Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ কান্নার শেষ নেই

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি : কারখানা কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড নামে একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৫২ জন নিহত হয়েছে। লাশের অপেক্ষায় স্বজনদের কান্না যেন থামছেই না। গতকাল দুপুরে কারখানার সামনে ও বাইরে নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা গেছে। তাদের একটাই দাবি, স্বজনদের লাশ দ্রুত ফিরে পাওয়া। আর এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। স্বজনহারাদের কান্নায় কারখানার চারপাশ ভারি হয়ে গেছে। স্বজনরা সকলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ডিএনএর নমুনা দিয়ে আসেন। তবে তিন সপ্তাহ পরে লাশ শনাক্ত হবে বলে জানায় ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ।

পাগল হয়ে কারখানার সামনে ঘুরছিলো কম্পা রানী বর্মণের মা সুমা রানী বর্মণ ও তার পরিবারের লোকজন। তাদের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল সন্ধ্যায় কম্পারানীর। শেষ কথা হয়েছিল ‘মাগো আমারে বাচাঁও। আমি শ^াস লইতে পারতাছি না। আমি বুঝি তোমাগো দেখতে পারমু না’।

কারখানার বাইরে কাঁদছিলেন নিখোঁজ তুলি আক্তারের মা ও বাবা আব্দুল মান্নান। মধ্য বয়সী ওই নারী বলছিলেন, ‘একবার মা কইয়া ক আমারে। আমি তোরে ছাড়া কেমনে থাকমু। কারখানার মালিকরা সবটি গেট বন্ধ কইরা দিছিলো। প্রত্যেকটা গেট তালা দিয়ে সবটি মানুষরে মারছে’। এদিকে, গতকাল সকালে গিয়েও ভবনটি ধোয়া বের হতে দেখা গেছে। ভবনটির বেশকিছু অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। ভবনের পলেস্তরা ও বেশকিছু অংশ ধসে পড়েছে। ফাটল দেখা দেয়ায় ভবনটিকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেয়। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আশপাশে থাকা বসবাসকারী সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। যেকোন সময় ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে।
ভবনটির পাশে বসবাসকারী টিটু মিয়া জানান, শুনেছি ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটি যেকোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। এতে আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ভবনটি ভেঙে ফেলার অনুরোধ জানাচ্ছি। এদিকে, ভবনের কিছু অংশে এখনো ধোয়া উঠতে থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের কোন কর্মীকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। নতুন করে আবার ধোয়া উঠতে দেখেই অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রূগপঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে ৫২ জন নিহত হয়। তবে চতুর্থ তলাটি তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকায় ওখানকার কোন শ্রমিকই বের হতে পারেনি। ওই তলা থেকে ৪৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩০ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এ ঘটনায় তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ আগুনের ঘটনায় ভুলতা ফাড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নাজিম উদ্দিন মজুমদার বাদী হয়ে হাসেম ফুডের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বিল্ডিং কোড না মেনে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। ভবনটি নির্মাণের সময় কোন নিয়মই মানেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আ.লীগ প্রতিনিধিদল : আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, শুনেছি এই ভবনের একটি ফ্লোরে শ্রমিকদের তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। তালাবদ্ধের ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মির্জা আজম বলেন, এখানে ৫২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা করোই কাম্য নয়। তদন্ত অনুযায়ী দোষীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যারা নিহত হয়েছেন সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের জন্য ২ লাখ টাকা ও আহতদের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন নিয়েই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এ ক্ষেত্রে যদি কারো দুর্নীতি থাকে তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাই। এ কারখানায় কিভাবে শিশু শ্রমিকরা কাজ করতে আসলো। কারা এখানে শিশু শ্রমিকদের কাজ করতে নিয়ে আসলো তাদের সকলে আইনের আওতায় আনা হবে।

পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের সাজা পেতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। আর যাতে কোন কারখানায় এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।

প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেনÑ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু এমপি, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম। এসময় উপস্থিত ছিলেনÑ নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুসহ আ.লীগ নেতা-কর্মীরা।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বলেন, এটা নির্মম ঘটনা। সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে শ্রমিকদের জীবন ছেড়ে দেয়া যাবে না। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দরকার। যারা নিহত হয়েছেন তাদের এক জীবনের আয়ের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেটা ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, এ সরকার ব্যর্থ। পুলিশ ও আমলারা রাতের আঁধারে এ সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এর থেকে দেশবাসী মুক্তি চায়। এ দুর্ঘটনা হত্যার শামিল।

এসময় উপস্থিত ছিলেনÑ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফত, রাষ্ট্র চিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইউম, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, মো. ফরিদ উদ্দিন ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাদ্দাম প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ