শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
পূর্ব প্রকাশিতের পর
এদিকে টমাস এই প্রথম ষাঁড়ের ঘাড়ে দুই মিনিট বসে ষাঁড়কে ক্লান্ত করে তখনকার সময় সর্বকালের সেরা রেকর্ড করেছে যা জেসিকার নজর কেড়েছে নিউইয়র্কের একটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে। টমাসের এমন একটি আনন্দঘন মুহূর্তে সে মিস করছে জেসিকাকে। টমাস হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ষাঁড়যুদ্ধ খেলা ছেড়ে দেবে। টমাস সাইমনের চিত্রাঙ্কনের গ্যালারিতে নতুন চাকরি নিয়েছে। চলছে জীবন তার নিজ নিজ গতিতে। কিছুদিন যেতে সাইমনের উকিল নোটিশ দিয়েছে সাইমনের সমস্ত সম্পত্তি নিলামে বিক্রি হবে, মৃত্যুর আগে সাইমনের লিখে রেখে যাওয়া উইলের ভিত্তিতে।
কী লেখা আছে এই গোপনীয় উইলে সাইমোনের উকিল ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। বহু লোকের আগমন হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে। নিলামে নামি-দামি চিত্রগুলো বিক্রি হবে চড়া দামা-দামির মাধ্যমে এমনটি আশা নিয়ে সবাই সেদিন বসে আছে। উকিল এসে প্রথমে সাইমনের যে ছবিটি বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দিলেন সেটা ছিল সাইমনের আঁকা সেই লেকের ধারে বসে গুনিলার পুরো দেহটার চিত্রাঙ্কন, যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ডলার। প্রসঙ্গত জেসিকা আর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বাভাবিকভাবে সেও সেদিন এসেছে সাইমনের আর্ট গ্যালারিতে, তবে সে জানে না সেখানে টমাস কাজ করে।
দামা-দামি হচ্ছে না, কেউই আগ্রহ দেখাচ্ছে না গুনিলার ছবিটির জন্য। শেষে দাম কমতে শুরু করে। কোনো এক পর্যায়ে মাত্র পাচঁশো ডলার ধার্য করা হয়, তারপরও কেউ গুনিলার ছবিটি কিনতে রাজি হচ্ছে না। জেসিকা জানে কী চমৎকার হৃদ্যতা ও স্মৃতি জড়িত এই পাথরে আঁকা ছবিটির মধ্যে। হঠাৎ পেছন থেকে একটি সুদর্শন যুবক হাত তুলেছে, নিলামে পাচঁশো ডলারের বিনিময়ে গুনিলার ছবিটি কেনার জন্য।
সবার নজর পেছনে, জেসিকা পেছনে মুখ ঘোরাতেই বিস্ময়ে হতবাক, আরে, এতো সেই টমাস যাকে সে একদিন ভালোবেসেছিল। হঠাৎ দেখে চমকে মুগ্ধ হয়ে থমকে যায় জেসিকা, টমাস কেন এখানে এবং কেনই বা গুনিলার ছবিটি কিনলো যেখানে অন্য কেউ কোনো আগ্রহ দেখালো না!
যাইহোক গুনিলার অঙ্কিত চিত্র টমাসের কাছে বিক্রি হয়ে গেল। পরবর্তী চিত্রাঙ্কনগুলো নিলামে দামা-দামির অপেক্ষায় সবাই, এমন সময় উকিল পনেরো মিনিট বিরতির ঘোষণা দিলেন। সবাই বসে আছে আর অপেক্ষা করছে পরবর্তী স্টেপের আশায়। এই ফাঁকে জেসিকা টমাসের সামনে এসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। টমাস জেসিকাকে দেখছে স্মৃতির জানালা খুলে।
কেমন আছ, জিজ্ঞেস করলো জেসিকা।- আমি ভালো আছি, তুমি?- হ্যাঁ আছি। - তুমি এখানে? তুমি তো কখনও চিত্রাঙ্কন পছন্দ করতে না। তা হুট করে গুনিলার ছবি কেন তুমি কিনলে?- তোমার কথা মনে করে।- আমার কথা মনে করে, মানে? - একদিন তুমি বলেছিল সাইমনের জীবনের ভালোবাসার কথা এবং গুনিলার সঙ্গে তার প্রথম দেখার স্মৃতি। - তোমার সে কথা মনে আছে? -হ্যাঁ।- তা কীভাবে জানলে যে আজ সাইমনের সবকিছু নিলামে বিক্রি হবে?- আমি এখানে কাজ করি।এ কথা শুনে জেসিকা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, - মানে? তোমার ষাঁড়যুদ্ধ?-সেটা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই।- ওহ!হঠাৎ বিরতির সময় শেষ হয়ে গেল। সবাই যার যার জায়গায় গিয়ে বসতেই উকিল সাইমনের লেখা উইলটি পড়তে শুরু করলেন, যে গুনিলার চিত্রাঙ্কন কিনবে সেই আমার সমস্ত আর্ট গ্যালারির দায়ভার এবং মালিকানা লাভ করবে। উকিলের উইলনামা পড়া শেষ হতেই সবাই হতভাগ! বলে কী? কীভাবে এটা সম্ভব?
নানা জনের নানা প্রশ্ন কিন্তু উত্তর নেই কোথাও। তাহলে কি টমাস সব জানতো? সে জানবে কী করে। সে আর্ট গ্যালারিতে চাকরি নিয়েছে সাইমনের মৃত্যুর পর। ডযধঃ ধ পড়রহপরফবহপব! জেসিকা নিঃশব্দে নীরবে তাকিয়ে আছে টমাসের দিকে। টমাস জেসিকাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বললো তোমাকে ঘিরে ভালোবাসার জাল বুনেছিলাম। কিন্তু তোমাকে হারিয়ে শুধু অনুভবে স্মৃতিটুকু নিয়ে তোমার পছন্দের জায়গা সাইমনের আর্ট গ্যালারিতে চাকরি নিয়েছি। কারণ একটিই, হয়তো কোনো একদিন তুমি এখানে আসবে।
সাইমনের জীবনের ভালোবাসা ছিল তার গুনিলাকে ঘিরে আর টমাসের জীবনের ভালোবাসা হলো জেসিকার জন্য গুনিলার চিত্রাঙ্কন কিনে। (সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।