Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি : সিদ্ধান্ত হয়নি দাফনের জুস ‘চুরি’র অজুহাতে বন্ধ রাখত দরজা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

রূপগঞ্জে আগুনে পুড়ে নিহতদের পরিচয় শনাক্তে ৬৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রোববার পর্যন্ত ৪৫টি লাশের বিপরীতে ওই ৬৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অগ্নিকান্ডে পুড়ে প্রায় কয়লা হয়ে যাওয়া লাশগুলো দাফনের সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে স্বাভাবিক ময়নাতদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে ওই কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ যে ফ্লোর থেকে ছড়িয়েছে আগুন, সেখানেই বানানো হতো সেজান জুস। এ জুস কর্মীরা চুরি করে নিয়ে যেতে পারে- এমন অজুহাতে দরজায় তালা মেরে সিঁটি আটকে কাজ করানো হতো। গতকাল রোববার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে স্থাপিত বুথের কাছে এ সব কথা বলেন সেজান জুস কারখানার শ্রমিক অগ্নিকান্ডে নিহত আমেনা বেগমের স্বামী রাজীব হাসান।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, লাশগুলো খুব বাজেভাবে পুড়ে যাওয়ায় ডিএনএ প্রোফাইলিং করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ কারণেই নিহতদের পরিচয় জানতে এক মাসের বেশি সময় লাগতে পারে। ডেড বডিগুলোর আলামত এমন নাজুক অবস্থায় যে, কোনো কোনো আলামত পুড়ে প্রায় ছাই হয়ে যাওয়ার অবস্থা। ফলে সেখানে এটা একটু সময় লাগবে।

ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ে সময় লাগার বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, কেননা দাঁত ও হাড়কে গলাতে হয়। এটা গলতে ১০ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। তারপর ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। দাঁত ও হাড় গলানোর কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে। ডেড বডিগুলো থেকে দাঁত এবং হাড়, ক্ষেত্রবিশেষে টিস্যু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব কাজ শুরু করেছে। আমরা দ্রুত চেষ্টা করছি প্রোফাইলিং করে ডেড বডিগুলোর আইডেন্টিটিফিকেশন করার। পরিচয় জানতে ১৫-৩০ দিন লাগতে পারে। আরও বেশি সময় লাগতে পারে। ১৫ দিনের আগে পরিচয় শনাক্ত করা যাবে না।

নমুনা সংগ্রহের জন্য বাবা-মায়ের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ে ৫০ পার্সেন্ট তার মায়ের সঙ্গে, ৫০ পার্সেন্ট তার বাবার সঙ্গে মিল পাই। এর ওপর ভিত্তি করে আইডেন্টিটিফিকেশন করছি। শুক্রবার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে বসানো হয়েছে ডিএনএ বুথ। প্রথমদিন ২৬ জন, দ্বিতীয়দিন ৩০ জন ও তৃতীয়দিনে সাতজনের নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি।
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার জানান, লাশগুলো খুব বেশি পুড়ে যাওয়ায় শুধু হাড় ও দাঁতের নমুনা নিতে পেরেছি। টিস্যু থেকে নমুনা নিতে পারলে ফলাফল আসতে কম সময় লাগত। কিন্তু সেটা পারা যায়নি। সেজন্যই সময় বেশি লাগতে পারে। ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ বলেন, লাশগুলো থাকায় মর্গের স্বাভাবিক ময়নাতদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

রাজীব হাসান আরো রবলেন, যে ফ্লোরে আগুন লেগেছে, সেই ফ্লোরে আমার বউ কাজ করতো। আর আমি নিচের ফ্লোরে কাজ করতাম। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে আমার ছুটি হয়ে যাওয়ায় আমি বাইরে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় আগুন লাগে। পেছনের দরজা দিয়েও আমি ভেতরে ঢুকতে পারিনি। কারণ, দরজা বন্ধ ছিল। আমি আমার বউরে বাঁচাতে পারিনি। দরজা কেন বন্ধ ছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ফ্লোরে আমেনা কাজ করতো সে ফ্লোরে জুস বানানো হতো। যা বাচ্চাদের পছন্দের খাবার। সেখানকার স্টাফরা যাতে সেই জুস চুরি করতে না পারে, সেজন্য দরজায় তালা বন্ধ করে কাজ করানো হতো।

উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রথমদিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ