Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুটবলের কালো রাত ইন্দোনেশিয়া ট্র্যাজেডি

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ফুটবল মাঠের সবচেয়ে নেক্কারজনক ব্যাপার হচ্ছে দুই দলের সমর্থকদের মাঝে সৃষ্ট হওয়া দাঙ্গা। ১৯৬৪ সালে পেরুর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে পেরু ও আর্জেনটিনার মধ্যকার একম্যাচে এমন এক ঘটনায় মারা যায় ৩২০ জন সমর্থক। এরপর হেলেসে ১৯৮৫ সালে ইউরোপিয়ান কাপের (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) লিভারপুল ও জুভেন্টাসের মধ্যকার খেলায় অলরেড সমর্থকদের হামলায় প্রাণ হারায় ৩৯ জন। বর্তমান শতাব্দীর গোঁড়ায় ঘানায় একম্যাচে হৃদয়বিদারক ভাবে ঝড়ে যায় ১২৬ জন সমর্থকের প্রাণ। আর গতপরশু পুনরায় ফুটবল বিশ্ব সাক্ষী হলো স্মরণকালের ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডির। ইন্দোনেশিয়ার প‚র্ব জাভার মালাং অঞ্চলের কানজুরুজান স্টেডিয়ামে বিপর্যয়ে পদদলিত হয়ে প্রাণ যায় তরতাজা ১৭৪ জন মানুষের। আহত আরো কমপক্ষে ২শ’ জনের মতো!
আরেমা এফসি প্রতিদ্ব›দ্বী পারসেবায়া সুরাবায়ার সঙ্গে হেরে যাওয়ার পর আরমোর সমর্থকরা মাঠে নেমে আসলে ঘটনার স‚ত্রপাত। ইন্দোনেশিয়ার লিগা ওয়ানের ম্যাচটি ৩-২ গোলে জেতে পারসেবায়া। প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় পর পারসেবায়ার কাছে হারায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় ৩ হাজার আরেমার সমর্থক মাঠে ঢুকে পড়েন। সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকলে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। তাতে ভয় ও আতঙ্কে স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকা ফুটবলপ্রেমীরা হুড়োহুড়ি শুরু করে। তাতে পদদলিত এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটে ঐ হৃদয়বিদারক ঘটনা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৩৪ জনের; বাকিরা মারা যান হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন। সবাই একটি পয়েন্ট দিয়েই বের হওয়ার চেষ্টায়ই হতাহতের সংখ্য এত বেশি বলে দাবি সংবাদমাধ্যমগুলোর।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রন সংস্থা ফিফার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, মাঠে নিরাপত্তাকর্মীদের কোনভাবেই টিয়ার গ্যাস কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি নেই। তবে প‚র্ব জাভার পুলিশ আইনটির কথা জানত কিনা, সেই ব্যাপারে এখনো দেশটির আইনসংস্থা কিছুই জানায়নি। পুলিশ প্রধান নিকো আফিন্তার দাবি, বাধ্য হয়েই তারা কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছিলেন, ‘পুরো অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের আক্রমণ করেছিল, গাড়ি ভাঙতে শুরু করেছিল।’
ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ মাহফুদ মাহমোদিনের দাবি করেন, এই ম্যাচের জন্য টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৪২ হাজার অথচ স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতার মাত্র ৩৮ হাজার। দেশেটির ক্রীড়ামন্ত্রী জয়নুদিন আমালি জানান, তারা ফুটবল মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি আবার খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজন পড়লে দর্শকবিহীন মাঠে খেলা চালাবেন।
ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর কাছে এটি ফুটবলে একটি ‘কালো রাত’। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানিয়ে ইনফান্তিনো বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় যে ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটেছে, তাতে ফুটবল বিশ্ব শোকে স্তব্ধ। ফুটবলের সঙ্গে জড়িত সবার কাছে এটি একটি কালো রাত এবং এই বিয়োগাত্মক ঘটনা ব্যাখ্যার অতীত। যারা এই দুর্ঘটনার শিকার, এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাই।’
দেশটির ফুটবলে দাঙ্গা ও সংঘর্ষের নতুন কিছুই নয়। ফুটবল ক্লাবগুলোর চরম প্রতিদ্ব›িদ্বতা বিরাজ করতে দেখা যায়। যার প্রভাব সমর্থকদের মধ্যেও পরে প্রায়শয়।এদিকে এ ঘটনার পর দেশটির শীর্ষ ফুটবল লিগের খেলা এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্দোনেশিয়া। তারা তদন্ত শুরুর ঘোষণাও দিয়েছে ইতিমধ্যে। চলতি মৌসুমের শেষ পর্যন্ত আরেমা কোনো হোম ম্যাচ আয়োজন করতে পারবে না বলেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা।
ফুটবল অনেকটা তুলির ছোঁয়ার ন্যায় জন্ম দেয় অসাধারণ সব মুহূর্তের। সেই শিল্পে কালো দাগ লাগে এই ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনায়। নিকট অতীতে এই ধরণের ঘটনা ঘটে মিশরে। ২০১২ সালে লিগের খেলায় আল মাসরির উগ্র কয়েকজন দর্শক আল আহলির দর্শকদের ওপর ছুরি, চাকু নিয়ে হামলা করলে নিহত হয় ৭৯ জন ফুটবপ্রেমী ও ১ হাজারের বেশি সমর্থকের আহত হওয়ার ঘটনায় যার রেষে প্রায় ২ বছর বন্ধ ছিল দেশটির লিগ। সবশেষ গত জানুয়ারিতে ক্যামেরুনে এক মাঠে পদদলিত হয়ে মারা যান ৮ জন। নিখাত আনন্দের ফুটবলে এমন সব অপ্রাত্যাশীত ঘটনা যেন কালিমা হয়ে পড়ে সকল ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়ে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্র্যাজেডি

১২ জুলাই, ২০২১
১১ জুলাই, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ