পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অসুস্থ কৃষক বাবার আয়ে সংসার চলছিল না। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আমিনাবাদ কবি মোজাম্মেল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী কিশোর হাসনাইন তাই বসে থাকতে পারেনি। মাত্র বারো বছর বয়সেই বাবা ফজলুল হককে সাহায্য করতে সংগ্রামী জীবন শুরু করে সে। এক মাস আগে এক আত্মীয়র মাধ্যমে মাত্র ৫ হাজার টাকায় চাকরি নেয় রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায়। কিন্তু কৃষক বাবার একমাত্র ছেলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছেলের লাশ শনাক্ত করতে এসে ঢামেকের মর্গের সামনে এসব তথ্য জানান হাসনাইনের বাবা ফজলুল হক। আগুনে পুড়ে যাওয়া অনেক লাশের মধ্যে রয়েছে তার ১২ বছরের ছেলেটির লাশও। কিন্তু সেটা কোনটা, তা বোঝার উপায় নেই। তাই নমুনা দিতে এসেছেন ফজলুল হক। ডিএনএ মিললে নিয়ে যেতে পারবেন ছেলের লাশ। সেটা কত দিনে হবে তাও জানেন না তিনি।
শুধু এ দু’জন নয়, বাবা, মা, ভাই-বোনসহ অনেক স্বজনকে গতকাল ঢামেক হাসপাতাল এলাকায় অপেক্ষা থাকতে দেখা যায়। সেই অপেক্ষার নাম বুকভাঙা কষ্ট! কারো কারো হাতে নিখোঁজ বা নিহত হওয়াদের ছবি থাকলেও অনেকেরই কাছে তা ছিল না। তবে তারা সবাই প্রিয়জনের মুখখানি শেষবারের মতো হলেও একবার দেখতে চায়। এরই মধ্যে প্রিয় মানুষটির স্মৃতি মনে করে অনেকেই বিলাপ করছিলেন। তাদের সান্ত¡নাও দেয়ার চেষ্টা করছিলেন অনেকেই।
ফজলুল হক এই প্রতিবেদকে বলেন, ছেলে নারায়ণগঞ্জে এসে লাশ হবে, এটা বুঝতে পারলে কখনোই আসতে দিতাম না। আমার একটাই ছেলে। তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। এখন অন্তত ছেলের লাশটা যদি পাই, অন্তত তার মাকে (নাজমা বেগম) গিয়ে বলতে পারব, এটা তোমার হাসনাইনের লাশ। তাই অসুস্থ শরীর নিয়েই এখানে এসেছি।
ফজলুল হক আরো বলেন, ওরে বলেছিলাম, বাবা, তোমার তো এখন লেখাপড়ার বয়স। তুমি কাজ করতে পারবে না। সে আমাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেছিল, তুমি চিন্তা করো না। তোমার কষ্ট আমি আর সইতে পারছি না। আমি কাজ করে তোমার চিকিৎসা করাব। আর এখন তো স্কুল খোলা নেই। স্কুল খুললে আবার চলে আসব।
ফজলুল হকের সঙ্গে মর্গে এসেছেন হাসনাইনের খালা লাইজু বেগম। তিনি জানান, হাসনাইনের বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তার পেটে টিউমার হয়েছে। কোনো কাজ করতে পারেন না। হাসনাইনের বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা নাজমা বেগম গৃহিণী। গত বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর হাসনাইন নিখোঁজ হয়। তার কাছে কোনো মুঠোফোন ছিল না। সে থাকত চাচাতো ভাই রাকিবের সঙ্গে। ঘটনার পর রাকিবকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রিয়জনের মুখ শেষবারের মতো দেখার তীব্র আকুতি : ঢামেকের মর্গের সামনে দিপু মিয়া নামে একজন জানান, ঘটনার দিন ভবনের ৪ তলায় তার ভাই মোহাম্মদ আলী সিনিয়র অপরাটের (চকলেট শাখায়) কাজ করছিলেন। তবে আগুনের ঘটনার পর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। কারখানা এমনকি ঢামেক হাসপাতালে গত দু’দিন ধরে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তার ভাইয়ের লাশটা শেষ দেখা দেখতে চান তিনি।
বোনের খোঁজে আসা শিরিন আক্তার নামের আরেকজন জানালেন, আমার ছোট বোন রোজিনা আক্তার কারখানার ৫ম তলায় কাজ করত। কিন্তু আগুন লাগার পর তার মোবাইলও বন্ধ পাচ্ছি। জানি না সে বেঁচে আছে কি না? বোনের সন্ধানে এসেছি। লাশটা তো অন্তত পাব?
ঢামেক হাসপাতাল মর্গ সূত্র জানায়, আগুনে লাশগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে তা চেনার কোনো উপায় নেই। কারো কারো শরীরে মাংস থাকলেও তা পুড়ে কালো হয়ে গেছে। রয়েছে শুধু হাড়গোড়। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করছে সিআইডি।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ২১ দিন শেষে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যাবে। এ জন্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশপাশি স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা নেয়া হচ্ছে মূলত ম্যাচ করার জন্য।
গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকান্ড ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।