Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিত্রাঙ্কন

রহমান মৃধা | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৮ এএম

একটা ছবি একো আমার জন্য। সে ছবি যেন গোটা বিশ্বকে উজাড় করে নেয়, সে ছবি যেন সবাইকে ব্যাকুল করে দেয় এবং আমি যেন হই তোমার মাঝে ধন্য। কে জানতো সেদিন ফ্রান্সের ল্যুভ মিউজিয়ামে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শুধু মোনালিসার রহস্যময় হাসি দেখতে আসবে! সামন্য একটা ছবি গোটা বিশ্বকে উজাড় করে নেবে? কারো জীবনের ভালোবাসাকে ঘিরে কেও হয়ত কখনও একটা ছবি একেছে, যা আজও হাজারও মানুষকে ব্যাকুল করে দেয়!

আশি বছর বয়সেও প্রতিদিনের মতো আজ সকালে সাইমন তার স্ত্রী গুনিলার জন্য এক কাপ কফি বিছানার পাশে এনে আস্তে আস্তে ডাকছে, গুনিলা, তোমার জন্য কফি এনেছি। গুনিলা এই প্রথম সাইমনের নিজ হাতে তৈরি কফি মুখে দিতে পারেনি। গুনিলা কখন হঠাৎ ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে সাইমন তা বুঝতে পারেনি।

সাইমন সর্বহারা, কারণ তাদের বাষট্টি বছরের ভালোবাসার সংসারে হয়নি কোনো নতুন অতিথির আগমন। বহু বছর আগে গুনিলার সঙ্গে সাইমনের দেখা হয়েছিল সুইডেনের ছোট্ট একটি লেকের ধারে। চিত্রশিল্পী সাইমন লেকের ধারে বসে গুনিলার পুরো দেহটার চিত্রাঙ্কন করেছিল একটি পাথরের ওপর। গোসল শেষে উঠতে পথে গুনিলার নজর কেড়ে নিয়েছিল এই সুদর্শন চিত্রশিল্পী সাইমন।

গুনিলা একজন স্কুল শিক্ষক, সে সাইমনের আঁকা নিজের ছবিটি দেখে মুগ্ধ হয় এবং সাইমনের হাত ধরে সেই যে তার প্রেমে বন্দি হয়েছে আর কোনোদিন মুক্তি পায়নি। তবে তাদের বিয়ের পর একবার সংসারে ঝড় উঠেছিল বিচ্ছেদের। গুনিলা সাইমনের জীবন থেকে সরেও গিয়েছিল। ওই যে কথায় বলে ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন!
ঠিক তেমনটি ঘটেছিল তাদের জীবনে। গুনিলা স্কুল শিক্ষক, ক্লাসে একটি ছেলে প্রতিদিনই দেরি করে আসে, বেশ অমনোযোগী। মাঝে মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ে বেঞ্চের ওপর। ক্লাসের কেউই ছেলেটিকে পছন্দ করে না বললেই চলে। গুনিলা সিদ্ধান্ত নেয় ছেলেটির বাবা-মার সঙ্গে দেখা করার। সে একজন শিক্ষক হিসেবে মনে করে এটা তার নৈতিক দায়িত্ব।

যে কথা সেই কাজ। ক্লাস শেষে ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। যেতে যেতে পথে অনেক পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা হয় দুইজনের মাঝে। ও, ছেলেটির নাম ডানিয়েল, বয়স আট বছর। মা মারা গেছে জন্মের পর, বাবা নতুন করে বিয়ে করেছে। সংসারে ডানিয়েল একটি বোঝা কিন্তু দায়ভার এড়ানোর উপায় না থাকার কারণে ডানিয়েলকে তারা যতটুকু না করলেই নয় তার বেশিকিছু করে না।

ফলে ডানিয়েল অঙ্কুরে বিনাশ হতে চলেছে। গুনিলা ডানিয়েলের বাবা-মার সঙ্গে দেখা করে, ডানিয়েলের বিষয় আলোচনা করে, কিন্তু তেমন আশাপূর্ণ ফল না পেয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে এসে সাইমনের সঙ্গে ডানিয়েলের বিষয়টি আলোচনা করে। আলোচনা শেষে তারা ডানিয়েলের দায়ভার নেওয়ার এবং নিজেদের সন্তানের মতো লালন পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা নিঃসন্তান বলেই সহজে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। (অসমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন