষত এবং দুঃখজনক। ইনকিলাব থেকে যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, ইনকিলাব সম্পাদক কথামতো তাদের প্রথম কিস্তি ৬ মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছেন। তিনি সময় চেয়ে বাকী টাকা পর্যায়ক্রমে পরিশোধের কথা বলেছেন। তারপরও প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে ইনকিলাব কার্যালয় অবরুদ্ধ করে আক্রমণাত্মক আচরণ ও বক্তব্য দেয়ার পেছনে সুদূরপ্রসারি ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে প্রতীয়মাণ হয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর নেপথ্যে পত্রিকাটির প্রকাশনা ব্যাহত বা বন্ধ করে দেয়ার এক ধরণের চক্রান্ত রয়েছে। বলা বাহুল্য, পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হলে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রিন্ট মিডিয়ার দুরবস্থা চলছে। সারাবিশ্বেই সংবাদপত্রের ছাপা সংখ্যা কমছে। অনেক দেশেই সংবাদপত্র বিলুপ্তির পথে। উপমহাদেশের চিত্রও তাই। আমাদের দেশেও পত্রিকা বিক্রির সংখ্যা কমছে এবং পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বার্ষিক ৮% থেকে ১০%-এর অধিক হারে প্রিন্ট মিডিয়ার বাজার এবং বিজ্ঞাপনের বাজার সংকুচিত হচ্ছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বেসরকারি বিজ্ঞাপন আয় বার্ষিক প্রায় ১৫% হারে কমেছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালেও ১৫% হারে কমেছে যা সে ধারারই প্রতিফলন। এছাড়া বর্তমানে সংবাদপত্রকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল ও সোস্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য মিডিয়ার সঙ্গে। অনলাইন পোর্টাল প্রায় ১০% বিজ্ঞাপন নিয়ে যাচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়া (বিশেষত ফেসবুক ও গুগল) বিজ্ঞাপনের প্রায় ৩০ শতাংশ নিয়ে যাচ্ছে, যেখান থেকে সরকার কোনো কর পাচ্ছে না। বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়ার বিজ্ঞাপন আয়ের প্রায় ৫০% ফেসবুক-গুগলের নিয়ন্ত্রণে। সরকারি বিজ্ঞাপনের হারও অনেক কম। বেসরকারী বিজ্ঞাপন হারের প্রায় এক দশমাংশ। বার্ষিক প্রায় ১৫% হারে সরকারি বিজ্ঞাপন কমছে। সরকারি বিল আদায়ও কষ্টসাধ্য। সর্বশেষ জুন ’১৭ পর্যন্ত সরকারি বিজ্ঞাপন বাবদ নোয়াব সদস্যদের মধ্যে ১৫টি দৈনিক পত্রিকার প্রায় ৮৫ কোটি টাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রয়েছে। এই বিশাল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রেখে সংবাদপত্র শিল্প টিকিয়ে রাখা এক প্রকার অসম্ভব। এ বাস্তবতা সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উপলব্ধি করতে হবে। সংবাদপত্র টিকে থাকলে তাদেরও কর্মসংস্থান টিকে থাকবে এবং হবে। পাওনাদি আদায় করতে গিয়ে শান্তিপূর্ণ পথ পরিহার করে জবরদস্তিমূলক ও আক্রমণাত্মক আচরণ আত্মঘাতি কর্মকাÐের শামিল। সংবাদপত্র ও যে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাই এবং স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে সাধারণত সংশ্লিষ্টদের পাওনাদি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিকভাবেই পরিশোধ করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ বরাবরই চাকরিচ্যুত এবং স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়াদের পাওনাদি নিয়ে যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। দুঃখের সাথে অবলোকন করা গেছে, চাকরিচ্যুত ও স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়া সাংবাদিক ও কর্মচারিরা এ পথ পরিহার করে বল প্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছে। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তাদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কাম্য হতে পারে না। বুঝতে অসুবিধা হয় না, তারা একটি মহলের ইন্ধনে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে পত্রিকাটির প্রকাশনাকে জিম্মি করে পাওনাদি আদায় করতে চেয়েছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা পত্রিকা অফিস অবরুদ্ধ করার হীন প্রয়াস চালিয়েছে। অতীতে দৈনিক ইনকিলাব থেকে যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং স্বেচ্ছায় চলে গেছেন, তাদের পাওনাদি বরাবরই শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিশোধ করা হয়েছে। এ নিয়ে চাকরিচ্যুত ও স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়াদের সঙ্গে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। একইভাবে যারা এখন চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং স্বেচ্ছায় চাকির ছেড়ে গেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে। এ নিয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং জবরদস্তিমূলক পথে যাওয়া সম্পূর্ণ অনুচিত ও অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের ঘটনা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য হুমকি স্বরূপ। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অশঙ্কার এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্কতা একান্তভাবেই কাম্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হামলা


আরও
আরও পড়ুন